শবে মেরাজের কাহিনী

শবে মেরাজের কাহিনী

শবে মেরাজ, অর্থাৎ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণ ও আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের ঘটনা, ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ঘটনা মহান আল্লাহর কুদরতের একটি বড় নিদর্শন। শবে মেরাজের কাহিনী দুইটি পর্যায়ে ঘটে:

১. ইসরা (মক্কা থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাত্রিকালীন ভ্রমণ)।

২. মেরাজ (মসজিদুল আকসা থেকে আসমানে ভ্রমণ এবং আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ)।


ইসরা: মক্কা থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ

১. ঘটনার সূচনা:

এক রাতে মহানবী (সা.) কাবা শরিফে অবস্থান করছিলেন। তখন হজরত জিবরাঈল (আ.) তাঁর কাছে আসেন এবং তাঁকে "বোরাক" নামক বিশেষ বাহনে চড়িয়ে নিয়ে যান।

বোরাক ছিল একটি আলোকের মতো দ্রুতগামী বাহন।

২. মসজিদুল আকসায় পৌছানো:

মহানবী (সা.) মসজিদুল আকসায় উপস্থিত হন।

সেখানে সমস্ত নবী-রাসুলদের একত্রিত করে মহানবী (সা.) ইমাম হিসেবে নামাজ পড়ান। এটি তাঁর নবুয়তের সর্বজনীন স্বীকৃতি।


মেরাজ: আসমানে ভ্রমণ ও আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ

১. প্রথম আকাশে পৌঁছানো:

জিবরাঈল (আ.) মহানবী (সা.)-কে প্রথম আকাশে নিয়ে যান। সেখানে তিনি আদম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

২. সপ্তম আকাশ পর্যন্ত ভ্রমণ:

প্রতিটি আকাশে তিনি বিভিন্ন নবীদের সঙ্গে দেখা করেন:

২য় আকাশে: হজরত ঈসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)।

৩য় আকাশে: হজরত ইউসুফ (আ.)।

৪র্থ আকাশে: হজরত ইদ্রিস (আ.)।

৫ম আকাশে: হজরত হারুন (আ.)।

৬ষ্ঠ আকাশে: হজরত মূসা (আ.)।

৭ম আকাশে: হজরত ইব্রাহিম (আ.)।

৩. সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছানো:

সপ্তম আকাশের পরে তিনি "সিদরাতুল মুনতাহা" নামক স্থানে পৌঁছান, যা সব সৃষ্টির সীমা।

এখান থেকে নবীজির সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন হয়।

৪. নামাজ ফরজ হওয়া:

আল্লাহ তাআলা এই রাতে মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে উম্মতের জন্য ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন।

পরে মহানবী (সা.) মূসা (আ.)-এর পরামর্শে আল্লাহর কাছে বারবার অনুরোধ করে তা ৫ ওয়াক্তে কমিয়ে আনেন।

মহানবী (সা.)-এর জান্নাত ও জাহান্নামের দর্শন

মেরাজের সময় মহানবী (সা.) জান্নাতের সৌন্দর্য এবং সেখানে মুমিনদের জন্য নির্ধারিত পুরস্কার দেখেন।

তিনি জাহান্নামের শাস্তি এবং গুনাহগারদের দুঃখজনক অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন।


মক্কায় ফিরে আসা:

মেরাজের এই সম্পূর্ণ সফর সম্পন্ন হওয়ার পর মহানবী (সা.) মক্কায় ফিরে আসেন।

পরের দিন তিনি কুরাইশদের কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করেন।

যদিও অনেকে এ ঘটনাকে মেনে নিতে পারেনি, কিন্তু যারা বিশ্বাস করেছিল, তাদের ঈমান আরও দৃঢ় হয়।


শবে মেরাজ থেকে শিক্ষা:

১. নামাজের গুরুত্ব:

এই রাতে নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়। এটি ইসলাম ধর্মের একটি মৌলিক স্তম্ভ।

২. আল্লাহর কুদরত:

মেরাজের ঘটনা আল্লাহর অসীম ক্ষমতা এবং নবীজির প্রতি তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের প্রমাণ।

৩. গুনাহ থেকে বাঁচার শিক্ষা:

জাহান্নামের শাস্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে গুনাহ থেকে বাঁচা এবং জান্নাতের পথে চলার অনুপ্রেরণা।


উপসংহার:

শবে মেরাজ ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ ঘটনা। এই রাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের উপহার দেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ দেখান। সুতরাং, এই রাতের তাৎপর্য উপলব্ধি করে ইবাদত-বন্দেগি ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য।