earthquake: ভূমিকম্প হলে যা করবেন এবং যা করবেন না

ভূমিকম্পের সময় কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়

ভূমিকম্প হলে সঠিক পদক্ষেপ জানা খুব জরুরি। নিচে যা করবেন এবং যা করবেন না—দু’টি তালিকাই সহজভাবে দেওয়া হলো:


ভূমিকম্প হলে যা করবেন

ঘরের ভেতরে থাকলে

Drop–Cover–Hold অনুসরণ করুন:

Drop: মাটিতে নেমে বসুন

Cover: টেবিল/ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন

Hold: টেবিল বা আশ্রয় শক্ত করে ধরুন

জানালা, কাঁচ, আলমারি, ফ্যান, লাইট—যা ভেঙে পড়তে পারে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন।

দরজা বা নিচে দৌড়াবেন না—বেশিরভাগ ইনজুরি দৌড়াতে গিয়ে হয়।

যদি আশ্রয়ের কিছু না থাকে—দেয়ালের পাশে কোণে বসে মাথা ঢেকে রাখুন।

গ্যাসের চুলা, আগুন বা বিদ্যুৎ সুইচ স্পর্শ করবেন না।

মাথা রক্ষা করতে ব্যাগ, বালিশ বা হাত ব্যবহার করুন।


বাড়ির বাইরে থাকলে

খোলা জায়গায় যান—গাছ, ভবন, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাড়ি থেকে দূরে থাকুন।

মাটি ফেটে যেতে পারে—তাই স্থির হয়ে দাঁড়ান ও নিচু জায়গায় যাবেন না।


গাড়িতে থাকলে

রাস্তার পাশে নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামান।

সেতু, ওভারপাস, বিলবোর্ড ও উঁচু ভবন থেকে দূরে রাখুন।

গাড়ির ভেতর থাকুন—কাচের কাছ থেকে সরুন।

ভূমিকম্প বন্ধ হওয়ার পরে

গ্যাস লিক, অগ্নিকাণ্ড, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট আছে কিনা দেখুন।

লিফট ব্যবহার করবেন না—সিঁড়ি ব্যবহার করুন।

মূল রাস্তায় না গিয়ে নিরাপদ পথ দিয়ে বের হন।

আফটারশক আসতে পারে—সতর্ক থাকুন।

আহতকে সাহায্য করুন, তবে গুরুতর আহতকে নাড়িয়ে সরাবেন না (স্পাইনাল ইনজুরি হতে পারে)।

অফিসিয়াল নির্দেশনা না পেলে বাড়িতে ফিরে যাবেন না।


ভূমিকম্প হলে যা করবেন না

দৌড়াবেন না—এতে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

লিফটে উঠবেন না—বিদ্যুৎ চলে গেলে আটকে যেতে পারেন।

জানালার কাছে যাবেন না—কাঁচ ভেঙে মারাত্মক আঘাত লাগতে পারে।

ভারী জিনিস টানতে বা নামাতে যাবেন না—মাথায় পড়তে পারে।

ফোনে কথা বলা, লাইভ করা বা ভিডিও বানানো—কখনোই করবেন না।

গ্যাসের চুলা বা আগুন জ্বালাবেন না—লিক থাকলে বিস্ফোরণ হতে পারে।

বাচ্চাদের ফেলে দৌড়াবেন না—তাদের সাথে নিয়ে বা তাদের ঢেকে রাখুন।

ঘরের ভেতর থাকলে দরজার খোলা জায়গায় (door frame) দাঁড়াবেন না—এটা নিরাপদ জায়গা নয়।



ভূমিকম্প না ভূমি কম্পন (land subsidence)” — বা জমি ধস — একটা সমস্যা এবং পারে আরও বিপদ বাড়তে পারে। নিচে কারণ, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:


ভূমি কম্পনের কারণ (কেন হচ্ছে)

১. ভূগর্ভজল অতিরিক্ত উত্তোলন

ঢাকার মতো শহরগুলোতে অনেকেই গ্রাউন্ডওয়াটার ব্যবহার করে (গভীর টিউবওয়েল), যা পানির স্তর নিচে নামায়। 

এক গবেষণা দেখায়, এই পানির উত্তোলন মাটির অবকাঠামোর ঘনত্ব কমিয়ে দেয়, এবং মাটি ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয় (soil compaction), যার ফলে জমি নিচু হয়ে যায়। 

আর মাটির উপরের ওজন (ভবন, কংক্রিট স্থাপন) বেশি হলে, এবং গ্রাউন্ডওয়াটার কম থাকলে, মাটির উপর চাপ বেড়ে যায়, যা কম্পনকে আরও ত্বরান্বিত করে। 


২. ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক কারণ

বাংলাদেশ বেশিরভাগই ডেলটা এলাকা (ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, মেঘনা মিশ্র ডেলটা), এবং এসব এলাকায় মাটির পলুয়াল (কাদা) স্তর থাকে যা সহজেই সঙ্কুচিত হতে পারে। 

কিছু ভূতাত্ত্বিক বা প্লেট গতির কারণগুলোও ভূমি গতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।


