সূরা ফাতিহার মূল বিষয় ও সূরা ফাতিহার শিক্ষা কি?

সূরা ফাতিহার মূল বিষয় ও শিক্ষা

সূরা ফাতিহা (আরবি: سورة الفاتحة) কুরআনের প্রথম সূরা। এটি "উম্মুল কিতাব" (গ্রন্থের মূল) ও "আস-সাব’উল মাসানী" (সাত পুনরাবৃত্ত আয়াত) নামে পরিচিত। এই সূরাটি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস, আল্লাহর প্রশংসা, তাওহিদ (একত্ববাদ), রিসালাত (নবুয়ত), আখিরাত (পরকাল) এবং আল্লাহর কাছে পথনির্দেশনা চাওয়ার আবেদন প্রকাশ করে।

সূরা ফাতিহার মূল বিষয়:

১. আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা

আল্লাহ সকল সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

তিনি দয়ালু ও পরম করুণাময়।

২. তাওহিদ (আল্লাহর একত্ববাদ)

একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা উচিত।

সমস্ত সাহায্য এবং ভরসা কেবলমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া যায়।

৩. আখিরাত ও বিচার দিবসের শিক্ষা

আল্লাহ কেয়ামতের দিনে সবকিছুর বিচার করবেন।

প্রত্যেক মানুষকে তার কর্মফলের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।

৪. সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া

মানুষকে আল্লাহর দেখানো সরল-সঠিক পথ অনুসরণ করতে হবে।

যারা সঠিক পথে চলে, তারা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত।

গজবপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্টদের পথ থেকে দূরে থাকতে হবে।

সূরা ফাতিহার শিক্ষা:

১. আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা

আমরা শুধু আল্লাহর উপর নির্ভর করব এবং তাঁর সাহায্য চাইব।

২. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা

আল্লাহর প্রতি সব সময় কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, কারণ তিনি আমাদের প্রতিপালক ও দয়ালু।

৩. সঠিক পথের দোয়া করা

প্রতিদিন আমাদের উচিত আল্লাহর কাছ থেকে সঠিক পথের দিশা চাওয়া, যেন আমরা গজবপ্রাপ্ত বা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত না হই।

৪. আল্লাহর বিচার ও ন্যায়পরায়ণতা

আল্লাহ একমাত্র বিচারক এবং তিনি সকল মানুষের বিচার করবেন। সুতরাং, আমাদের উচিত ন্যায় ও সত্যের পথে থাকা।

৫. ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সারসংক্ষেপ

তাওহিদ (একত্ববাদ), রিসালাত (নবুয়ত) এবং আখিরাতের (পরকাল) শিক্ষা এই সূরায় সুস্পষ্টভাবে আলোচিত হয়েছে।

সূরা ফাতিহার বাংলা অর্থ কি?

সূরার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ:

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

অর্থ: শুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক।

الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

আর-রাহমানির রাহিম।

অর্থ: যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ

মালিকি ইয়াওমিদ্দিন।

অর্থ: যিনি বিচার দিবসের মালিক।

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

ইয়্যাকা নাঅবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইন।

অর্থ: আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য চাই।

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম।

অর্থ: আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করো।

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

সিরাতাল্লাযিনা আন’আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দাল্লীন।

অর্থ: তাদের পথ, যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছো; তাদের পথ নয়, যারা তোমার গজবের অধিকারী হয়েছে বা যারা পথভ্রষ্ট।


সূরাতুল ফাতিহার প্রধান উপাধি কি?

আল-ফাতিহা সূরা ফাতিহাকে পবিত্র কুরআনের একটি উপাধি বলা হয় এবং এটিকে কিতাবের মা বলা হয়। "এটি একটি সংক্ষিপ্ত কম্পাসের মধ্যে, পবিত্র কুরআনের সমস্ত সত্যতা এবং জ্ঞান বোঝা যায়"। সূরাটিতে বিসমিল্লাহ সহ সাতটি আয়াত রয়েছে।


সূরা ফাতিহার অপর নাম কি?

সূরা আল ফাতিহা-

শ্রেণী: মক্কী সূরা

নামের অর্থ: শুরু,সূচনা

অন্য নাম: ফাতিহাতুল কিতাব, উম্মুল কিতাব, সূরাতুল হামদ, সুরাতুশ্‌ শিফা, সূরাতুস্ সালাত, আস্ সাব্‌য়ুল মাসানী, সূরাতুদ দুআ


সূরা ফাতিহার উত্তরে আল্লাহ কি বলেন?

অর্ধেক আমার জন্য আর বাকি অর্ধেক আমার বান্দাদের জন্য। আমার বান্দারা যা চায়, তা তাদের দেয়া হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন বান্দারা বলে, আল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন (সব প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর) তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দারা আমার প্রশংসা করেছে।


সূরা ফাতিহা ৪০ বার পড়লে কি হয়?

খাজিনাতুল আসরার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করে ফরজ নামাজ আদায়ের আগে কেউ যদি বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা ৪০ বার পাঠ করে তাহলে ওই ব্যক্তি নিঃসন্তান থাকলে সন্তান হবে, বেকার থাকলে চাকরি হবে, ঋণ থাকলে ঋণ পরিশোধের উপায় হয়ে যাবে, সম্পদহীন থাকলে সম্পদ লাভ হবে, অসুস্থ থাকলে সুস্থ হয়ে যাবে ও বিপদাপন্ন থাকলে বিপদমুক্ত  হবে।


নামাজে সূরা ফাতিহা কেন পড়ি?

আল-ফাতিহা মানে খোলার কারণ এটি কুরআনকে খুলে দেয়। এটি কুরআন এবং তোমাদের নামাজের প্রবেশদ্বার; এবং তোমাদের প্রভুর নৈকট্য অর্জনের প্রবেশদ্বার । সূরা আল-ফাতিহাকে কুরআনের জননী, সাতটি বারবার পঠিত আয়াত এবং আরোগ্য বলা হয়।


উপসংহার:

সূরা ফাতিহা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও আকিদার সারসংক্ষেপ। এটি আমাদের আল্লাহর প্রশংসা করা, তার একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা, ন্যায়পরায়ণভাবে জীবন যাপন করা এবং সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করার দিকনির্দেশনা দেয়। এটি প্রতিদিন নামাজের অপরিহার্য অংশ এবং মুমিনদের জন্য এক মহান দোয়া।