বাতের রোগীর খাবার

বাতের রোগীর খাবার

বাতের রোগীর (বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস) জন্য খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক খাবার প্রদাহ (inflammation) কমায়, ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং জয়েন্ট সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

বাতের ব্যথা কমাতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু নির্দিষ্ট খাবার পরিহার করা জরুরি, যেমন - প্রক্রিয়াজাত মাংস, রেড মিট, চিনিযুক্ত খাবার, গম, বার্লির দানা এবং অ্যালকোহল। এছাড়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহরোধী) উপাদান সমৃদ্ধ খাবার যেমন – ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ, ফল, সবুজ শাকসবজি, বাদাম এবং অলিভ অয়েল গ্রহণ করা যেতে পারে, যা প্রদাহ কমাতে ও বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 


যেসব খাবার বাতের ব্যথা বাড়াতে পারে: 

প্রক্রিয়াজাত মাংস ও রেড মিট:

এগুলো প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং বাতের ব্যথা বাড়ায়।

চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার:

অতিরিক্ত চিনি এবং পরিশোধিত শস্য যেমন গম, বার্লি ইত্যাদি প্রদাহের কারণ হতে পারে।

অ্যালকোহল:

অ্যালকোহল সেবন বাতের ব্যথা ও প্রদাহকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।


যেসব খাবার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে: 

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:

তৈলাক্ত মাছ (যেমন - স্যামন, ম্যাকেরেল) ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর, যা শরীরের প্রদাহ কমায় এবং বাতের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

ফল ও সবজি:

বিভিন্ন ফল (যেমন - বেরি, সাইট্রাস) ও সবুজ শাকসবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন থাকে যা প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। 

বাদাম ও বীজ:

কাঠবাদাম, আখরোট এবং ফ্ল্যাক্সসিডে ওমেগা-৩ ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে যা প্রদাহ কমাতে পারে। 

অলিভ অয়েল:

অলিভ অয়েল প্রদাহ-রোধী উপাদান সমৃদ্ধ, যা বাতের রোগীদের জন্য উপকারী। 

হলুদ ও আদা:

হলুদে থাকা কারকিউমিন ও আদার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। 

করণীয়: প্রদাহ সৃষ্টিকারী খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন, সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, প্রয়োজনে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। 


বাতের রোগীর জন্য উপকারী খাবার

শাকসবজি ও ফল

পালং শাক, কলমি শাক, লাল শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি

গাজর, টমেটো, শসা

কমলা, আঙুর, পেয়ারা, পেঁপে, লেবু (ভিটামিন সি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে)


প্রোটিন

মাছ (বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন, টুনা – ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ)

ডাল, ছোলা, মসুর

ডিম (পরিমাণমতো)


স্বাস্থ্যকর ফ্যাট

আখরোট, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম

অলিভ অয়েল, সরিষার তেল (পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত)

তিলবীজ, সূর্যমুখীর বীজ, ফ্ল্যাক্সসিড


শস্যজাত খাবার

লাল চাল, ওটস, গমের রুটি

আঁশযুক্ত খাবার (ফাইবার হজম ভালো রাখে ও প্রদাহ কমায়)


অন্যান্য

গ্রীন টি / হার্বাল টি (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ)

হলুদ (কারকিউমিন প্রদাহ কমায়)


বাতের রোগীর জন্য ক্ষতিকর খাবার

অতিরিক্ত লাল মাংস (গরু/খাসি – প্রদাহ বাড়াতে পারে)

অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার (ভাজা-পোড়া, ফাস্ট ফুড)

প্রক্রিয়াজাত খাবার (চিপস, বিস্কুট, প্যাকেটজাত নুডলস)

চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার

অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম বেশি হলে প্রদাহ বাড়তে পারে)

অতিরিক্ত দুধজাত খাবার (কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ব্যথা বাড়াতে পারে)

অ্যালকোহল ও ধূমপান সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত


কিছু টিপস

দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার (ওজন বেশি হলে জয়েন্টে চাপ পড়ে)।

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম (হাঁটা, যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং) খাবারের সাথে সমন্বয় করে করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।