কোন পাশ হয়ে ঘুমানো উচিত?

কোন পাশ হয়ে ঘুমানো উচিত?

সাধারণভাবে, বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে মনে করা হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ডান দিকে বা চিত হয়ে ঘুমানোও উপকারী হতে পারে। অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে বাম দিকে এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে ডান দিকে বা উপুড় হয়ে ঘুমানো ভালো। 

ঘুমানোর সময় “কোন পাশ হয়ে ঘুমানো উচিত” — এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা, অভ্যাস এবং বিশেষ প্রয়োজনের ওপর। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী বাম পাশ হয়ে ঘুমানো (left side sleeping) সাধারণত সবচেয়ে উপকারী।


ডান দিকে ঘুমানোর কিছু উপকারিতা: 

ডান কাত হয়ে ঘুমানোর কথা হাদিসে এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ডান কাতে ঘুমাতেন এবং এটি সুন্নাহসম্মত। 

হাদিসে এসেছে, "যখন তুমি তোমার শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করবে, তখন নামাযের ন্যায় ওজু করে ডান কাত হয়ে শয়ন করবে।" 

অন্য বর্ণনায় আছে, "রাসুলুল্লাহ (সা.) ডান হাত গালের নিচে রেখে ডান কাত হয়ে ঘুমাতেন।"


ডান কাত হয়ে ঘুমানোর কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো-

ডান কাত হয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যের জন্য বেশ কিছু উপকারিতা বয়ে আনে। এটি হজমে সাহায্য করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট) প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। 

হজমে সাহায্য করে: ডান দিকে ঘুমালে খাবার পাকস্থলী থেকে সহজে পরিপাকতন্ত্রে যেতে পারে, যা হজমে সাহায্য করে। 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডান দিকে ঘুমালে হৃদরোগের ঝুঁকি কিছুটা কমতে পারে। কিছু গবেষণা অনুসারে, বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে হৃদপিণ্ডের উপর চাপ পড়তে পারে, কিন্তু ডান দিকে ঘুমালে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে।

স্লিপ অ্যাপনিয়া প্রতিরোধ: ডান দিকে ঘুমালে স্লিপ অ্যাপনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কমে। 

পিঠের ব্যথা উপশম: ডান দিকে ঘুমালে পিঠের ব্যথা থেকেও আরাম পাওয়া যেতে পারে।  

সুন্নাহসম্মত অভ্যাস: ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমানো নবী করিম (সা.) এর সুন্নত। 

বুক জ্বালাপোড়া কম: বাম দিকে ঘুমালে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে প্রবেশ করতে পারে, যা বুক জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে। ডান দিকে ঘুমালে এই সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়। 

মানসিক শান্তি: ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমালে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। 


বাম দিকে ঘুমানোর কিছু উপকারিতা: 

অ্যাসিডিটি কমায়: বাম দিকে ঘুমালে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা কম হতে পারে।

শ্বাসকষ্ট কমায়: শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে বাম দিকে ঘুমালে শ্বাস-প্রশ্বাস সহজ হতে পারে। 

রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে: বাম দিকে ঘুমালে হৃদপিণ্ডের উপর চাপ কম পড়ে এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। 

হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো: বাম পাশ হয়ে ঘুমালে হৃদয় থেকে রক্ত সহজে নিচের অংশে পৌঁছাতে পারে। 

হজমে সহায়ক: পাকস্থলীর গঠন এমন যে বাম পাশে থাকলে খাদ্য সহজে হজম হয়। অ্যাসিড রিফ্লাক্স (পেটে গ্যাস/টক ঢেকুর) কম হয়। 

গর্ভবতীদের জন্য সবচেয়ে ভালো: গর্ভের শিশুর রক্তসঞ্চালন ভালো থাকে, জরায়ু যকৃতের ওপর চাপ দেয় না, গর্ভবতীদের জন্য “বাম পাশ” সুপারিশ করা হয়।

মস্তিষ্কের বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশনে সহায়তা: বাম পাশে ঘুমালে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম ভালোভাবে কাজ করে। আলঝেইমার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।


উপুড় হয়ে ঘুমানোর কিছু উপকারিতা: 

নাক ডাকার সমস্যা কমায়: যারা নাক ডাকেন তাদের জন্য উপুড় হয়ে ঘুমানো ভালো হতে পারে।

সাইনাসের সমস্যা কমায়: সাইনাসের সমস্যায় উপুড় হয়ে ঘুমালে আরাম পাওয়া যায়। 


পাশ হয়ে ঘুমানোর উপকারিতা:

পাশ ফিরে ঘুমানোর বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এটি হৃদরোগ, স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির জন্য উপকারী হতে পারে। ডান দিকে ফিরে ঘুমালে হার্ট ফেইলিওরের রোগীদের জন্য ভালো, কারণ এটি হৃদপিণ্ডের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি শ্বাস-প্রশ্বাসকে সহজ করে এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। 

পাশ ফিরে ঘুমানোর কিছু উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো:

