সূরা নাসের মূল বিষয় কি?
সূরাতুল নাস আমাদের অন্তরের অভ্যন্তরে মন্দের গোপন ফিসফাসগুলির বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক করে এবং অন্য পুরুষ বা অদৃশ্য আত্মা থেকে আসা মন্দতার বিরুদ্ধেও সতর্ক করে । যতক্ষণ আমরা নিজেদেরকে আল্লাহর সুরক্ষায় রাখব এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখব, ততক্ষণ মন্দ আমাদের প্রভাবিত করতে পারবে না।
মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর মদিনায় এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়। এতে ইসলামের জন্য একটি মহান বিজয়ের সুসংবাদ রয়েছে, যার পরে, লোকেরা দলে দলে ইসলামের পতাকার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ।
সূরা আন-নাস মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে; যদিও কোন কোন বর্ণনায় একে মক্কায় অবতীর্ণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর ছয় আয়াতে শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য সংক্ষেপে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করা হয়। এই সূরাটি এবং এর পূর্ববর্তী সূরা আল-ফালাককে একত্রে মুআওবিযাতাইন (আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দুটি সূরা) নামে উল্লেখ করা হয়।
সূরা নাস (আরবি: سورة الناس) কুরআনের ১১৪ নম্বর এবং শেষ সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে ৬টি আয়াত রয়েছে। সূরা নাস মূলত আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া। এতে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
সূরা নাসের আয়াত:
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ مَلِكِ النَّاسِ إِلَٰهِ النَّاسِ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
উচ্চারণ:
কুল আউযু বিরাব্বিন নাস।
মালিকিন নাস।
ইলাহিন নাস।
মিন শাররিল ওয়াসওয়াসিল খান্নাস।
আল্লাজি ইউওয়াসউসু ফি সুদুরিন নাস।
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।
অর্থ:
বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের প্রতিপালকের কাছে,
মানুষের মালিকের কাছে,
মানুষের উপাস্যের কাছে।
সেই কুমন্ত্রণা দানকারী শয়তানের অনিষ্ট থেকে,
যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়,
যা জিন ও মানুষের মধ্যেও রয়েছে।
সূরা নাসের মূল বিষয়বস্তু:
১. আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা:
সূরাটি শুরু হয়েছে আল্লাহর তিনটি গুণাবলীর মাধ্যমে:
রাব্ব (প্রতিপালক): তিনি সৃষ্টিকুলের পালনকর্তা।
মালিক (মালিক বা শাসক): তিনি সমস্ত কিছুর একমাত্র শাসক।
ইলাহ (উপাস্য): তিনি একমাত্র উপাস্য এবং প্রার্থনাযোগ্য।
এই তিনটি গুণাবলীর মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারে যে আল্লাহই একমাত্র সর্বশক্তিমান এবং তার কাছেই সাহায্য চাওয়া উচিত।
২. শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা:
সূরাটি শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং ধোঁকা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার দোয়া।
শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং পাপের দিকে প্রলুব্ধ করে।
৩. শয়তানের দুই প্রকার:
জিন জাতির শয়তান: যে অদৃশ্য থেকে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়।
মানুষের শয়তান: যারা কুমন্ত্রণা দিয়ে অন্যকে বিভ্রান্ত করে।
সূরা নাসে উভয় প্রকার শয়তানের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
৪. অন্তরের কুমন্ত্রণা:
সূরা নাসের মাধ্যমে শেখানো হয়েছে, শয়তান মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয় এবং তাকে ভালো কাজ থেকে বিরত রেখে খারাপ কাজের প্রতি প্রলুব্ধ করে। এজন্য মানুষকে সবসময় সচেতন থাকা উচিত।
সূরা নাস থেকে শিক্ষা:
আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরতা:
সমস্ত বিপদ ও কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর উপর আস্থা রাখা জরুরি।
শয়তানের ধোঁকা সম্পর্কে সতর্ক থাকা:
শয়তান মানুষকে ভালো কাজ থেকে সরিয়ে খারাপ পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করে। তাই তাকে পরাজিত করতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া উচিত।
অন্তরের পবিত্রতা:
শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকতে নিজের অন্তর পবিত্র রাখা এবং আল্লাহর স্মরণে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
আল্লাহর তিনটি গুণাবলীর স্বীকৃতি:
আল্লাহই রাব্ব, মালিক এবং ইলাহ। এই তিনটি পরিচয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
উপসংহার:
সূরা নাস আমাদের শেখায় যে, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। এটি দৈনন্দিন জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা আমাদের অন্তর ও জীবনকে শয়তানের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখে।
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2025 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.