বাতের (Rheumatoid Arthritis) রোগ কেন হয়?

বাতের রোগ কেন হয়?


বাতের রোগ বলতে আমরা সাধারণত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis) বুঝি, তবে অনেকেই সব ধরণের জয়েন্টের ব্যথাকেই "বাত" বলে থাকেন। বাতের রোগ (আর্থ্রাইটিস) সাধারণত শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (ইমিউন সিস্টেম) ভুলভাবে নিজের অঙ্গের ওপর আক্রমণের ফলে হয়, যা একটি অটোইমিউন রোগ। এর ফলে জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ব্যথা, ফোলাভাব ও আড়ষ্ঠতা দেখা দেয়, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য ধরনের অটোইমিউন রোগের কারণে হতে পারে। 

চলুন মূল কারণগুলো দেখি:


বাতের (Rheumatoid Arthritis) রোগ কেন হয়?


অটোইমিউন রোগ

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো কিছু বাতরোগে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুল করে নিজের শরীরের টিস্যু, বিশেষ করে জয়েন্টগুলোর ওপর আক্রমণ করে। 

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে নিজের জয়েন্টের টিস্যু (Synovium) আক্রমণ করে।

এতে জয়েন্টে প্রদাহ হয়, ব্যথা, ফোলা, শক্ত হয়ে যাওয়া শুরু হয়।


জেনেটিক কারণ

কিছু বাতরোগের ক্ষেত্রে বংশগত কারণও থাকতে পারে, যদিও এটি অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার একটি অংশ। 

পরিবারে এ ধরনের রোগ থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।

কিছু জিন (যেমন HLA-DR4) এই রোগে ভূমিকা রাখে।


প্রদাহ

এই আক্রমণের ফলে জয়েন্টে প্রদাহ হয়, যা ব্যথা, ফোলা এবং আড়ষ্ঠতা সৃষ্টি করে। 


জয়েন্টের ক্ষতি

সময়ের সাথে সাথে এই প্রদাহ জয়েন্টের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। 


অন্যান্য কারণ:

সংক্রমণ

কিছু ক্ষেত্রে, ঐতিহাসিকভাবে সংক্রমণজনিত কারণেও বাতরোগ হতে পারে, যা জয়েন্টে ব্যথা বা অন্যান্য লক্ষণ সৃষ্টি করে। 


হাড়ের ক্ষয়

অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো কিছু বাতরোগ হাড়ের ক্ষয়জনিত কারণেও হতে পারে। 


পরিবেশগত কারণ

ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ শরীরের ইমিউন সিস্টেমে পরিবর্তন ঘটিয়ে বাতের সূচনা করতে পারে।


লাইফস্টাইল ও ঝুঁকি ফ্যাক্টর

ধূমপান বাতের ঝুঁকি অনেক বাড়ায়।

অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাবও প্রভাব ফেলতে পারে।


হরমোনাল প্রভাব

মহিলাদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে সন্তান জন্মদানের পর বা মেনোপজে হরমোন পরিবর্তনের কারণে।


অস্টিওআর্থ্রাইটিস (বয়সজনিত বাত)

এটি আরেক ধরনের বাত, যা প্রধানত হাড় ও জয়েন্ট ক্ষয়ে হয়:

বয়স বাড়লে জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয়ে যায়।

অতিরিক্ত ওজনের কারণে হাঁটু বা কোমরের জয়েন্টে চাপ পড়ে।

পুরোনো ইনজুরি বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমও কারণ হতে পারে।


সংক্ষেপে:

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস = অটোইমিউন কারণে।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস = বয়স ও জয়েন্ট ক্ষয়ের কারণে।


গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

"বাত" একটিমাত্র রোগ নয়, বরং প্রায় ১০০টি ভিন্ন ভিন্ন রোগের সমষ্টিকে বোঝায়, যেখানে জয়েন্ট, হাড় বা অন্যান্য যোজক কলা আক্রান্ত হয়।

এর চিকিৎসা ও প্রতিকারের জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে এটি স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। 


রস বাত: রস বাত বলতে সাধারণত আর্থ্রাইটিস বা বাতরোগকে বোঝানো হয়, যা একটি জয়েন্টের প্রদাহজনিত রোগ। এই রোগের ফলে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ফোলাভাব, লালচে ভাব এবং আড়ষ্টতা দেখা যায়। এটি একটি একক রোগ নয়, বরং ১০০টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বাতরোগের সমষ্টি, যা জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধি আক্রান্ত করার পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গকেও প্রভাবিত করতে পারে। 


আর্থ্রাইটিসের প্রধান লক্ষণগুলো: 

ব্যথা: আক্রান্ত জয়েন্টগুলোতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

ফোলাভাব: জয়েন্টগুলো ফুলে যেতে পারে।

লালচে ভাব ও উষ্ণতা: আক্রান্ত অংশে লালচে ভাব এবং উষ্ণতা দেখা দিতে পারে।

আড়ষ্টতা: বিশেষ করে সকালে বা দীর্ঘক্ষণ বিশ্রামের পর জয়েন্টগুলোতে আড়ষ্টতা দেখা যায়।

গতির পরিধি কমে যাওয়া: জয়েন্টের নড়াচড়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে।


কিছু সাধারণ বাতরোগ:

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস: একটি অটোইমিউন রোগ যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের জয়েন্টগুলোকেই আক্রমণ করে। 

অস্টিওআর্থ্রাইটিস: এটি জয়েন্টের তরুণাস্থির ক্ষয়জনিত রোগ, যা জয়েন্টগুলোতে ব্যথা ও কোমলতার সৃষ্টি করে। 


কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

যদি বাতরোগের লক্ষণ যেমন ব্যথা, ফোলাভাব বা আড়ষ্টতা দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে না এবং জয়েন্ট স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পায়।