gibot ki-গীবত কি ? গিবত সম্পর্কে কোরআন কী বলে?

গীবত কি? (পরনিন্দা বা পরচর্চা)

গীবত (غيبة) আরবি শব্দ, যার অর্থ "অন্যের অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা"—যা সে অপছন্দ করে। সহজ ভাষায় গীবত হলো কাউকে পিছনে আলোচনা করা, যা সে শুনলে কষ্ট পাবে।

গিবত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো- পরনিন্দা করা, দোষচর্চা করা, কুৎসা রটনা, পেছনে সমালোচনা করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষগুলো অন্যের সামনে তুলে ধরা। কারও মধ্যে যদি সত্যিকারার্থেই কোনো দোষ-ত্রুটি থাকে, আর সেটা নিয়ে আলোচনা করা যদি তিনি অপছন্দ করেন, তাহলে সেই সত্যি কথাটা অপরকে বলে দেয়ার নামই হলো গিবত বা পরনিন্দা।


রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"তুমি কি জানো, গীবত কী?"

সাহাবিরা বললেন, "আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।"

তখন রাসুল (সা.) বললেন,

"গীবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু বলা, যা সে অপছন্দ করে।"

(সহিহ মুসলিম: ২৫৮৯)

সাহাবিরা বললেন:

"যদি আমার বলা কথা সত্য হয়?"

রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন:

"যদি সত্য হয়, তবে সেটাই গীবত, আর যদি মিথ্যা হয়, তবে তা অপবাদ (বুহতান)!"

অর্থাৎ, গীবত সত্য হলেও হারাম এবং মিথ্যা হলে তা আরও ভয়ানক গুনাহ!


কুরআনে গীবত সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

গীবত শয়তানের কাজ এবং হারাম

আল্লাহ বলেন:

"তোমাদের কেউ কি চাইবে যে, সে তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাবে? নিশ্চয়ই তোমরা এটি ঘৃণা করো!"

(সূরা হুজুরাত ৪৯:১২)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়:

গীবত করা মানে মৃত ব্যক্তির মাংস খাওয়ার মতো জঘন্য পাপ।

এটি এতটাই ঘৃণিত যে, আল্লাহ এটিকে শয়তানের কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।


গীবতকারীদের কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি

আল্লাহ বলেন:

"দুর্ভোগ সেই ব্যক্তির, যে সামনে ভালো কথা বলে, কিন্তু পেছনে গীবত করে!"

(সূরা হামযাহ ১০৪:১)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়:

যারা সামনাসামনি ভালো আচরণ করে, কিন্তু পিছনে পরনিন্দা করে, তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।


গীবতকারীকে কঠিন আজাব দেওয়া হবে

রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বপ্নে দেখেছেন যে, একদল মানুষকে লোহার নখ দিয়ে মুখ ছেঁড়া হচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "এরা কারা?"

ফেরেশতারা বললেন:

"এরা সেই লোক, যারা দুনিয়াতে গীবত করত ও মানুষের সম্মান নষ্ট করত।"

(সুনান আবু দাউদ: ৪৮৭৮)


এই হাদিস থেকে বোঝা যায়:

গীবতকারীদের জন্য কবরের কঠিন শাস্তি নির্ধারিত আছে।

তারা অসহ্য কষ্টের সম্মুখীন হবে।


কেন গীবত করা হয় এবং কীভাবে বাঁচা যায়?

গীবতের কারণ:

হিংসা ও বিদ্বেষ

অহংকার ও আত্মপ্রশংসা

হাসি-তামাশা ও মজা করার জন্য

অন্যের দোষ খোঁজা


কীভাবে গীবত থেকে বাঁচা যায়?

আল্লাহর ভয় রাখা – গীবতের শাস্তি সম্পর্কে চিন্তা করুন।

নিজের দোষ আগে দেখুন – আমরা সবাই ভুল করি, তাই অন্যের ভুল বলা ঠিক নয়।

বিনয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন – অহংকার ছাড়লে গীবত কমে যাবে।

দোয়া করুন ও তওবা করুন – গীবত করে ফেললে দ্রুত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।


গীবতের পরিবর্তে কী করা উচিত?

যদি কোনো ব্যক্তির ভুল হয়, তাহলে তাকে সরাসরি নসিহত করুন।

কাউকে গীবত করতে দেখলে তাকে থামানোর চেষ্টা করুন।

কোনো আলোচনা গীবতে পরিণত হলে, প্রসঙ্গ পরিবর্তন করুন।

রাসুল (সা.) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি অন্যের ইজ্জত রক্ষা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার ইজ্জত রক্ষা করবেন।"

(তিরমিজি: ২০০৭)


উপসংহার

গীবত ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ হারাম।

গীবত করা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার মতো জঘন্য কাজ।

গীবতের শাস্তি ভয়ানক – কবর ও আখিরাতে কঠিন আজাব দেওয়া হবে।

গীবত এড়িয়ে চলতে হলে নিজের ভুল দেখা, আল্লাহর ভয় রাখা ও ভালো চরিত্র গঠন করা দরকার।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে গীবত থেকে রক্ষা করুন এবং ভালো আমল করার তৌফিক দিন, আমিন।