অহংকার নিয়ে কোরআনের আয়াত ও হাদিস

অহংকার নিয়ে কোরআনের আয়াত ও হাদিস

অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধি, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। কোরআন ও হাদিসে অহংকার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। 

(মুসলিম: ৯১) দুনিয়াতে অহংকারের পরিণতি হলো লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। যার অন্তরে যতটুকু অহংকার সৃষ্টি হবে, তার জ্ঞান ততটুকু হ্রাস পাবে। যদি কারও অন্তরে অহংকার স্থিতি লাভ করে, তবে তার জ্ঞানচক্ষু অন্ধ হয়ে যায়, বোধশক্তি লোপ পায়; সে অন্যের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে।


অহংকার বা দাম্ভিকতা একটি নিন্দনীয় গুণ এবং ইসলামে এর কঠোর বিরোধিতা করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে অহংকার পরিহার করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। 

কোরআনে অহংকার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে: 

কুরআনে অহংকার সম্পর্কিত আয়াত: 

সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৩৯: "আর তোমরা হতাশ হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না, যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই জয়ী হবে।" এই আয়াতে মুমিনদের হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে বলা হয়েছে। অহংকার মানুষকে হতাশ করে এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে দেয় না। 

সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৪৬: "আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী থেকে ফিরিয়ে রাখব, যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে গর্ব করে বেড়ায়।" এই আয়াতে বলা হয়েছে, যারা পৃথিবীতে অহংকার করে, আল্লাহ তাদের সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেন। 

সূরা আন-নাহল, আয়াত: ২৩: "স্পষ্ট কথা, তারা যা গোপনে করে আল্লাহ তা জানেন এবং যা প্রকাশ্যে করে তাও। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না।" এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না, কারণ তারা যা করে তার সবই আল্লাহ জানেন। 

সূরা লুকমানের ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা অহংকার করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং বিনয়ী হতে বলেছেন।

সূরা আল-আরাফের ১৩ নম্বর আয়াতে, ইবলিশকে অহংকারের কারণে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে।

কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তাআলা বিনয়ী ও নম্র হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং অহংকারীদের জন্য কঠিন শাস্তির হুশিয়ারি দিয়েছেন।


হাদীসে অহংকার সম্পর্কিত বর্ণনা: 

সহীহ মুসলিমের হাদিস অনুযায়ী, "অহংকার হলো সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।" 

অন্য একটি হাদিসে আছে, "যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।" 

আবু দাউদ শরীফের হাদিসে এসেছে, "আল্লাহ তাআলা বলেন, অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার পোশাক। যে এই দুটির একটি নিয়ে আমার সাথে টানাটানি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।" 

অহংকার মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। তাই, অহংকার পরিহার করে বিনয়ী হওয়া উচিত। 

হাদিসে কুদসীতে এসেছে, "গর্ব ও অহংকার আমার গুণ। যে এই গুণে আমার অংশীদার হতে চায়, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।"

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যার অন্তরে অণু পরিমাণও অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।"

অন্য এক হাদিসে এসেছে, "আল্লাহ তাআলা অহংকারীদের পছন্দ করেন না।"

মোটকথা, ইসলামে অহংকার একটি গুরুতর পাপ এবং এর কারণে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতেই শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। তাই, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সর্বদা বিনয়ী ও নম্র থাকার চেষ্টা করা উচিত। 


অহংকার (অহঙ্কার, গর্ব, تكبّر) সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিস

অহংকার ইসলাম ধর্মে একটি মারাত্মক গুনাহ হিসেবে বিবেচিত। এটি মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। নিচে কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি দেওয়া হলো:


কোরআনের আয়াতসমূহ

সূরা লুকমান – আয়াত ১৮

وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ


উচ্চারণ:

“Wala tusair khaddaka linnasi wala tamshi fil-ardi maraha, innallaha la yuhibbu kulla mukhtalin fakhoor”


অর্থ:

“মানুষের সামনে তুমি গাল ফুলিয়ে (অহংকারভরে) কথা বলো না এবং পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারকারী গর্বিতজনকে পছন্দ করেন না।”

(সূরা লুকমান, ৩১:১৮)


সূরা আল-আরাফ – আয়াত ১৪৬

سَأَصْرِفُ عَنْ آيَاتِيَ ٱلَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ...


