সূরা বনি ইসরাইল/আল-ইসরা মূল বিষয় ও শিক্ষা কি?

সূরা বনি ইসরাইল/আল-ইসরা মূল বিষয় ও শিক্ষা কি?

সূরা বনি ইসরাইল বা সূরা আল-ইসরা (সূরা নম্বর: ১৭) মক্কায় অবতীর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা ১১১টি আয়াত নিয়ে গঠিত। এই সূরার দুটি নামই প্রচলিত:

আল-ইসরা: অর্থাৎ "রাত্রিকালীন সফর" – এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মিরাজ বা ইসরা ঘটনার ইঙ্গিত করে।

বনি ইসরাইল: কারণ এতে বনি ইসরাইল জাতির ইতিহাস ও শিক্ষার কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।


মূল বিষয়বস্তু:


ইসরা বা মিরাজের ঘটনা (আয়াত ১):

নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাতের বেলায় ভ্রমণ করানো হয়—এটি ইসরা।

এটি নবুয়তের একটি বিরাট মুজিযা।

سُبْحَـٰنَ ٱلَّذِىٓ أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ...

“পবিত্র সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিকালে ভ্রমণ করালেন...” (আয়াত ১)


বনি ইসরাইল জাতির ইতিহাস:

আল্লাহ কীভাবে বনি ইসরাইল জাতিকে সম্মান দিয়েছিলেন, পরে তাদের গোনাহ ও অবাধ্যতার কারণে শাস্তি দিয়েছেন, তা তুলে ধরা হয়েছে।

তারা দুইবার "ভয়ংকর দুর্বৃত্ততা" করেছিল—তখন আল্লাহ তাদের শত্রুদের মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছিলেন।


আখলাক ও সামাজিক নির্দেশাবলি (আয়াত ২৩–৩৯):

এই অংশে ইসলামী জীবনের মূলনৈতিক ও সামাজিক আদর্শ দেওয়া হয়েছে, যেমন:

আল্লাহ ছাড়া কাউকে উপাস্য না করা

মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার

দরিদ্রদের সাহায্য

অপচয় না করা

ব্যভিচার থেকে দূরে থাকা

ন্যায্য পরিমাপে বেচাকেনা

অহংকার না করা

وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلْوَٰلِدَيْنِ إِحْسَـٰنًا...

“তোমার প্রভু আদেশ দিয়েছেন—তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো...”

(আয়াত ২৩)


কুরআনের মর্যাদা ও মানুষকে চ্যালেঞ্জ:

কুরআনের জ্ঞানের গভীরতা, প্রভাব ও অলৌকিকতা বর্ণনা করা হয়েছে।

মানুষকে কুরআনের মত কিছু সৃষ্টি করে দেখাতে বলা হয়েছে, যা তারা ব্যর্থ হবে।


নবীকে সান্ত্বনা ও দাওয়াতের দিকনির্দেশনা:

নবী (সা.)-কে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে।

কাফেরদের অবিশ্বাসে হতাশ না হতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।


মূল শিক্ষা ও উপদেশ:

তাওহীদের গুরুত্ব : আল্লাহ ছাড়া কাউকে উপাস্য না করা।

নৈতিকতা ও সমাজনীতি : মা-বাবার অধিকার, প্রতিবেশীর হক, দান, অপচয় বর্জন, ব্যভিচার থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।

ঈমান ও শাস্তির সম্পর্ক : যেমন বনি ইসরাইল অবাধ্য হলে কীভাবে তারা শাস্তি পেয়েছে, তা মুসলমানদের জন্য সতর্কবার্তা।

আখিরাতের স্মরণ : দুনিয়ার মোহে না পড়ে পরকালের জন্য প্রস্তুতির তাগিদ।

নবীজির মর্যাদা ও দায়িত্ব : নবী (সা.)-এর মিরাজ ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ মর্যাদা প্রদান।


উল্লেখযোগ্য আয়াতসমূহ:

আয়াত ১ – মিরাজের ঘটনা

আয়াত ২৩-৩৯ – ইসলামি নৈতিক ও সামাজিক বিধান

আয়াত ৮২ – কুরআন হচ্ছে "শিফা" ও "রহমত"

আয়াত ৭০ – আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন

وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِىٓ ءَادَمَ...

“আমি আদম সন্তানদের মর্যাদাবান করেছি...”

(আয়াত ৭০)


উপসংহার:

সূরা আল-ইসরা মুসলমানদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনামা। এটি একদিকে নবীজির মিরাজের ঘটনা স্মরণ করায়, অন্যদিকে তাওহীদ, ন্যায়বিচার, মানবতা ও ঈমানদার জীবনের মূলনীতি তুলে ধরে।