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: যারা ডান দিকে ফিরে ঘুমান, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে। কারণ, ডান দিকে ফিরলে হৃদপিণ্ডের উপর চাপ কম পড়ে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। 

স্লিপ অ্যাপনিয়া প্রতিরোধ করে: স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীদের জন্য পাশ ফিরে ঘুমানো একটি ভালো উপায়। এটি শ্বাস-প্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে পারে। 

অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমায়: যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের জন্য ডান দিকে ফিরে ঘুমানো ভালো। কারণ, এটি খাদ্যনালীতে অ্যাসিডের প্রবাহ কমাতে সাহায্য করে। 

মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পাশ ফিরে ঘুমালে মেরুদণ্ডের উপর চাপ কম পড়ে এবং এটি মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক গঠন বজায় রাখতে সহায়তা করে। 

গভীর ঘুম: পাশ ফিরে ঘুমালে সাধারণত গভীর ঘুম হয়, যা শরীর ও মনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। 

গর্ভাবস্থায় উপকারী: গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে শেষ পর্যায়ে, বাম দিকে ফিরে ঘুমানো ভালো। এটি জরায়ু এবং ভ্রূণের উপর চাপ কমায়। 

পাশ ফিরে ঘুমানোর সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাদের ঘাড় বা পিঠে ব্যথা আছে, তাদের জন্য সঠিক বালিশ ব্যবহার করা জরুরি, যাতে মাথা ও ঘাড় সঠিক অবস্থানে থাকে। এছাড়াও, যাদের স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা আছে, তাদের অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমানোর ভঙ্গি ঠিক করা উচিত। 


কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:

মেরুদণ্ড সোজা রাখা: যে পাশেই ঘুমানো হোক না কেন, মেরুদণ্ড সোজা রাখা জরুরি। 

বালিশ ব্যবহার: বালিশ ব্যবহার করে ঘুমালে মেরুদণ্ড সোজা রাখতে সুবিধা হয়। 

ব্যথা থাকলে: যে পাশে ব্যথা আছে, সেই পাশে ফিরে না ঘুমানোই ভালো। 

সবশেষে, আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা ও আরাম অনুযায়ী ঘুমানোর ভঙ্গি বেছে নিন। 


তাহলে কোন পাশ সেরা?

অবস্থানকাদের জন্য উপকারী

বাম পাশসবার জন্য, বিশেষত গর্ভবতী, গ্যাস্ট্রিক, হজমে সমস্যা যাদের

ডান পাশনির্দিষ্ট হার্ট বা ফুসফুস সমস্যায় কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনে

উল্টেএড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষ করে যারা নাক ডাকে

বাম পাশ হয়ে ঘুমানো অধিকাংশ মানুষের জন্য সবচেয়ে ভালো, বিশেষ করে হজম, হৃদযন্ত্র, ও গর্ভাবস্থায়।


ডান পাশ হয়ে ঘুমানোর কিছু সমস্যা:

অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা পেট জ্বালাপোড়া বাড়তে পারে

যকৃতের ওপর বেশি চাপ পড়ে

কিছু গবেষণায় বলা হয়, হার্ট ফেলিউরের রোগীরা ডান পাশে ঘুমালে রক্তপ্রবাহে সমস্যা হতে পারে


বাম পাশ হয়ে ঘুমানোর কিছু সমস্যা:

বাম কাত হয়ে ঘুমানোর কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা রয়েছে, যদিও এটি সাধারণভাবে একটি নিরাপদ ভঙ্গি হিসাবে বিবেচিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে, বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কারণ এই ভঙ্গিতে হৃদপিণ্ড বুকের বাম দিকে থাকায় এটি ফুসফুসের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে আসার সম্ভবনা থাকে, যা অম্বল বা অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে। 

বাম কাত হয়ে ঘুমানোর কিছু সম্ভাব্য অপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো: 

হৃদরোগীদের জন্য সমস্যা:

বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে হৃদরোগীদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে, কারণ হৃদপিণ্ড বুকের বাম দিকে থাকায় এটি ফুসফুসের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করে। 

অম্বল বা অ্যাসিডিটি:

বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরের দিকে আসার সম্ভবনা থাকে, যা অম্বল বা অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে। 

পেটে ব্যথা:

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমালে পেটে ব্যথা হতে পারে। 

ঘুমের মান খারাপ হওয়া:

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমান তাদের ঘুমের মান ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমানোর চেয়ে কিছুটা খারাপ হতে পারে। 

তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমানো কিছু মানুষের জন্য একটি আরামদায়ক ভঙ্গি হতে পারে। যদি আপনি বাম দিকে কাত হয়ে ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের উপর এর কোনো খারাপ প্রভাব পড়বে কিনা তা একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। 


পিঠ বা উল্টে (উপর হয়ে) ঘুমানোর সমস্যা:

শ্বাসকষ্ট বা ঘুমের মধ্যে শ্বাস আটকে যাওয়ার (Sleep Apnea) আশঙ্কা বাড়ে

নাক ডাকার সম্ভাবনা বাড়ে

গর্ভবতীদের জন্য খুব বিপজ্জনক হতে পারে