রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত
রোজা সম্পর্কে কুরআনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আয়াত রয়েছে, বিশেষ করে সূরা আল-বাকারাতে রোজার বিধান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কিছু প্রধান আয়াত তুলে ধরা হলো—
১️⃣ রোজার ফরজ হওয়ার বিধান
আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।"
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)
এই আয়াত থেকে শিক্ষা:
রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য নয়, বরং পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতের ওপরও ফরজ ছিল।
রোজার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন।
২️⃣ রমজান মাস ও কুরআন নাজিলের সম্পর্ক
আল্লাহ বলেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
"রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য পথনির্দেশক ও হেদায়াত এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এতে রোজা রাখে।"
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
এই আয়াত থেকে শিক্ষা:
রমজান মাসের গুরুত্ব: এ মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে।
রমজানের ফরজ রোজার বিধান: যারা এ মাস পাবে, তারা অবশ্যই রোজা রাখবে।
রোজার মাধ্যমে মানুষ সঠিক পথ ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারে।
৩️⃣ অসুস্থ ও মুসাফিরদের জন্য ছাড়
আল্লাহ বলেন:
وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
"আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে সে রোজার সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান এবং কঠিন করতে চান না।"
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
এই আয়াত থেকে শিক্ষা:
অসুস্থ ও মুসাফিরদের জন্য রোজার ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ চান না মানুষ কষ্ট পাক, বরং ইসলামের বিধান সহজ ও মাননসই।
৪️⃣ যারা রোজা রাখতে সক্ষম নয়, তাদের বিধান
আল্লাহ বলেন:
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
"আর যারা রোজা রাখতে সক্ষম নয়, তাদের জন্য আছে একজন গরিবকে খাওয়ানোর বিধান।"
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৪)
এই আয়াত থেকে শিক্ষা:
বৃদ্ধ, অসুস্থ বা অক্ষম ব্যক্তিরা রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া দিতে পারেন।
একজন গরিবকে প্রতিদিন খাবার দিলে রোজার বদলা পূরণ হয়।
৫️⃣ রোজা ভঙ্গের শাস্তি ও কাফফারা
আল্লাহ বলেন:
فَفِدْيَةٌ طَعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا
"যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তবে তাকে ৬০ জন গরিবকে খাওয়াতে হবে।"
(সূরা আন-নিসা: ৯২)
এই আয়াত থেকে শিক্ষা:
ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করা গুরুতর অপরাধ।
এর কাফফারা হলো ৬০ দিন ধারাবাহিক রোজা রাখা বা ৬০ জন গরিবকে খাওয়ানো।
৬️⃣ রোজার উদ্দেশ্য ও আত্মসংযম
আল্লাহ বলেন:
وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ
"তোমরা ফজরের সাদা সুতা ও কালো সুতা পৃথক হওয়ার আগ পর্যন্ত খাও-দাও, এরপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।"
(সূরা আল-বাকারা: ১৮৭)
এই আয়াত থেকে শিক্ষা:
রোজার সঠিক সময়সীমা: সেহরি শেষ করতে হবে ফজরের আগে, আর ইফতার করতে হবে সূর্যাস্তের পর।
রোজা আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ দেয়, যা রাত পর্যন্ত পূর্ণ রাখতে হবে।
উপসংহার
রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন ও আত্মসংযম শেখা।
রমজান মাসে রোজা ফরজ করা হয়েছে, কারণ এতে কুরআন নাজিল হয়েছে।
অসুস্থ ও মুসাফিরদের জন্য রোজার ছাড় আছে এবং পরে কাজা করা যাবে।
যারা শারীরিকভাবে অক্ষম, তারা ফিদিয়া দিতে পারে।
ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করলে কাফফারা দিতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার প্রকৃত শিক্ষা অনুসারে আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন!
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2025 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.