roja rakhar islamic niyom-রোজা রাখার সঠিক ইসলামিক নিয়ম ও আদব

রোজা রাখার সঠিক ইসলামিক নিয়ম

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম এবং এটি তাকওয়া অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রোজা রাখতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও সুন্নত অনুসরণ করা উচিত, যা আমাদের রোজাকে পরিপূর্ণ ও বরকতময় করে।


রোজা রাখার সঠিক ইসলামিক নিয়ম ও সুন্নত

নিয়ত করা (ইচ্ছা স্থির করা)

হাদিস:

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজার নিয়ত করবে না, তার রোজা হয় না।"

(আবু দাউদ: ২৪৫৪)

শিক্ষা:

রোজা শুরুর আগে অন্তরে নিয়ত করতে হবে (মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়)।

রমজানের ফরজ রোজার জন্য প্রতি রাতে নিয়ত করা উত্তম।

নফল রোজার জন্য সকাল পর্যন্ত নিয়ত করা যায়, যদি কিছু খাওয়া না হয়।


সেহরি খাওয়া সুন্নত

হাদিস:

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

"সেহরির খাবারে বরকত রয়েছে, তাই তোমরা সেহরি খাও।"

(বুখারি: ১৯২৩, মুসলিম: ১০৯৫)

শিক্ষা:

সেহরি খাওয়া সুন্নত এবং এতে বরকত রয়েছে।

সম্ভব হলে শেষ রাতে সেহরি খাওয়া উত্তম (ফজরের ১০-১৫ মিনিট আগে)।


সুবহে সাদিকের (ফজরের আজান) আগে খাওয়া বন্ধ করা

আল্লাহ বলেন:

"তোমরা ফজরের সাদা সুতা কালো সুতা থেকে পৃথক হওয়া পর্যন্ত খাও ও পান করো, এরপর রোজা পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত।"

(সূরা আল-বাকারা: ১৮৭)

শিক্ষা:

ফজরের আজানের সাথে সাথে পানাহার বন্ধ করতে হবে।


সারাদিন পানাহার ও নাপাক কাজ থেকে বিরত থাকা

হাদিস:

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ করে না, আল্লাহ তার পানাহার বর্জন করাকে কোনো মূল্য দেন না।"

(বুখারি: ১৯০৩)

শিক্ষা:

শুধু না খেয়ে থাকলেই রোজা পরিপূর্ণ হয় না, বরং গিবত, মিথ্যা, ঝগড়া-বিবাদ থেকেও বেঁচে থাকতে হবে।


ইফতার দ্রুত করা (সূর্যাস্তের সাথে সাথে)

হাদিস:

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

"মানুষ যতক্ষণ ইফতার করতে দেরি না করবে না, ততক্ষণ তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।"

(বুখারি: ১৯৫৭, মুসলিম: ১০৯৮)

শিক্ষা:

সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা সুন্নত।

প্রথমে খেজুর না থাকলে পানি দিয়ে ইফতার করা উত্তম।


ইফতারের দোয়া পড়া

হাদিস:

"رَبِّي لَكَ صُمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ"

অর্থ:

"হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, তোমার ওপর ঈমান এনেছি, তোমার ওপর ভরসা করেছি এবং তোমারই দেওয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করছি।"

(আবু দাউদ: ২৩৫৮)

শিক্ষা:

ইফতার করার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা কবুল হয়।


রোজা অবস্থায় সুন্নতি আমল করা

কুরআন তিলাওয়াত করা 

বেশি বেশি জিকির ও দোয়া করা 

দরুদ শরীফ পাঠ করা ﷺ

গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করা 

তারাবিহ নামাজ পড়া 


রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ:

 ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা

ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা

ধূমপান বা অন্য কোনো নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা

ইচ্ছাকৃতভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা

ঋতুবতী বা প্রসূতি নারীদের রোজা রাখা হারাম (তাদের পরবর্তীতে কাজা করতে হবে)

হাদিস:

"যে ব্যক্তি ভুলক্রমে খেয়ে ফেলে, সে যেন রোজা পূর্ণ করে, কারণ আল্লাহ তাকে খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন।"

(বুখারি: ১৯৩৩, মুসলিম: ১১৫৫)

শিক্ষা:

ভুলবশত খেলে বা পান করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।


সংক্ষেপে রোজার সঠিক নিয়ম:

নিয়ত করা।

সেহরি খাওয়া সুন্নত।

ফজরের আগে খাবার বন্ধ করা।

সারাদিন পানাহার ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।

দ্রুত ইফতার করা।

ইফতারের সময় দোয়া করা।

বেশি বেশি ইবাদত করা।

আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে রোজা পালনের তাওফিক দান করুন, আমিন!