ক্যান্সার হলে কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?

ক্যান্সার হলে কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?

আপনার ক্যান্সার থাকলে কিছু খাবার এবং পানীয় এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি ক্যান্সারের বৃদ্ধি বা চিকিত্সার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বাড়াতে পারে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য নিম্নলিখিত খাবারগুলি এড়ানো উচিত:

১. প্রক্রিয়াজাত মাংস:

প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন সসেজ, হট ডগ, বেকন, সালামি) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে কোলন বা রেকটাল ক্যান্সার।

এই ধরনের মাংসে নাইট্রাইট এবং নাইট্রেট নামক রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে কার্সিনোজেনিক যৌগ তৈরি করতে পারে।

২. লাল মাংস:

প্রচুর পরিমাণে লাল মাংস (যেমন গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস) খাওয়া কোলন, প্রোস্টেট এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

লাল মাংসের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করুন এবং বেশি করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান।

৩. অতিরিক্ত চিনি এবং মিষ্টি খাবার:

চিনি সমৃদ্ধ খাবার ইনসুলিন এবং ইনসুলিন বৃদ্ধির ফ্যাক্টর বাড়াতে পারে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

চকোলেট, কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি পানীয় ইত্যাদি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

৪. অতিরিক্ত তেল এবং চর্বি সমৃদ্ধ খাবার:

ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ইত্যাদিতে ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

এই ধরনের খাবার প্রদাহ বাড়ায় এবং ক্যান্সার চিকিৎসার কার্যকারিতা কমাতে পারে।

৫. অ্যালকোহল:

অ্যালকোহল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে মুখ, গলা, লিভার, স্তন এবং কোলনের ক্যান্সার।

চিকিত্সার সময় বা পরে অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে এড়ানো উচিত।

৬. প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষিত খাবার:

প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন টিনজাত খাবার, তাত্ক্ষণিক নুডুলস, প্যাকেটজাত খাবার ইত্যাদিতে প্রিজারভেটিভ থাকে, যা কার্সিনোজেনিক হতে পারে।

সংরক্ষিত খাবারে অনেক সময় উচ্চমাত্রার লবণ ও চিনি থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

৭. সোডা এবং মিষ্টি পানীয়:

কার্বনেটেড পানীয় এবং মিষ্টি পানীয়গুলি ক্যালোরির উচ্চ উত্স এবং এতে থাকা কৃত্রিম মিষ্টিগুলি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

এই পানীয়গুলি ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে।

৮. উচ্চ লবণযুক্ত খাবার:

উচ্চ লবণযুক্ত খাবার পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

লবণাক্ত খাবার, আচার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

৯. ভাজা বা উচ্চ তাপে রান্না করা খাবার:

গ্রিল করা, বারবিকিউ করা বা ভাজা খাবারে উচ্চ তাপ হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস (HCA) এবং পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (PAHs) নামক কার্সিনোজেনিক যৌগ তৈরি করতে পারে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

১০. ফল এবং শাকসবজি যাতে রাসায়নিক থাকে:

রাসায়নিক বা কীটনাশকযুক্ত ফল ও শাকসবজি এড়িয়ে চলতে হবে। এসব খাবারে থাকা কেমিক্যাল শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

জৈব খাবার বা ভালোভাবে ধুয়ে ফল ও শাকসবজি খাওয়া ভালো।

কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ:

ধূমপান এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্যান্সারের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পুষ্টি ও খাদ্য গ্রহণ করুন।

প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং ফল, শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন, যা শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে।

এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলা ক্যান্সার বৃদ্ধি রোধ করতে এবং চিকিত্সার সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।