শবে বরাত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা
শবে বরাত (আরবি: ليلة البراءة - লাইলাতুল বরাত) অর্থ "মুক্তির রাত", "গুনাহ মাফের রাত" বা "বরকতময় রাত"। এটি শাবান মাসের ১৫তম রাত, যা কিছু মুসলমানদের মধ্যে বিশেষ ইবাদতের জন্য পরিচিত। তবে, কুরআন ও সহিহ হাদিসে শবে বরাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে ভিন্নমত পাওয়া যায়। নিচে কুরআন ও হাদিসের আলোকে শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
শবে বরাত সম্পর্কে কুরআনের আলোকে
কুরআনে শবে বরাতের রাত সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে, কিছু তাফসিরবিদ সূরা আদ-দুখান (৪৪:৩-৪) এর আয়াতকে শবে বরাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন।
আয়াত:
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
অর্থ:
"নিশ্চয়ই আমি এক বরকতময় রাতে এ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয়।"
(সূরা আদ-দুখান ৪৪:৩-৪)
ব্যাখ্যা:
অনেক তাফসিরবিদ, বিশেষ করে ইমাম ইবনে কাসির (রহ.), এই আয়াতকে লাইলাতুল কদর এর সঙ্গে সম্পর্কিত করেছেন, কারণ কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে কুরআন রমজানের লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়েছে (সূরা কদর ৯৭:১)।
কিছু আলেম শবে বরাতকেও "লাইলাতুল মুবারাকা" হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তবে অধিকাংশ তাফসিরবিদ একমত যে এটি লাইলাতুল কদর বোঝায়, শবে বরাত নয়।
শবে বরাত সম্পর্কে হাদিসের আলোকে
সহিহ ও গ্রহণযোগ্য হাদিস
কিছু হাদিসে শবে বরাতের রাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তবে সেগুলোর অধিকাংশই দুর্বল (দাঈফ) বা জাল (বানোয়াট)। তবে কিছু গ্রহণযোগ্য হাদিস পাওয়া যায়:
শবে বরাতে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
"যখন শাবান মাসের পনেরোতম রাত আসে, তখন আল্লাহ আসমান দুনিয়ায় নেমে আসেন এবং বনী কালব গোত্রের ছাগলের পশমের পরিমাণের চেয়েও বেশি মানুষকে ক্ষমা করে দেন।"
(সুনান ইবনে মাজাহ: ১৩৮০, আলবানী হাদিসটিকে হাসান (গ্রহণযোগ্য) বলেছেন)
অন্য এক বর্ণনায়:
"আল্লাহ তাআলা এই রাতে বান্দাদের ক্ষমা করেন, তবে মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত।"
(সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)
এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়:
শবে বরাতের রাতে আল্লাহ বান্দাদের ক্ষমা করেন।
তবে মুশরিক ও বিদ্বেষপূর্ণ হৃদয়ের অধিকারীদের ক্ষমা করা হয় না।
দুর্বল ও জাল হাদিস
"শবে বরাতের রাতে নির্দিষ্ট নামাজ পড়ার হুকুম"
কিছু বর্ণনায় বলা হয়, শবে বরাতের রাতে ১০০ রাকাত, ১২ রাকাত বা ১৪ রাকাত নামাজ পড়তে হবে, যা কোনো সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
ইমাম ইবনে জাওযি (রহ.) বলেন:
"শবে বরাতের নামাজ সংক্রান্ত হাদিসসমূহ বানোয়াট (জাল)।"
(আল-মাওদুআত, ইবনে জাওযি)
শায়খ আলবানী (রহ.) বলেন:
"শবে বরাতের নির্দিষ্ট নামাজ ও আমল সম্পর্কে যত হাদিস পাওয়া যায়, তা দুর্বল বা জাল।"
(সিলসিলা আহাদিস আদ-দাইফা)
সিদ্ধান্ত:
শবে বরাতে নির্দিষ্ট কোনো নামাজের কথা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেননি। তবে সাধারণ নফল ইবাদত করা যায়।
শবে বরাতের ফজিলত ও আমাদের করণীয়
যে আমলগুলো করা যায়:
তওবা ও ইস্তিগফার: শবে বরাত গুনাহ মাফের রাত, তাই বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া উচিত।
নফল নামাজ: যদিও নির্দিষ্ট কোনো রাকাত নেই, তবে সাধারণ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়।
কুরআন তিলাওয়াত: আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা।
দোয়া করা: নিজের, পরিবারের ও সমগ্র উম্মাহর জন্য দোয়া করা।
যে ভুলগুলো পরিহার করা উচিত:
শবে বরাতের রাতকে বাধ্যতামূলক ইবাদতের রাত মনে করা।
বিশেষ নামাজ (১০০ রাকাত, ১২ রাকাত) ও আমলের ব্যাপারে বিশ্বাস করা, যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
পটকা ফোটানো, আলোকসজ্জা করা, কবর জিয়ারতের নামে বিদআত করা।
উপসংহার
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে কিছু গ্রহণযোগ্য হাদিস আছে, তবে তা লাইলাতুল কদরের মতো নির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।
এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের ক্ষমা করেন, তবে নির্দিষ্ট কোনো নামাজ বা আমল রাসুল (সা.) দ্বারা নির্ধারিত হয়নি।
বিদআত পরিহার করে, শুদ্ধ নিয়তে দোয়া, ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে রাত কাটানো উত্তম।
সর্বোপরি, শবে বরাতকে ইবাদতের রাত হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া যায়, তবে সেটিকে ইসলামের ফরজ বা বিশেষ বিধান মনে করা যাবে না।
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2025 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.