ঘাড় ব্যথার কারণ কী?

ঘাড় ব্যথার কারণ

ঘাড় ব্যথা সাধারণত পেশীতে টান, খারাপ ভঙ্গি, আঘাত বা স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে হতে পারে। ঘাড় ব্যথার প্রধান কারণগুলি নীচে ব্যাখ্যা করা হল—


১. খারাপ ভঙ্গি

খারাপ ভঙ্গিতে বসে থাকা এবং হাঁটা (খারাপ ভঙ্গি)

দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার, মোবাইল বা টিভি দেখার ফলে ঘাড়ের উপর চাপ পড়ে।

একপাশে কাত হয়ে বসে থাকা বা কাঁধ কুঁচকে রেখে হাঁটার ফলে ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে।

বিছানা বা টেবিলে মাথা রেখে ঘুমানো বা উঁচু বালিশ ব্যবহার করাও ব্যথার কারণ হতে পারে।

ফলাফল: ঘাড়ের পেশী শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হয়।


২. পেশীতে টান বা টান

ভারী ব্যাগ বা ওজন বহন করলে ঘাড়ের পেশীতে চাপ পড়ে।

অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের ফলে পেশীতে টান হতে পারে।

ফলাফল: ব্যথার সাথে সাথে ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে।


৩. জরায়ুর স্পন্ডিলোসিস

ঘাড়ে বয়সজনিত হাড় এবং ডিস্কের অবক্ষয় ব্যথার কারণ হয়।

মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহার হাড়ের অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করতে পারে।

ফলাফল: ব্যথার সাথে মাথা ঘোরা, ঝাপসা দৃষ্টি, বা হাত ও পায়ে অসাড়তা দেখা দিতে পারে।


৪. জরায়ুর ডিস্ক হার্নিয়েশন

যখন ঘাড়ের কশেরুকার মধ্যবর্তী নরম ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে।

ফলস্বরূপ, ব্যথা ঘাড় থেকে কাঁধ, বাহু এবং আঙ্গুলে ছড়িয়ে পড়ে।

ফলাফল: ঝিঁঝিঁ পোকার অনুভূতি, হাতের শক্তি হ্রাস।


৫. আঘাত বা হুইপল্যাশ

গাড়ি দুর্ঘটনায় বা হঠাৎ পড়ে গেলে ঘাড় আহত হলে ব্যথা হতে পারে।

ঘাড় হঠাৎ পিছনে বা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লে পেশী এবং লিগামেন্টের সমস্যা দেখা দেয় (হুইপল্যাশ ইনজুরি)।

ফলাফল: ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, বা মাথা ঘোরা।


৬. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপে থাকলে ঘাড় ও কাঁধের পেশী শক্ত হয়ে যায়।

স্ট্রেস হরমোন (কর্টিসল) বেড়ে গেলে রক্ত ​​সঞ্চালন কমে যায়, ফলে ব্যথা হয়।

ফলাফল: ঘাড় ভারী হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা।


৭. মেনিনজাইটিস - গুরুতর কারণ

ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে মস্তিষ্কের পর্দা শক্ত হয়ে গেলে ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।

এটি জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হতে পারে।

গুরুতর লক্ষণ:

উচ্চ জ্বর

ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া

মাথাব্যথা এবং বমি

জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন!


৮. হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ

কিছু ক্ষেত্রে, হার্ট অ্যাটাকের আগেও ঘাড় বা কাঁধে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

বাম বাহু, বুক এবং ঘাড়ে একসাথে ব্যথা থাকলে বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন।


গুরুতর লক্ষণ:

বুকে ব্যথা এবং চাপ

শ্বাসকষ্ট

প্রচণ্ড ঘাম বা বমি বমি ভাব

জরুরি চিকিৎসা পরামর্শ নিন!


৯. অস্টিওআর্থারাইটিস

এটি একটি জয়েন্ট বা বাতজনিত সমস্যা যা ঘাড়ের জয়েন্টের তরুণাস্থি ক্ষয় করে।

বয়সের সাথে সাথে এর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

ফলাফল: ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, ব্যথা বৃদ্ধি।


কখন আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা উচিত?

যদি ব্যথা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা দিনে দিনে বাড়তে থাকে।

বাহু ও পায়ে অসাড়তা বা শক্তি হ্রাস।

মাথা ঘোরা, ঝাপসা দৃষ্টি বা কথা বলতে অসুবিধা।

ঘাড় ব্যথার সাথে জ্বর, বমি বা অতিরিক্ত ক্লান্তি থাকে।


উপসংহার

ঘাড় ব্যথার সাধারণ কারণ হল দুর্বল ভঙ্গি, পেশীতে টান বা চাপ। তবে, যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বাহু ও পা অসাড় থাকে, তাহলে এটি একটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অতএব, প্রয়োজনে আপনার চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়া উচিত।