সাওম (রোজা) কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী?
সাওম (সিয়াম) কাকে বলে?
‘সাওম’ (الصوم) বা ‘সিয়াম’ (الصيام) আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে ‘বিরত থাকা’।
শরিয়তের পরিভাষায়:
"নফসের নিয়ন্ত্রণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের পানাহার, যৌনাচার ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা।"
কুরআনে বলা হয়েছে:
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।"
(সূরা বাকারা: ১৮৩)
অর্থ: সাওম কেবল উপবাস নয়, বরং আত্মসংযম ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম।
সাওম বা রোজা কত প্রকার ও কী কী?
ইসলামি শরিয়তে সাওম প্রধানত ৫ প্রকারের হয়ে থাকে।
১️⃣ ফরজ রোজা (ফরজ সাওম)
যেসব রোজা পালন করা বাধ্যতামূলক, সেগুলো ফরজ রোজা।
ফরজ রোজার প্রকারভেদ:
রমজানের রোজা:
পুরো রমজান মাসের রোজা রাখা ফরজ। (সূরা বাকারা: ১৮৫)
কাজা রোজা:
যদি কেউ ওজরের কারণে ফরজ রোজা রাখতে না পারে, তবে পরে কাজা করতে হবে।
কাফফারা রোজা:
কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তবে ৬০ দিন ধারাবাহিক রোজা রাখতে হবে বা ৬০ জন গরিবকে খাওয়াতে হবে।
মানত রোজা:
কেউ যদি আল্লাহর নামে মানত করে যে, সে একটি রোজা রাখবে, তবে তা পালন করা ফরজ হয়ে যায়।
২️⃣ ওয়াজিব রোজা
ফরজ নয়, কিন্তু পালন করা আবশ্যক এমন রোজা ওয়াজিব।
উদাহরণ:
নফল রোজা শুরু করার পর যদি কেউ বিনা কারণে তা ভেঙে ফেলে, তবে পরে তা ওয়াজিব হয়ে যায়।
৩️⃣ সুন্নত ও নফল রোজা
ফরজ বা ওয়াজিব নয়, কিন্তু রাসুল (সা.) যেসব রোজা রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন, তা সুন্নত বা নফল রোজা।
উদাহরণ:
শাওয়ালের ৬ রোজা (রমজানের পরে)
আরাফার দিন (৯ জিলহজ) রোজা
আশুরার রোজা (৯ ও ১০ মুহাররম)
শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা
সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা
দাঊদ (আ.)-এর রোজা (একদিন রোজা, একদিন বিরতি)
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি শাওয়ালের ৬ রোজা রাখবে, সে যেন পুরো বছর রোজা রাখল।"
(মুসলিম: ১১৬৪)
অর্থ: সুন্নত রোজাগুলো রাখলে বিশাল সওয়াব লাভ করা যায়।
৪️⃣ হারাম রোজা
যেসব দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ, সেগুলো হারাম রোজা।
হারাম রোজার দিন:
ঈদুল ফিতর (১ শাওয়াল)
ঈদুল আজহা (১০ জিলহজ)
তাশরিকের তিন দিন (১১, ১২, ১৩ জিলহজ)
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"তোমরা ঈদের দিনগুলোতে রোজা রেখো না, কেননা এগুলো খাওয়ার ও আনন্দের দিন।"
(বুখারি: ১৯৯০, মুসলিম: ১১৩৭)
অর্থ: ঈদের দিন রোজা রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
৫️⃣ মাকরূহ রোজা
যেসব রোজা রাখা অনুচিত বা অপ্রশংসনীয়, সেগুলো মাকরূহ রোজা।
মাকরূহ রোজার উদাহরণ:
শুধু শুক্রবার বা শনিবারের রোজা রাখা (কোনো কারণ ছাড়া)।
রোজা রেখে কারও সাথে খারাপ আচরণ করা।
গরমের কারণে রোজা রেখে অতিরিক্ত পানিশূন্যতায় মারা যাওয়ার আশঙ্কা হলে তা রাখা মাকরূহ।
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"তোমরা শুধু শুক্রবারের দিন রোজা রেখো না, তবে যদি আগের বা পরের দিন রোজা রাখো, তাহলে রাখা যাবে।"
(বুখারি: ১৮৮৪, মুসলিম: ১১৪৪)
অর্থ: কোনো কারণ ছাড়া শুধু শুক্রবার বা শনিবার রোজা রাখা মাকরূহ।
উপসংহার
সাওম বা রোজা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা নয়, বরং আত্মসংযম ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম।
রোজা মূলত ৫ প্রকারের: ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত/নফল, হারাম ও মাকরূহ।
সুন্নত ও নফল রোজা রাখলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।
কিছু দিনে রোজা রাখা হারাম ও কিছু দিনে মাকরূহ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোজা রাখার তাওফিক দান করুন, আমিন!
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2025 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.