প্রোটিনের অভাবে কোন রোগ হয়?

প্রোটিনের অভাবে কোন রোগ হয়

প্রোটিনের অভাব শরীরের জন্য গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি শরীরের কোষ, পেশী, হরমোন, এনজাইম এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে। প্রোটিনের অভাব বিভিন্ন রোগ এবং শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে।

প্রোটিনের অভাবের কারণে সৃষ্ট রোগ এবং সমস্যা:

১. ক্বাসিওরকর (Kwashiorkor):

এটি শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যাপ্ত প্রোটিন পান না।

লক্ষণ:

শরীর ফোলা (Edema), বিশেষ করে হাত-পা ও মুখ।

পেশির ক্ষয়।

লালচে-বাদামী চুল।

ত্বকের সমস্যা ও ক্ষত।

২. ম্যারাসমাস (Marasmus):

এটি প্রোটিন এবং ক্যালোরি উভয়ের দীর্ঘমেয়াদী অভাবের কারণে হয়।

লক্ষণ:

শরীর অত্যন্ত শীর্ণ হয়ে যাওয়া।

পেশি ও চর্বির সম্পূর্ণ ক্ষয়।

শক্তির অভাব এবং দুর্বলতা।

৩. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতা:

প্রোটিনের অভাব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে।

এটি সংক্রমণ বা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

৪. পেশী দুর্বলতা এবং ক্ষয়:

যদি আপনি পর্যাপ্ত প্রোটিন না পান, তাহলে আপনার পেশী গঠন দুর্বল হয়ে পড়বে।

দীর্ঘমেয়াদে পেশী ক্ষয় দেখা দেয় (Muscle Wasting)।

৫. চুল পড়া (Hair Loss):

চুলের গঠনে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এর অভাব চুল পড়া, চুল পাতলা হওয়া এবং নতুন চুলের বৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে।

৬. বিলম্বিত ক্ষত নিরাময়:

প্রোটিনের অভাব শরীরের ক্ষত নিরাময়কে ধীর করে দেয়।

এনজাইম এবং কোলাজেনের অভাব নতুন টিস্যু গঠনকে কঠিন করে তোলে।

৭. ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব:

প্রোটিনের অভাবের কারণে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারে না।

এর ফলে ক্রমাগত ক্লান্তি এবং অক্ষমতা দেখা দেয়।

৮. শারীরিক বৃদ্ধি স্থবির:

শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রোটিনের অভাব স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে।

এটি উচ্চতা, ওজন এবং বুদ্ধিমত্তাকে প্রভাবিত করে।

৯. লিভারের সমস্যা:

দীর্ঘমেয়াদী প্রোটিনের অভাব লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে।

এর ফলে ফ্যাটি লিভার এবং লিভারের ক্ষতি হতে পারে।

১০. হাড়ের দুর্বলতা:

প্রোটিনের অভাব হাড়কে দুর্বল করে এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়।


প্রোটিনের ঘাটতি রোধে করণীয়:

প্রতিদিন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে ভুলবেন না, যেমন মসুর ডাল, ছোলা, মাছ, ডিম, মাংস, দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য।

শাকসবজি, বাদাম এবং শস্য থেকেও প্রোটিন পাওয়া যায়।

শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য সুষম খাদ্যের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন।

প্রোটিনের ঘাটতি এড়াতে সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘমেয়াদী প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।