জিংক এর অভাবজনিত রোগ-Zinc deficiency disease

জিংক এর অভাবজনিত রোগ

জিংক (Zinc) শরীরের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজে ভূমিকা পালন করে। এটি প্রোটিন সংশ্লেষণ, কোষ বিভাজন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। জিঙ্কের ঘাটতি হলে শরীরে নানা সমস্যা হতে পারে। জিঙ্কের অভাব চুল পড়া, চুল ভেঙে যাওয়া বা চুল পাতলা হতে পারে। নখে সাদা দাগ দেখা দিতে পারে। ঘন ঘন সর্দি এবং জ্বর: জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, তাই জিঙ্কের ঘাটতি শরীরে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়, যার ফলে ক্রমাগত সর্দি এবং কাশি হয়।

নিচে জিঙ্কের অভাবের সাথে সম্পর্কিত কিছু রোগ এবং সমস্যা রয়েছে:

১. দুর্বল ইমিউন সিস্টেম

জিঙ্কের অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সহজেই সর্দি, কাশি এবং অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগ ধরতে পারে।

২. বিলম্বিত ক্ষত নিরাময়

ক্ষত নিরাময়ের জন্য জিঙ্ক অপরিহার্য। এর অনুপস্থিতিতে, ক্ষতগুলি নিরাময়ে বেশি সময় নেয়।

৩. ত্বকের সমস্যা

জিঙ্কের অভাবের কারণে ত্বকের শুষ্কতা, ফুসকুড়ি, একজিমা বা ডার্মাটাইটিস হতে পারে।

ব্রণের সমস্যাও বাড়তে পারে।

৪. অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ

শিশুদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে।

উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ওজন কমানোর সমস্যা হতে পারে।

৫. ক্ষুধা হ্রাস এবং স্বাদ পরিবর্তন

জিঙ্কের ঘাটতি ক্ষুধা হ্রাস এবং স্বাদ এবং গন্ধ বোধের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৬. ডায়রিয়া

দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া জিঙ্কের অভাবের একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি শিশুদের মধ্যে বিশেষ করে বিপজ্জনক।

৭. গর্ভাবস্থায় জটিলতা

গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি ভ্রূণের বিকাশের সমস্যা, সময়ের আগে জন্ম এবং কম ওজনের ঝুঁকি বাড়ায়।

৮. চুল পড়া বা টাক পড়া

জিঙ্কের অভাবে চুল পড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদী অভাব চুল পাতলা বা টাক হতে পারে।

৯. স্মৃতিশক্তি এবং জ্ঞানীয় সমস্যা

জিঙ্কের ঘাটতি মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করে। স্মৃতিশক্তি এবং একাগ্রতা বিঘ্নিত হতে পারে। এটি শিশুদের শেখার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

১০. হাড়ের দুর্বলতা

হাড়ের গঠন ও শক্তি বজায় রাখতে জিঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ। এর অভাব হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

১১. হাইপোগোনাডিজম

পুরুষদের মধ্যে, জিঙ্কের ঘাটতি টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমাতে পারে, যা যৌন স্বাস্থ্য এবং উর্বরতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


জিঙ্কের ঘাটতি রোধ করার উপায়

জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করতে আপনি নিম্নলিখিত খাবার খেতে পারেন:

সামুদ্রিক খাবার (বিশেষ করে ঝিনুক)

লাল মাংস (গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস)

পোল্ট্রি (মুরগির মাংস)

সিরিয়াল (চাল, গম)

বাদাম (কাজু, আখরোট)

বীজ (কুমড়োর বীজ, শণের বীজ)

দুগ্ধজাত পণ্য (দুধ, দই, পনির)

জিঙ্কের ঘাটতির লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।