হাদিস কী?
হাদিস হল ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী, কর্ম ও মৌন সম্মতি (approval)। এটিকে ইসলামের দ্বিতীয় উৎস হিসেবে ধরা হয়, যেখানে কোরআনের পর এটি মুসলিমদের জন্য পথপ্রদর্শক।
হাদিস (الحديث) শব্দের অর্থ “বক্তব্য”, “কথা” বা “বর্ণনা”। ইসলামি পরিভাষায়, হাদিস হলো নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উক্তি, কাজ, নীরব সম্মতি বা চরিত্রগত গুণাবলির বর্ণনা, যা সাহাবিরা শুনে, দেখে বা বুঝে অন্যদের কাছে বর্ণনা করেছেন।
হাদিস
হাদিসের উপাদান দুটি:
সানাদ (সনদ):
— যাঁরা একের পর এক হাদিসটি বর্ণনা করেছেন (রাবিদের শৃঙ্খল)।
মাতন (মূল বক্তব্য):
— রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী বা কাজের আসল বক্তব্য।
হাদিসের গুরুত্ব:
কুরআনের পর হাদিসই ইসলামের দ্বিতীয় উৎস।
নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদির বিস্তারিত নিয়ম হাদিস থেকেই জানা যায়।
কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে হাদিস অপরিহার্য।
হাদিস মুখস্থ রাখা ও পড়ার ফজিলত:
রাসুল (সা.) বলেন:
"যে ব্যক্তি আমার একটি হাদিস শোনে, তা মুখস্থ করে এবং অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়—আল্লাহ তার মুখ উজ্জ্বল করুন।"
— (তিরমিজি)
ধৈর্য
ধৈর্য (صبر – সবর) ইসলামে একটি মহান গুণ ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক আচরণ। কুরআন ও হাদীস উভয়ই ধৈর্যবানদের প্রতি প্রশংসা ও পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ধৈর্য সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
১.
إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।"
— সূরা বাকারা (২:১৫৩)
২.
وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
"আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।"
— সূরা বাকারা (২:১৫৫)
৩.
إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ
"ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান অগণিতভাবে দেওয়া হবে।"
— সূরা যুমার (৩৯:১০)
ধৈর্য সম্পর্কে হাদিস
১.
“ধৈর্য হল আলো।”
— সহীহ মুসলিম
২.
“মুমিন ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক! তার সব কিছুই কল্যাণকর। কেবল মুমিনের ক্ষেত্রেই তা হয়: কষ্টে ধৈর্য ধরলে এতে তার জন্য পুরস্কার রয়েছে, আর সুখে শোকর করলে তাও তার জন্য উত্তম।”
— (সহীহ মুসলিম)
ধৈর্যের প্রকারভেদ
ইবাদতে ধৈর্য – নামাজ, রোজা, হজে কষ্ট হলেও অবিচল থাকা
গুনাহ থেকে ধৈর্য – লোভ, হিংসা, যিনা, চুরি ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রাখা
বিপদে ধৈর্য – রোগ, দুঃখ, মৃত্যু, ক্ষতি ইত্যাদিতে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্যধারণ
ধৈর্যশীলদের গুণাবলি
আত্মনিয়ন্ত্রণ
ক্ষোভ দমন
তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর নির্ভরতা)
ক্ষমাশীলতা
ইতিবাচক চিন্তাভাবনা
নামাজ
নামাজ (সালাত) ইসলামের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মুসলমানদের জন্য প্রতিদিন পাঁচবার ফরজ করা হয়েছে এবং কিয়ামতের দিন প্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজ থেকেই।
নামাজের সংজ্ঞা:
নামাজ হলো:
"শরীয়ত নির্ধারিত নিয়মে, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট কথাবার্তা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে ইবাদত করা।"
ইসলামে নামাজের গুরুত্ব
কুরআন থেকে:
إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ
“নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।”
— (সূরা আনকাবুত ২৯:৪৫)
হাদিস থেকে:
“নামাজ কুফর ও ঈমানের মাঝে পার্থক্যকারী।”
— (সহীহ মুসলিম)
“কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।”
— (তিরমিজি)
প্রতিদিনের ফরজ নামাজসমূহ
ফজর
যোহর
আসর
মাগরিব
এশা
নামাজ পড়ার সংক্ষিপ্ত নিয়ম
ওযু করে পবিত্র হয়ে নেওয়া
কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো ও নিয়ত
তাকবির দিয়ে হাত বেঁধে শুরু করা
সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ
রুকু, সেজদা, কিয়াম, কাউমা যথাযথভাবে আদায়
তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া পাঠ
ডানে-বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ
নামাজের উপকারিতা
গুনাহ মাফ হয়
আত্মা পরিশুদ্ধ হয়
বিপদে রক্ষা পাওয়া যায়
জান্নাতের রাস্তা প্রশস্ত হয়
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়
নামাজ না পড়লে?