৩. ভেজা জমি ও জলাভাঙা কম হওয়া

অনেক জলাভাগ বা ওয়েটল্যান্ড কমে গেছে, যা প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভজলে রিচার্জ করার একটি পথ ছিল।

শহরায়ন হলে কংক্রিট বা পাকা সড়ক বেশি হয়, যা বৃষ্টির পানি জমি মধ্যে প্রবেশ করতে দেয় না। ফলে মাটির পাকে পানি কমে এবং কম্পন বাড়তে পারে।


৪. সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি (sea level rise)

জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির কারণে “আসল” ভূপৃষ্ঠ ও “আপেক্ষিক” ভূমি উচ্চতার ভারসাম্য গড়ে ওঠে না। অর্থাৎ, ভূমি ধস + সমুদ্রপৃষ্ঠ উভয়ই বাড়লে ঝুঁকি কমে না, বরং বৃদ্ধি পায়।

আরও একটি দিক হলো, বাঁধ (embankment) তৈরি হলে নদী বা স্রোতের মাধ্যমে বালু-পলু জমা হওয়া কমে যায়, ফলে মাটিতে নতুন সিডিমেন্ট কম আসে এবং ধস নিয়ন্ত্রণ হয় না। 


বর্তমান অবস্থা

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় ভূমি কম্পন কিছু জায়গায় ৬–১২ মিমি/বছর বা বেশি হতে পারে। 

ভূমি কম্পনের ফলে ভবন, অবকাঠামো (সড়ক, ব্রিজ ইত্যাদি) এবং পানিবদ্ধতা (flooding) ঝুঁকি বাড়ছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ভূমি কম্পন এইভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে শহরগুলোর জন্য মজবুত পরিকল্পনা ও স্থায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজন।


ভবিষ্যতে কি অবস্থা হতে পারে?

ভূমিকম্প বা জমি ধস ভবিষ্যতে আরও গুরুতর হতে পারে, যদি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়:

বাড়তি ভোজনতার ঝুঁকি

যদি গ্রাউন্ডওয়াটার অতিরিক্ত উত্তোলন চলতে থাকে, জমি ধসের গতি আরও বাড়তে পারে।

এটা ভবন স্থায়িত্বকে প্রভাবিত করতে পারে — differential subsidence (ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ধস) ভবনকে বিকৃত করতে পারে।


বন্যার ঝুঁকি বাড়বে

জমি নিচু হয়ে গেলে বন্যি পানি জমতে এবং পাশাপাশি ঢেকে রাখতে পারে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি + ভূমি ধস একসাথে হলে বিশেষ করে নদী কিটি ও উপকূলীয় এলাকায় প্লাবনের ঝুঁকি বাড়ে।


সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

বসবাসযোগ্য জমি কমে যেতে পারে, বিশেষ করে নিম্নভূমি ও শহরাঞ্চলে।

অবকাঠামোর ক্ষতি বাড়তে পারে — বাড়ি, সড়ক, সেতু ইত্যাদির মেইনটেন্যান্স খরচ বাড়তে পারে।

অভিবাসন বা স্থানান্তর বাড়তে পারে (লোকজন প্লাবনের কারণে নিরাপদ জায়গায় যেতে পারে)।


পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ

মাটির গুণগত মান খারাপ হতে পারে (সঙ্কুচিত মাটি, কম জল ধারণ ক্ষমতা)

নদীর সেডিমেন্ট ব্যালেন্স বিঘ্নিত হতে পারে (যদি বালু ও পলু সঠিকভাবে জমা না হয়)।


কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে (সম্ভাব্য সমাধান)

গ্রাউন্ডওয়াটার ব্যবস্থাপনা: উত্তোলন সীমিত করা, রিচার্জ পয়েন্ট তৈরি করা (রেইনওয়াটার রিচার্জ, ওয়েটল্যান্ড সংরক্ষণ)

স্থানীয় পরিকল্পনা: নতুন ভবন বা অবকাঠামো তৈরি করার সময় ভূমি কম্পন বিবেচনায় নেয়া উচিত — ডিজাইন, ভিত্তি (foundation) মজবুত করা।

সেটেলমেন্ট ব্যবস্থাপনা: নদীর সেডিমেন্ট প্রবাহ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপন করা, যাতে প্রয়োজনমতো বালু ও মাটি জমা হয়।

মনিটরিং: স্যাটেলাইট (InSAR) বা গ্রাউন্ড-জিপিএস ব্যবহার করে কম্পনের গতিপ্রকৃতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।

নীতি ও আইন: নিয়ম করা যেতে পারে গ্রাউন্ডওয়াটার উত্তোলনকে, এবং পলিসি তৈরি করা যেতে পারে যে নতুন ডেভেলপমেন্টগুলো ভূমি ধস ঝুঁকি অনুযায়ী পরিকল্পিত হবে।

সারাংশে বলতে গেলে, হ্যাঁ, বাংলাদেশে ভূমি কম্পন এখন প্রায় নিশ্চিতভাবে ঘটছে এবং ভবিষ্যতে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তার প্রভাব আরও ভয়ানক হতে পারে — বিশেষ করে শহরগুলোতে এবং নিম্নভূমি এলাকায়।