অর্থ:

“আমি আমার আয়াতসমূহ থেকে তাদেরকে দূরে রাখব, যারা অহংকারের সাথে অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে চলে।”

(সূরা আল-আরাফ, ৭:১৪৬)


সূরা আন-নাহল – আয়াত ২৩

إِنَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسْتَكْبِرِينَ


অর্থ:

“নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অহংকারীকে পছন্দ করেন না।”

(সূরা আন-নাহল, ১৬:২৩)


হাদীসসমূহ

সহীহ মুসলিম – হাদীস ৯১

قال رسول الله ﷺ:


«لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ»


অর্থ:

“যার হৃদয়ে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”

(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৯১)


তিরমিযী – হাদীস ১৯৯৯

رسول الله ﷺ قال:


«الكِبْرُ: بَطَرُ الحَقِّ، وَغَمْطُ النَّاسِ»


অর্থ:

“অহংকার হচ্ছে — সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।”

(তিরমিযী, হাদীস: ১৯৯৯)


সংক্ষিপ্ত উপদেশ:

অহংকার ইবলিসকে ধ্বংস করেছিল।

মানুষ যত বড়ই হোক, আল্লাহর কাছে সে একজন বান্দা মাত্র।

অহংকার করলে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হতে হয়।



অহংকার পরিহারের উপায় ও দোয়া

অহংকার পরিহারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং বিনয়ী হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, নিজের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করা এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। অহংকার ত্যাগের জন্য কিছু দোয়া ও আমল নিচে দেওয়া হলো: 

দোয়া:

"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররিনাফসি ওয়া মিন শাররিশ শাইত্বানি ওয়া শিরকিহি।" (হে আল্লাহ, আমি আমার নফসের অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা ও তার শিরক থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)

"রাব্বিগফিরলি ওয়াতুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আনতাবুর রাহিম।" (হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি পরম দয়ালু।) 

আমল:

নিজেকে সবসময় আল্লাহর বান্দা হিসেবে মনে করা এবং তাঁর দেওয়া নেয়ামতের জন্য শোকর গুজার হওয়া।

অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করা।

বিনয়ী ও নম্র হওয়া এবং সবসময় সত্য কথা বলা।

আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা, যাতে তিনি অহংকার থেকে হেফাজত করেন। 

অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধি, যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। তাই, এর থেকে বাঁচতে হলে সবসময় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং নিজেকে বিনয়ী ও নম্র রাখার চেষ্টা করতে হবে। 


অহংকার ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি বৈশিষ্ট্য, যা মানুষের ঈমান ও নেক আমলের বড় প্রতিবন্ধক। তাই এটা থেকে মুক্ত থাকতে হলে আত্মশুদ্ধি ও বিনয় অর্জন করা জরুরি।


অহংকার পরিহারের উপায়সমূহ

আত্ম-জ্ঞান অর্জন করা

নিজেকে সৃষ্টির ক্ষুদ্রতম একাংশ হিসেবে দেখা।

ভাবা: আমি ধুলোর মতো, আল্লাহ ছাড়া আমি কিছুই না।


আল্লাহর গুণাবলি ও মাহাত্ম্য স্মরণ করা

তিনি সব কিছুর স্রষ্টা, আমি তাঁর বান্দা মাত্র।

কৃতিত্ব যা কিছু, সবই আল্লাহর অনুগ্রহ।


নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা

প্রশংসা পেলে অহংকার না করে আল্লাহর শোকর আদায় করা।

দোষ করলে নিজের ভুল স্বীকার করা।


গরিব, সাধারণ ও নিচু পেশার মানুষদের সঙ্গে মিলেমিশে চলা

মনে রাখা, তারা আল্লাহর কাছে হয়তো আপনার চেয়ে উত্তম।


বিনয়ী লোকদের সাহচর্য গ্রহণ করা

যাঁরা দুনিয়ার আস্ফালন ছাড়াই চলেন, তাঁদের অনুসরণ করা।


অহংকার থেকে বাঁচার জন্য দোয়া

১. দোয়া:

اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ المُتَوَاضِعِينَ، وَنَجِّنِي مِنَ الكِبْرِ

“আল্লাহুম্মাজ্ আল্নী মিনাল মুতাওয়াদিইন, ওয়া নাজ্জিনী মিনাল কিবর।”


অর্থ:

“হে আল্লাহ! আমাকে বিনয়ীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং অহংকার থেকে আমাকে রক্ষা করুন।”


২. রাসূল ﷺ-এর দোয়া:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي

(তিরমিযী, হাদীস: ৩৫৮৬)


অর্থ:

“হে আল্লাহ! আমি নিজের নফসের (প্রবৃত্তির) শার থেকে আপনার আশ্রয় চাই।”


৩. কুরআন থেকে একটি দোয়া:

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا

(সূরা আলে ইমরান, ৩:৮)


অর্থ:

“হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের হেদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরকে টালমাটাল করে দিয়ো না।”


উপসংহার:

❝ অহংকারের চিকিৎসা হলো বিনয়। ❞

যত বেশি আল্লাহর কাছে নিজেকে ছোট ভাববে, তত বেশি মর্যাদা পাবে ইনশাআল্লাহ।