সূরা আল-মায়িদা মূল বিষয় ও শিক্ষা কি?

সূরা আল-মায়িদা: মূল বিষয়বস্তু ও শিক্ষা

সূরার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:

নাম: আল-মায়িদা (المائدة) অর্থ : খাদ্যসম্ভার বা দস্তরখান

অবতীর্ণ স্থান: মদিনা

আয়াত সংখ্যা: ১২০

রুকু সংখ্যা: ১৬

মূলত ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান, হালাল-হারাম, প্রতিশ্রুতি পূরণ, ন্যায়বিচার, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সঙ্গে সম্পর্ক, এবং হজরত ঈসা (আ.)-এর জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।


সূরা আল-মায়িদার মূল বিষয়বস্তু

প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার রক্ষা

আল্লাহ বলেন:

"হে ঈমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো।"

(সূরা আল-মায়িদা: ১)

এই আয়াতের শিক্ষা:

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনেও সত্যবাদী হতে হবে।


হালাল ও হারাম খাদ্যের বিধান

আল্লাহ বলেন:

"তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত, শুকরের মাংস এবং যে প্রাণীর নামের উপর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম উচ্চারণ করা হয়েছে।"

(সূরা আল-মায়িদা: ৩)

এই আয়াতের শিক্ষা:

মুসলিমদের জন্য হালাল খাবার গ্রহণ বাধ্যতামূলক।

হারাম খাদ্য পরিহার করা আল্লাহর নির্দেশ।


ইসলামের পরিপূর্ণতা ও আল্লাহর দান

আল্লাহ বলেন:

"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, এবং আমার নেয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করলাম।"

(সূরা আল-মায়িদা: ৩)

এই আয়াতের শিক্ষা:

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।

মুসলমানদের উচিত দ্বীনকে পূর্ণরূপে অনুসরণ করা।


ন্যায়বিচার ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো

আল্লাহ বলেন:

"হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায়বিচারে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং ন্যায়ের সাক্ষ্য দান করো।"

(সূরা আল-মায়িদা: ৮)

এই আয়াতের শিক্ষা:

সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে।

ব্যক্তিগত স্বার্থ বা ঘৃণার কারণে অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো যাবে না।


ওজু, তাহারাত ও পবিত্রতার বিধান

আল্লাহ বলেন:

"নামাজের জন্য যখন তোমরা উঠবে, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত ধুয়ে নাও এবং মাথা মুছে নাও ও পা ধুয়ে নাও।"

(সূরা আল-মায়িদা: ৬)

এই আয়াতের শিক্ষা:

নামাজের জন্য পবিত্রতা অপরিহার্য।

ইসলামে শারীরিক ও আত্মিক পবিত্রতার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।


চুরি ও অপরাধের শাস্তি

আল্লাহ বলেন:

"যারা চুরি করবে, পুরুষ হোক বা নারী, তাদের হাত কেটে দাও, এটা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি।"

(সূরা আল-মায়িদা: ৩৮)

এই আয়াতের শিক্ষা:

ইসলামে অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান আছে, যাতে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।


খ্রিস্টানদের সাথে সম্পর্ক ও ঈসা (আ.)-এর অবস্থান

আল্লাহ বলেন:

"নিশ্চয়ই মসিহ ইবনে মারইয়াম ছিলেন আল্লাহর রাসূল।"

(সূরা আল-মায়িদা: ৭৫)

এই আয়াতের শিক্ষা:

হজরত ঈসা (আ.) আল্লাহর একজন নবী, তিনি আল্লাহর পুত্র নন।

মুসলমানদের উচিত খ্রিস্টানদের সঙ্গে সদাচরণ করা।


সূরা আল-মায়িদার শিক্ষা:

প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পূরণ করা।

হালাল-হারাম মেনে চলা ও হারাম বস্তু পরিহার করা।

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, তাই একে পুরোপুরি অনুসরণ করা।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো।

পবিত্রতা বজায় রাখা ও ওজুর গুরুত্ব অনুধাবন করা।

সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধ করা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।

খ্রিস্টানদের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রাখা, তবে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সূরা আল-মায়িদার শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন, আমিন!