নামাজের বিবরণ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ঐতিহাসিক পটভূমি

নামাযের বিবরণ

মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাথে বান্দাহর সুসম্পর্ক স্থাপনের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে সালাতকে আবশ্যক করেছেন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে নামায। ইসলামী শরীয়তে ঈমানের পরে নামাযের স্থান। নামাযের দ্বারা বান্দাহ মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদিহীতামূলক জীবন গঠনের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণ ও রহমত কামনা করে থাকে। এ লক্ষোই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে।

নামায শব্দটি ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। আরবীতে নামাযকে সালাত বলা হয়। সালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বাকা কাঠকে আগুনে পুড়িয়ে সোজা করা, অনুগ্রহ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, গুণকীর্তন করা ইত্যাদি। বান্দাহ যেহেতু নিষ্ঠার সাথে সরল অন্তরে দণ্ডায়মান হয়, সেহেতু সালাতকে সালাত নামে অভিহিত করা হয়। কেউ কেউ বলেন, সালাত শব্দটি সেলাহ্ থেকে এসেছে যার অর্থ মিলন ও সম্পর্ক, বান্দা ও প্রভুর মাঝে সালাত সম্পর্ক সৃষ্টি করে বলে সালাতকে সালাত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।

শরীয়তের পরিভাষায় শরীয়ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে কিয়াম, রুকু ও সিজদার মাধ্যমে মহান আল্লাহর গুণকীর্তন করাকে সালাত বলা হয়। অন্য কথায় বিশেষ পদ্ধতিতে মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করাকে সালাত বলা হয়।


পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ঐতিহাসিক পটভূমি

রাসূল আকরাম (সঃ) এর যে রাতে মিরাজ অনুষ্ঠিত হয় অর্থাৎ তিনি যে রাতে মহান আল্লাহর অসীম কুদরতে দুনিয়া থেকে সপ্তম আসমান পরিভ্রমণ করেন, বেহেশত দোযখ অবলোকন করেন এবং মহান আল্লাহর দীদার লাভ করেন, ঐ রাতে মহান আল্লাহ তাঁকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায উপহার স্বরূপ দান করেন। প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায দান করেছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) স্বীয় উম্মতের দুর্বলতা জনিত কারণে কমাতে কমাতে অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামায মঞ্জুর করিয়ে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নির্ধারণের হেকমত সম্পর্কে বলা হয় যে সেগুলো বিভিন্ন নবীর আমল ছিল। 


এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ এখানে দেয়া হলো-

ফজরঃ প্রথম পয়গম্বর আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) যখন বেহেশত থেকে দুনিয়ার প্রেরিত হয়েছিলেন, তখন দুনিয়ায় রাতের গভীর অন্ধকার বিরাজ করছিল। এতে তিনি মহাসংকটে পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সারা রাত কেঁদে কাটালেন। তারপর যখন রাতের অন্ধকার দূর হয়ে ভোরের আলো প্রকাশ পেল, তখন তিনি মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া স্বরূপ দু রাকাআত নামায আদায় করলেন। এ দু রাকাআত নামাযই ফরয নামাযরূপে পরিগণিত হয়েছে।

যোহরঃ মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নিজের পুত্রকে নিজে কুরবানী করতে মনোবল না হারানোর কারণে এক রাকাআত, পুত্রের মায়া মন থেকে দূর করতে পারার কারণে এক রাকাআত, হযরত ইসমাইল মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকার কারণে এক রাকাআত হযরত ইসমাইল (আঃ) এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী হয়ে যাবার জন্য এক রাকাআত, মোট এ চার রাকাআত নামায শুকরিয়া স্বরূপ আদায় করেছিলেন। এ চার রাকাআত নামাযই ফরয হিসেবে গণ্য হয়েছে।

আসরঃ হযরত ইউনুস (আঃ) বিরাট এক সামুদ্রিক মাছের পেটে আবদ্ধ হয়েছিলেন, সে অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভের জন্য মাছের পেটে ঢুকার সময় গভীর রাতের অন্ধকার ছিল ঐ অন্ধকার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাগর বক্ষের পানি রাশি থেকে মুক্তি লাভের জন্য এবং মহান আল্লাহ তার অপরাধ মার্জনা করে দেয়ার জন্য অর্থাৎ মোট এ চারটি কারণে তিনি চার রাকাআত শুকরিয়া নামায আদায় করেছিলেন। এ নামায চার রাকাআতই আসরের ফরয নামায রূপে নির্দিষ্ট হয়েছে।

মাগরিবঃ হযরত ঈসা (আঃ) নিজে আল্লাহ না হওয়ার নিদর্শন স্বরূপ এক রাকাআত, তার মাতা বিবি মরিয়ম (আঃ) আল্লাহ না হওয়ার নিদর্শন স্বরূপ এক রাকাআত এবং একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাকেই আল্লাহ স্বীকারের নিদর্শন স্বরূপ এক রাকাআত, এ মোট তিনটি কারণে তিনি তিন রাকাআত নামায পড়েছিলেন। পরবর্তীতে এ তিন রাকাআতই মাগরিবের ফরয নামায রূপে নির্দিষ্ট হয়েছে।

ইশাঃ হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি লাভের জন্য এক রাকাআত, নীলনদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক রাকাআত, অবাধ্য ইসরাইলদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক রাকাআত এবং ফেরাউন ও তার বাহিনী নীলনদে ডুবে ধ্বংস হওয়ার জন্য এক রাকাআত মোট এ চারটি কারণে চার রাকাআত নামায পড়েছিলেন। এ চার রাকাআতই ইশার ফরয নামায রূপে পরিগণিত হয়েছে।

বেতরঃ রাসূলে আকরাম (সঃ) শবে মিরাজে যখন সফরে বের হন, তখন হযরত মূসার সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছে তার জন্য এক রাকাআত নামায পড়তে অনুরোধ করেন। সেখানে পৌঁছে তিনি মূসা (আঃ) এর জন্য এক রাকাআত নামায পড়েন। 

নিজের জন্য মতান্তরে পিতার জন্য আর এক রাকাআত নামায পড়েন। এ সময় মহান আল্লাহ তাকে আরো এক রাকাআত নামায আদায় করতে নির্দেশ দেন। তিনি সে রাকাআতও আদায় করেন। অতএব, কারো মতে এ নামাযের প্রথম রাকাআত ওয়াজিব, দ্বিতীয় রাকাআত সুন্নত, তৃতীয় রাকাআত ফরয। একত্রে তিন রাকাআতই ওয়াজিব রূপে নির্ধারিত হয়েছে।