roja ki-রোজা কি এবং কেন

রোজা বলতে কি বোঝায়?

রোজা শব্দটিই প্রচলিত। সাওম বা সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া, পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকে সাওম, সিয়াম বা রোজা বলে। কোরআন যে আয়াতটির মাধ্যমে রোজা ফরজ হয়, সেটিতেই ইঙ্গিত রয়েছে যে পূর্ববর্তী জাতি-গোষ্ঠীর জন্য রোজা ফরজ ছিল।


রমজান কি এবং কেন?

روزه (রোজা) এটি ফারসি শব্দ। আরবি ভাষায় صوم বা صيام বলা হয়। আভিধানিক অর্থে বিরত থাকার নাম হলো রোজা বা সাওম। পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত খাবার-পানীয় এবং স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম- কে রোজা বলা হয়।


রোজার মূল উদ্দেশ্য কি?

রোজা হইল ঢালস্বরূপ। ইহা মানুষকে অন্যায়-অপকর্ম ও যাবতীয় পাপাচার হইতে মুক্ত রাখে। মুক্ত রাখে পরকালে জাহান্নামের আগুন হইতে। তবে ইহার মূল উদ্দেশ্য হইল তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন।


রমজান এর অর্থ কি?

"রমজান" শব্দটি আরবী ধাতু রামিয়া বা আর-রামম থেকে উদ্ভূত যার অর্থ "তাপমাত্রা," বা "শুষ্কতা"। অ-আরবীয় মুসলিম দেশ যেমন ইরান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং তুরস্ক এটিকে "রামাজান" বা "রমজান" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কারণ আরবী বর্ণ "ض" তাদের বর্ণের জন্য "জ" উচ্চারণ তৈরি করে।


রোজার সংজ্ঞা

রোজা (সাওম/সিয়াম) হলো ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশে সকল প্রকার পানাহার, যৌন সম্পর্ক ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার নাম। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম।

কুরআনে বলা হয়েছে:

"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।"

(সূরা বাকারা: ১৮৩)

অর্থাৎ রোজার উদ্দেশ্য হলো: আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহভীতি (তাকওয়া) অর্জন।


কেন রোজা রাখা হয়? (রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত)

১️⃣ আল্লাহর নির্দেশ মানার জন্য

রোজা ফরজ (বাধ্যতামূলক) করা হয়েছে এবং এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

কুরআনে বলা হয়েছে:

"রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে… তাই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে, সে যেন রোজা রাখে।"

(সূরা বাকারা: ১৮৫)

অর্থ: রোজা রাখা আল্লাহর হুকুম, যা মানা সকল মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।


২️⃣ আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জন

রোজা মানুষের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে, গুনাহ থেকে দূরে রাখে এবং আল্লাহর ভীতি সৃষ্টি করে।

রাসুল (সা.) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ ছাড়তে পারল না, তার খালি না খেয়ে থাকার কোনো মূল্য নেই।"

(বুখারি: ১৯০৩)

অর্থ: রোজার উদ্দেশ্য শুধু না খেয়ে থাকা নয়, বরং নিজেকে সংযত রাখা ও ভালো চরিত্র গঠন করা।


৩️⃣ গুনাহ মাফ ও জান্নাতের সুসংবাদ

রোজা পূর্বের গুনাহ মাফ করে এবং জান্নাতের বিশেষ দরজা রাইয়্যান দিয়ে প্রবেশের সুযোগ দেয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।"

(বুখারি: ২০১৪, মুসলিম: ৭৬০)

অর্থ: রোজা আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটায় এবং জান্নাতের পথে নিয়ে যায়।


৪️⃣ শয়তানের বাঁধন ও দোয়া কবুল হয়

রমজানে শয়তানকে বন্দি করা হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং দোয়া কবুল করা হয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন:

"রমজান আসলে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।"

(বুখারি: ১৮৯৯, মুসলিম: ১০৭৯)

অর্থ: এই মাসে গুনাহ থেকে বাঁচা সহজ হয় এবং আল্লাহর রহমত বেশি পাওয়া যায়।


৫️⃣ স্বাস্থ্য উপকারিতা

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, রোজা স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অনেক উপকারী।


রোজার স্বাস্থ্য উপকারিতা:

শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হজমক্ষমতা উন্নত করে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে।

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


উপসংহার

রোজা শুধু উপবাস নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ।

এটি শুধু ইবাদত নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোজার মাধ্যমে শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, গুনাহ মাফ হয় এবং জান্নাত লাভের সুযোগ পাওয়া যায়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝে তা পালন করার তাওফিক দান করুন, আমিন!