namaj porar niyom-নামায পড়িবার নিয়ম

নামায পড়িবার নিয়ম

আল্লাহ তাআলা পাক। তাঁহার বন্দেগী করিতে পাক পবিত্র থাকা অত্যাবশ্যক। তাই নামায আদায় করিতে প্রয়োজনে গোসল ও অযু করা ফরয এবং শরীর, কাপড় ও স্থান পাক থাকিতে হইবে। নামায শুরু করিবার পূর্বে সাংসারিক সকল চিন্তা-ভাবনা ভুলিয়া অত্যন্ত সরল প্রাণে, এক মনে এক ধ্যানে একমাত্র প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার দিকে দেল রুজু করিবে এবং কেবলামুখী হইয়া দাঁড়াইবে। তারপর সেজদার জায়গায় দৃষ্টি স্থাপন করত আল্লাহ তাআলাকে হাজের নাজের জানিয়া উভয় হস্ত ঝুলাইয়া “ইন্নী ওয়াজ্জাহতু” পাঠ করিবে। 

ইহার পর নিয়ত করিয়া তাকবীর অর্থাৎ “আল্লাহু আকবার” বলিয়া উভয় হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুল দ্বারা কর্ণমূল স্পর্শ করিয়া নাভির নীচে বাম হাতের উপর ডান হাত স্থাপন করিয়া তাহরীমা বাঁধিবে । মেয়েলোকেরা উভয় হাত কাঁধ এর পর্যন্ত উঠাইয়া ঐ করমেই বুকের উপর বাঁধিবে । তারপর চুপে চুপে বসি সানা পাঠ করিয়া “আউযু বিল্লাহ” এবং “বিসমিল্লাহ” পাঠ করত “সূরা ও ফাতেহা” (আলহামদু লিল্লাহ) পড়িয়া আমীন বলিবে এবং পরে বিসমিল্লাহর সহিত অন্য একটি সূরা পড়িবে। 

অতঃপর “আল্লাহ আকবার” বলিয়া রুকু করিবে এবং জানুদ্বয়ের উপর উভয় হস্তের তালু শেষে স্থাপন করত অঙ্গুলিসমূহ পৃথক রাখিয়া পিঠ ও মাথা এক সমান উঁচু রাখিয়া সামনের দিকে ঝুঁকিবে। রুকুতে যাইয়া ৩, ৫ কি ৭ বার রুকুর নির্ধারিত তসবীহ “সোবহানা রাব্বিয়াল আযীম” বলিবে। তারপর তাসমী অর্থাৎ “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা" বলিয়া সোজাভাবে দাঁড়াইবে। 

মোক্তাদীগণ “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলিয়া ইমামের সঙ্গে দাঁড়াইয়া যাইবে। ইহার পর আল্লাহু আকবার বলার সাথে সাথে সেজদায় যাইবে। সেজদার সময় প্রথমে হাঁটুদ্বয়, তৎপর হস্তদ্বয়, তারপর নাক, অতঃপর কপাল ভূমিতে স্থাপন করিবে এবং নাসিকার দিকে দৃষ্টি রাখিয়া হস্তদ্বয় কেবলামুখী করিয়া কানের নিকটে রাখিবে। 

সেজদায় যাইয়া তিন, পাঁচ বা সাত বার নির্ধারিত তসবীহ রাব্বিয়াল আলা পড়িবে। তারপর “আল্লাহু আকবার” বলিয়া মাথা তুলিবে এবং ডান পা খাড়া করিয়া বাম পায়ের উপর ভর করিয়া বসিবে। স্ত্রীলোক উভয় পা ডান দিকে বাহির করিয়া বসিবে। এ সময় হস্তদ্বয়ের অঙ্গুলিগুলি হাঁটুর উপর কাবা শরীফমুখী করিয়া রাখিবে এবং দৃষ্টি কোলের দিকে রাখিবে। ইহার পরে আবার আল্লাহু আকবার বলিয়া পুনরায় সেজদায় যাইয়া আগের মত তসবীহ পাঠ করিবে। তারপর আল্লাহু আকবার বলিয়া সোজাভাবে দাঁড়াইবে। এভাবে এক রাকআত নামায শেষ হইল।

দ্বিতীয় রাকআতে, তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ)-এর পর আল-হামদুর সহিত অন্য সূরা পড়িয়া রুকু, সেজদা ইত্যাদি শেষ করিয়া পূর্বের ন্যায় বসিবে। অঙ্গুলিসমূহ কাবামুখী করিয়া দুই হাত দুই হাঁটুর উপর রাখিবে এবং ডান পা খাড়া রাখিয়া বাম পায়ের পাতা বিছাইয়া উহার উপর বসিবে। তাশাহহুদ, দরূদ, ও দোআ মাসূরা পড়িয়া প্রথমে ডান দিকে সূরা ও পরে বাম দিকে সালাম ফিরাইয়া নামায শেষ করিবে। এইভাবে দুই পরে রাকআত নামায শেষ হইল ।

তিন বা চারি রাকআতবিশিষ্ট ফরয নামাযের দ্বিতীয় রাকআতের শেষে বৈঠকে শুধু “আত্তাহিয়্যাতু” পড়ার পর “আল্লাহু আকবার” বলিয়া উঠিয়া পূর্বের ন্যায় “সূরা ফাতেহা” রুকু সেজদা করিয়া বসিবে । তৎপর আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ ও দোআ মাসূরা পড়িয়া সালাম ফিরাইবে। এরূপে তিন রাকআত নামায হইল।

চারি রাকআতবিশিষ্ট সুন্নত নামাযে দুই রাকআতের বৈঠকে। তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) শেষ করিয়া “আল্লাহু আকবার” বলিয়া দাঁড়াইবে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রাকআতের নিয়মানুসারে  তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআত শেষ করিবে ।

চারি রাকআতবিশিষ্ট ফরয নামায হইলে দুই রাকআতের বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) শেষ করিয়া আল্লাহু আকবার বলিয়া দাঁড়াইবে। তৎপর তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে শুধু সূরা ফাতেহা পাঠ

করিয়া রুকু-সেজদা করিয়া শেষ বৈঠক করিবে এবং তাশাহহুদ, দরূদ ও দোআ মাসূরা পাঠ করত সালাম ফিরাইয়া নামায শেষ করিবে।

সুন্নত ও নফল নামাযের প্রত্যেক রাকআতে এবং ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকআতে সূরা ফাতেহার পর কোরআন শরীফের যেকোন সূরা বা আয়াত পড়িতে হইবে। রুকু, সেজদা, তসবীহ ও বৈঠক সমস্তই ফরয নামাযের ন্যায় করিতে হইবে। নামায শেষে সালামের পর দুই হাত উঠাইয়া ভক্তিপূর্ণ চিত্তে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করিবে।