কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) দূর করার ঘরোয়া উপায় কী?

কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) দূর করার ঘরোয়া উপায় কী?


কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) একটি খুব সাধারণ সমস্যা, যা পেটে অস্বস্তি, গ্যাস, মলত্যাগে কষ্ট এবং দেহে ভারী ভাব সৃষ্টি করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া। এছাড়াও, কিছু ভেষজ প্রতিকার যেমন ইসাবগুলের খোসা, ত্রিফলা, বা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে।


কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য এখানে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার দেওয়া হল:


পর্যাপ্ত পানি পান করুন:

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং মল নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

পানির অভাবে মল শক্ত ও শুকনো হয়ে যায়।

দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।

সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানি খেলে মলত্যাগ সহজ হয়।


আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খান:

আপনার খাদ্যতালিকায় ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্যের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। ফাইবার মলত্যাগে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

আঁশ (ফাইবার) পেট পরিষ্কার রাখতে খুব কার্যকর।

যা খাবেন:

শাকসবজি (লাল শাক, পুঁই শাক, পালং শাক)

ফল (পেয়ারা, কলা, পেঁপে, আপেল, কিশমিশ)

দানাদার খাবার (ওটস, ছোলা, কালাই ডাল, ব্রাউন রাইস)


নিয়মিত ব্যায়াম করুন:

নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ সঠিক হজম বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।


পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:

পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে।


ইসাবগুলের খোসা:

ইসাবগুলের খোসা পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।


অ্যালোভেরা জেল:

অ্যালোভেরা জেল হজম উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।


কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন:

ফাস্ট ফুড, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে, তাই এগুলি এড়িয়ে চলাই ভালো।


মানসিক চাপ কমানো:

মানসিক চাপ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে, তাই মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা যোগব্যায়াম চেষ্টা করুন।


নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস:

প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগ করার অভ্যাস করুন।


প্রাকৃতিক প্রতিকার:

ত্রিফলা, শুকনো ডুমুর বা কিশমিশের মতো কিছু ভেষজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক হতে পারে।


প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ খাবার খান

তেঁতুল বা ইসবগুল ভুষি: ১ চামচ ভুষি + গরম পানি বা দুধে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন।

অ্যালোভেরা জেল (খাবার উপযোগী): সকালে সামান্য পরিমাণ খেতে পারেন।

তিলের তেল বা জলপাই তেল: ১ চা চামচ খালি পেটে খেলে কার্যকর।


শারীরিক পরিশ্রম বা হাঁটা

প্রতিদিন অন্তত ২০–৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।

নিয়মিত চলাফেরা অন্ত্রের গতি বাড়ায়।


যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম

পবনমুক্ত আসন, ভুজঙ্গাসন, বজ্রাসন ইত্যাদি কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী।

কপালভাতি প্রণায়াম এবং আনুলোম-বিলোম করলে হজমশক্তি বাড়ে।


সঠিক সময়ে মলত্যাগ করুন

কখনো মলত্যাগের সময় দেরি করবেন না।

প্রতিদিন সকালে একই সময় টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস গড়ুন (এতে স্বাভাবিক রিফ্লেক্স তৈরি হয়)।


যা এড়িয়ে চলবেন:

বেশি চা/কফি, সফট ড্রিংক

চিজ, মাংস, প্রসেসড ফুড

অতিরিক্ত শীতল বা শুকনো খাবার

রাতে দেরি করে খাওয়া


কখন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন?

৩ দিনের বেশি সময় মলত্যাগ না হলে

পেটে তীব্র ব্যথা, বমি বমি ভাব

রক্তপাত বা খুব শক্ত মল

যদি কোষ্ঠকাঠিন্য তীব্র হয় বা ঘরোয়া প্রতিকার দিয়েও উন্নতি না হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।