স্কোলিওসিস: লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ এবং জটিলতাগুলি কী কী?

স্কোলিওসিস: লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ এবং জটিলতাগুলি কী কী?


স্কোলিওসিস (Scoliosis) হলো মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিক বক্রতা, যা "S" বা "C" আকৃতির বাঁক তৈরি করে। এটি প্রধানত শিশু এবং কিশোর বয়সে শনাক্ত করা হয়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও দেখা যেতে পারে। এর লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ এবং সম্ভাব্য জটিলতাগুলি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলো:


লক্ষণসমূহ (Symptoms of Scoliosis):

স্কোলিওসিসের লক্ষণগুলো মৃদু থেকে গুরুতর হতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।


মেরুদণ্ডের বাঁক লক্ষ করা যায়:

পিঠের মাঝখানে বা নিচের দিকে বাঁকা মেরুদণ্ড।

মেরুদণ্ড বাঁকালে একপাশ উঁচু বা অসম মনে হয়।


অঙ্গবিন্যাসের অসামঞ্জস্যতা:

এক কাঁধ বা কোমর অন্য পাশের তুলনায় বেশি উঁচু।

বুক বা শরীরের একপাশ বেশি বাইরে বের হয়ে থাকে।


পিঠে বা কোমরে ব্যথা:

বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে।


শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা:

গুরুতর ক্ষেত্রে ফুসফুসের জায়গা সংকুচিত হতে পারে।


পোশাক ঠিকমতো না বসা:

বিশেষ করে স্কার্ট বা প্যান্টের একপাশ ওপরে উঠা।


ঝুঁকির কারণসমূহ (Risk Factors):


বয়স:

সাধারণত ১০-১৫ বছর বয়সে স্কোলিওসিস বেশি ধরা পড়ে।


লিঙ্গ:

মেয়েদের ক্ষেত্রে স্কোলিওসিস উন্নতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।


পারিবারিক ইতিহাস:

পরিবারের কারও মধ্যে স্কোলিওসিস থাকলে ঝুঁকি বেশি।


অন্যান্য শারীরিক অবস্থা:

সেরিব্রাল পালসি (Cerebral Palsy) বা মাংসপেশির দুর্বলতা সম্পর্কিত রোগ (যেমন মস্কুলার ডিসট্রফি)।

স্কোলিওসিসের কারণ (Causes of Scoliosis):

ইডিওপ্যাথিক স্কোলিওসিস (Idiopathic Scoliosis):

৮০% ক্ষেত্রে সঠিক কারণ জানা যায় না।


জেনেটিক কারণ:

কিছু জিন স্কোলিওসিসের সাথে যুক্ত থাকতে পারে।


জন্মগত স্কোলিওসিস:

মেরুদণ্ডের বিকাশজনিত ত্রুটির কারণে।


স্নায়বিক কারণ:

সেরিব্রাল পালসি বা পোলিওর মতো শারীরিক সমস্যার কারণে।


বয়সজনিত পরিবর্তন:

বয়সের সাথে মেরুদণ্ডের ডিস্ক ক্ষয়জনিত কারণে।


জটিলতাগুলি (Complications):


শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা:

গুরুতর বাঁকের কারণে ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্র সংকুচিত হতে পারে।


ব্যথা:

দীর্ঘস্থায়ী পিঠ বা কোমরের ব্যথা।


চেহারা বা অঙ্গবিন্যাসের পরিবর্তন:

কাঁধ, পাঁজর বা কোমরের স্থায়ী অসামঞ্জস্যতা।

শরীরের বাইরের অবয়বের কারণে মানসিক চাপ।


অস্থি এবং গাঁটের ক্ষতি:

স্কোলিওসিস অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


স্নায়ুর সমস্যা:

মেরুদণ্ডের বাঁক স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করলে পায়ের দুর্বলতা বা ঝিনঝিনে অনুভূতি।


স্কোলিওসিসের চিকিৎসা (Treatment Options):


পর্যবেক্ষণ:

মৃদু স্কোলিওসিসের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং মেরুদণ্ডের বাঁক পরীক্ষা।


ব্রেস পরিধান:

কিশোর বয়সে বাঁক বাড়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে।


শারীরিক থেরাপি:

পিঠের পেশি শক্তিশালী করতে ব্যায়াম।


সার্জারি:

গুরুতর ক্ষেত্রে স্পাইনাল ফিউশন অপারেশন করা হয়।


ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ:

পেইনকিলার বা ইনজেকশন।


উপসংহার:

স্কোলিওসিস মৃদু হলে বিশেষ সমস্যা নাও হতে পারে। তবে, এটি সময়ের সঙ্গে গুরুতর হলে শারীরিক অস্বস্তি এবং দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।