রাসুল (সা.) বলেন:
“নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরের শামিল।”
— (সহীহ মুসলিম)
মা-বাবা
মা-বাবা ইসলামে সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্কের একটি। কুরআন ও হাদীসে অসংখ্যবার মা-বাবার প্রতি আদব, ভালবাসা, খেদমত ও আনুগত্যের নির্দেশনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা নিজ ইবাদতের সাথে সাথে মা-বাবার সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছেন।
কুরআনে মা-বাবার গুরুত্ব
১.
وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
“তোমার প্রভু আদেশ দিয়েছেন—তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করো।”
— (সূরা বনি ইসরাইল, ১৭:২৩)
২.
فَلَا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ
“তাদের প্রতি উফ্ শব্দটিও উচ্চারণ করো না।”
— (সূরা বনি ইসরাইল, ১৭:২৩)
হাদীসে মা-বাবার ফজিলত
১.
“মা-বাবা সন্তুষ্ট হলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর তারা অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।”
— (তিরমিজি)
২.
“তোমার জান্নাত হলো তোমার মা।”
— (সহীহ বুখারী)
৩.
এক সাহাবি জিহাদের অনুমতি চাইলে রাসুল (সা.) বললেন:
“তোমার মা-বাবার খেদমত করো—এটাই তোমার জিহাদ।”
— (সহীহ বুখারী)
মা-বাবার প্রতি সন্তানের করণীয়
ভদ্রভাবে কথা বলা
তাদের সামনে গলা না চড়া করা
দোয়া করা:
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
“হে আমার প্রভু! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা শৈশবে আমার প্রতি দয়া করেছেন।”
জীবিত থাকলে যত্ন ও খেদমত করা
মৃত্যুর পরও তাদের জন্য ইসালে সাওয়াব, দোয়া, সাদাকা ইত্যাদি করা
অসন্তুষ্টির পরিণাম
মা-বাবাকে কষ্ট দেওয়া মহাপাপ
জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া
দুনিয়াতেই অভিশপ্ত জীবন
চরিত্র
চরিত্র (اخلاق – আখলাক) ইসলামে একটি মৌলিক গুণ, যা একজন মুমিনের পরিচয় বহন করে। একজন মুসলমানের ইমানের পর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার উত্তম চরিত্রে।
চরিত্র সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
কুরআনের বর্ণনা:
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ
“নিশ্চয়ই আপনি (হে রাসুল!) মহান চরিত্রের অধিকারী।”
— (সূরা আল-কলম, ৬৮:৪)
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
“নিশ্চয়ই সব মুমিন ভাই ভাই।”
— (সূরা হুজরাত, ৪৯:১০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“আমি উত্তম চরিত্র সম্পূর্ণ করতে প্রেরিত হয়েছি।”
— (মুসনাদ আহমদ)
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।”
— (বুখারি ও মুসলিম)
“কেয়ামতের দিন মিজানে (তুলায়) সবচেয়ে ভারী হবে ভালো চরিত্র।”
— (তিরমিজি)
উত্তম চরিত্রের কিছু নিদর্শন
কথা ও কাজে সত্যবাদিতা
অহংকার না করা
অন্যের ভুল মাফ করা
গরিব, অসহায়দের সাহায্য
বিপদে ধৈর্যধারণ
রাগ নিয়ন্ত্রণ করা
দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা
খারাপ চরিত্রের কিছু লক্ষণ
মিথ্যাচার
প্রতারণা
গীবত ও চোগলখোরি
রাগান্বিত ব্যবহার
অহংকার
হিংসা
চরিত্র গঠনের উপায়
নামাজ ও তাওবা করা
সৎ লোকদের সঙ্গ
রাসুল (সা.)-এর জীবনী অধ্যয়ন
গুনাহ থেকে দূরে থাকা
দুঃস্থদের সহযোগিতা
নিয়মিত আত্মসমালোচনা করা
আরও বিস্তারিতভাবে, হাদিস মূলত:
নবীজির কথা (কাউলি হাদিস)
নবীজির কাজ (ফেলি হাদিস)
নবীজির সামনে করা কোনো কাজের অনুমোদন বা নীরবতা (তাকরীরি হাদিস)
সংক্ষেপে, হাদিস হল নবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ, যা মুসলিমদের জন্য অনুসরণীয়।
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2025 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.