ইস্তেগফার অর্থ কি?

ইস্তেগফার অর্থ কি?

"ইস্তিগফার" মানে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যাতে তিনি প্রার্থনাকারীকে দুনিয়া ও আখিরাতে পার্থিব কামনা-বাসনা থেকে রক্ষা করেন। আস্তাগফিরুল্লাহ আক্ষরিক অর্থে "আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই"। সাধারণত, একজন মুসলিম এটিকে যিকিরের অংশ হিসাবে আবৃত্তি করে, অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বা মঙ্গল আল্লাহর কাছ থেকে আসে।


তওবা ও ইস্তিগফার করার দোয়া

আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু, ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নাই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরন্তন; এবং আমি তাঁর কাছে ফিরে আসি। (তিরমিজি, আবু দাউদ)।


তওবার নিয়ম

ক্ষমা প্রার্থনার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যখনই পাপের জন্য অনুতপ্ত হবে তখনই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। 

যেগুলো মেনে তওবা করলে আল্লাহ তার বান্দার তওবা কবুল করবেন। প্রথমত : দ্রুত পাপ কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত : অতীতের সব পাপ কাজ ও ভুলত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। তৃতীয়ত : অন্তরে বিগত পাপ কাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেখানে ফিরে না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে হবে।


তওবার শর্ত

নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া

অনাদায়ী ফরয/ওয়াজিব ইবাদতসমূহ আদায় করা

অন্যের সম্পত্তি/অধিকার নষ্ট করে থাকলে তা ফেরত দেয়া

শারীরিক বা মৌখিকভাবে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা চওয়া

ভবিষ্যতে পাপকাজ পরিত্যাগের দৃঢ় সংকল্প করা

আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করা


তওবা শব্দের অর্থ

আরবি তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ হল "প্রত্যাবর্তন করা" এবং কুরআন এবং হাদিসে (ইসলামী নবী মুহাম্মদের বাণী) পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। ইসলামের পরিপ্রেক্ষিতে, এর অর্থ অতীতের পাপ ও মন্দ কার্যকলাপ থেকে ফিরে যাওয়া বা পিছু হটতে এবং ভবিষ্যতে সেগুলি থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প করা।


ইসলামে তাওবার চারটি ধাপ

নবী মুহাম্মদের উত্তরসূরি ইমাম আলী বলেছেন, "তওবা চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে: হৃদয় দিয়ে অনুশোচনা করা, জিহ্বা দিয়ে ক্ষমা চাওয়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে কাজ করা এবং (অপরাধের) পুনরাবৃত্তি না করার সংকল্প করা। " অনুতপ্তদের জন্য এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।


আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ

أَستَغْفِرُ اللهَ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ। অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি। أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি। অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকেই ফিরে আসছি।


কোন গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন না?

শিরকের সাথে এই সম্পর্কটি লক্ষণীয় কারণ শিরকের জন্য অনুতপ্ত না হলে তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। আল্লাহ তার সাথে অন্য উপাস্যদের শরীক করার (পাপ) ক্ষমা করেন না; কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন অন্য পাপ যে এই: যে আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যদের শরীক করে সে পথভ্রষ্ট হয়েছে বহুদূরে।


মানুষ যখন আল্লাহর দরবারে অনুশোচনার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ খুশি হন, সেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কোরআনে ও হাদিসে দয়া ও ক্ষমার এই মহান গুণাবলির বর্ণনা অসংখ্য আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহর করুণার প্রতি আশাবাদী করে তোলে।


তওবা কবুল হওয়ার শর্তসমূহ:

১. পাপের জন্য আন্তরিক অনুশোচনা থাকতে হবে।

২. ভবিষ্যতে সেই পাপ পুনরায় না করার দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে।

৩. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করতে হবে।

৪. যদি কারও হক নষ্ট করা হয়ে থাকে, তা ফেরত দিতে হবে।


উপসংহার:

তওবা ও ইস্তিগফার আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের জন্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। এগুলো নিয়মিত পাঠ করলে বান্দার হৃদয় শুদ্ধ হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। সুতরাং, প্রতিদিনের জীবনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং ইস্তিগফারের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।