থাইরয়েড বেশি হলে কি কি সমস্যা হয়?

থাইরয়েড বেশি হলে কি কি সমস্যা হয়?


অতিরিক্ত সক্রিয় থাইরয়েড (চিকিৎসাগতভাবে হাইপারথাইরয়েডিজম নামে পরিচিত) শরীরকে অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন (T3 এবং T4) উৎপাদন করতে বাধ্য করে। এটি বিপাককে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে।


অতিরিক্ত সক্রিয় থাইরয়েডের সমস্যাগুলি কী কী?

অতিরিক্ত সক্রিয় থাইরয়েডের (হাইপারথাইরয়েডিজম) লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

উদ্বেগ, খিটখিটে এবং নার্ভাস বোধ করা।

ঘুমের সমস্যা।

ওজন হ্রাস।

বর্ধিত থাইরয়েড গ্রন্থি বা গলগন্ড।

পেশী দুর্বলতা এবং কাঁপুনি।

স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া সত্ত্বেও ওজন হ্রাস

হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি (ধড়ফড়, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি)

প্রায়শই গরম অনুভূত হওয়া বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

উদ্বেগ বৃদ্ধি

হাত কাঁপানো 

ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রা

পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার প্রবণতা

মাসিক অনিয়ম (মহিলাদের ক্ষেত্রে) মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক হতে পারে অথবা আপনার মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

চোখ বড় হওয়া, চোখের ব্যথা বা ফোলাভাব (গ্রেভস ডিজিজ)

পেশী দুর্বলতা, বিশেষ করে উরু বা বাহুতে


দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

হৃদরোগ (অ্যারিথমিয়া, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন)

হাড়ের দুর্বলতা বা হাড়ের ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস)

বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভাবস্থায় সমস্যা

থাইরয়েড ঝড় (প্রাণঘাতী জটিলতা)


অতিরিক্ত থাইরয়েড থাকলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে:

অতিরিক্ত আয়োডিনযুক্ত খাবার (যেমন সামুদ্রিক খাবার, উচ্চ আয়োডিনযুক্ত লবণ) খাওয়া)

ক্যাফিন (অত্যধিক চা, কফি সমস্যা বাড়াতে পারে)

অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ফাস্ট ফুড


বাড়িতে কিছু সহায়ক টিপস:

পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম

ধ্যান/ব্যায়াম

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন

চাপ নিয়ন্ত্রণ


হাইপারথাইরয়েডিজমের জন্য একটি উপযুক্ত খাদ্য তালিকা এবং সাপ্তাহিক পরিকল্পনা

হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের অত্যধিক বৃদ্ধি) নিয়ন্ত্রণে খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীচে নিরামিষাশী/আমিষভোজী উভয়ের জন্যই উপযুক্ত একটি সপ্তাহব্যাপী খাদ্য পরিকল্পনা দেওয়া হল, যা থাইরয়েডের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।

যেসব খাবার উপকারী (Include):

ক্রুসিফেরাস সবজি: বাঁধাকপি, ব্রকলি, ফুলকপি

লো-আয়োডিন খাবার: ওটস, চাল, সবজি

হোল গ্রেইন, বাদাম (অতিরিক্ত নয়), বীজ

ফলমূল: আপেল, বেরি, পেঁপে

পর্যাপ্ত পানি

সবুজ শাকসবজি


যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন (Avoid):

আয়োডিন-সমৃদ্ধ খাবার: সামুদ্রিক মাছ, কেল্প, আয়োডিনযুক্ত লবণ

সোয়া এবং সয়া-জাত খাবার

ক্যাফেইন (চা-কফি সীমিত)

প্রক্রিয়াজাত ও ফাস্ট ফুড


৭ দিনের হাইপারথাইরয়েড-উপযোগী খাদ্য পরিকল্পনা

দিন-সকালের নাশতা

শনিবার: ওটস + চিয়া সিড + কলা

রবিবার: মুলা পরোটা + টক দই

সোমবার: মসুর ডাল সুপ + টোস্ট

মঙ্গলবার: সবজি উপমা

বুধবার: রাগি দোসা + নারকেল চাটনি

বৃহস্পতিবার: দুধ/দুধের বিকল্প + চিয়া পুডিং

শুক্রবার: ছোলা পরোটা + টক দই



দিন-দুপুরের খাবার

শনিবার: ব্রাউন রাইস + মিক্সড সবজি কারি + ডাল

রবিবার: ভেজিটেবল খিচুড়ি + সালাদ

সোমবার: চালভাত + মেথি/লাউ কারি + ডাল

মঙ্গলবার: সাদা চাল + পালং শাক + ডাল

বুধবার: মুগডাল খিচুড়ি + ঢেঁড়স ভাজি

বৃহস্পতিবার: রুটি + কুমড়ো ভাজি + ডাল

শুক্রবার: পেঁপে-মুগডাল খিচুড়ি + পালং শাক


দিন-বিকেলের স্ন্যাকস

শনিবার: সেদ্ধ ছোলা + শসা

রবিবার: আপেল ও বাদাম

সোমবার: হালকা মুড়ি + নারকেল

মঙ্গলবার: কলা ও অল্প বাদাম

বুধবার: পেঁপে বা বেদানা

বৃহস্পতিবার: গ্রিন টি (ক্যাফেইন ফ্রি) + বাদাম

শুক্রবার: তরমুজ বা কমলা


দিন- রাতের খাবার

শনিবার: ফুলকপি কারি + রুটি + টক দই

রবিবার: ব্রকলি কারি + লাল আটার রুটি

সোমবার: করলা ভাজি + পেঁপে ভাজি + রুটি

মঙ্গলবার: ফুলকপি ডিম ভুনা (যদি অমিষ চলবে) + রুটি

বুধবার: বাঁধাকপি ও বেগুন কারি + রুটি

বৃহস্পতিবার: সবজি সুপ + মাল্টিগ্রেইন রুটি

শুক্রবার: ঢেঁড়স ভাজি + ডিম/পনির (সীমিত আয়োডিন)



বিশেষ পরামর্শ:

লো-আয়োডিন লবণ ব্যবহার করুন।

সবজি ভালো করে ধুয়ে ও সেদ্ধ করে খান।

চা/কফি চাইলে দিনে ১ কাপ, ক্যাফেইন-ফ্রি হলে ভালো।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন।