সূরা লোকমান এর ফজিলত

সূরা লোকমান এর ফজিলত

সূরা লোকমান কুরআনের ৩১তম সূরা, এবং এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় ৩৪টি আয়াত রয়েছে। এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে হযরত লোকমান (আঃ)-এর নামে, যিনি ছিলেন জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান একজন মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়েছেন, যা এই সূরায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

যে ব্যক্তি সূরা লুকমান তেলাওয়াত করবে তাকে ত্রিশজন ফেরেশতা রক্ষা করবে: আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে আলী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা লুকমান পাঠ করবে, ত্রিশজন ফেরেশতা তাকে শয়তান ও তার সৈন্যদলের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে।

সূরা লোকমানের ফজিলত ও তাৎপর্য:

১. তাওহিদের শিক্ষা:

সূরা লোকমানের মূল শিক্ষার মধ্যে অন্যতম হলো আল্লাহর একত্ববাদের (তাওহিদ) শিক্ষা। হযরত লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে শিরক (অন্য কারও সাথে আল্লাহকে শরীক করা) থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছেন। শিরককে তিনি সর্বোচ্চ অন্যায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি মুসলিমদের জন্য আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা ও আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।

২. পিতামাতার অধিকার:

এই সূরায় হযরত লোকমান (আঃ)-এর উপদেশের মধ্যে পিতামাতার প্রতি সদাচরণের গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, পিতামাতার প্রতি সর্বদা কৃতজ্ঞ এবং সম্মানিত হওয়া উচিত। পিতামাতার সেবা এবং তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন ইমানদারের কর্তব্য।

৩. সন্তানদের প্রতি শিক্ষণীয় উপদেশ:

হযরত লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন, পরকালের জীবনের প্রস্তুতি, সালাত কায়েম করা, ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়া এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। এই উপদেশগুলো প্রত্যেক পিতামাতার জন্য তাদের সন্তানদের প্রতি পালনীয়।

৪. আখলাক ও নৈতিকতা:

সূরার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা ভালো চরিত্র এবং নৈতিকতার ওপর জোর দিয়েছেন। যেমন বিনয়ী হওয়া, অহংকার না করা, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করা, এবং কণ্ঠস্বরের বিনয়ী হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

৫. আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন:

আল্লাহ তায়ালা সূরার বিভিন্ন স্থানে তাঁর সৃষ্টিজগতের নিদর্শনগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, যেমন: আকাশ, পৃথিবী, পাহাড়, নদী, এবং বৃষ্টি। আল্লাহর সৃষ্টির এই নিদর্শনগুলো দেখে মানুষ আল্লাহর প্রতি ইমান মজবুত করতে পারে।

৬. আখিরাতের প্রস্তুতি:

সূরা লোকমানে পরকালের জীবনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানুষকে দুনিয়ার জীবন নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে আখিরাতের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। পৃথিবীর জীবন সাময়িক, আর আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী।

৭. অদৃশ্য জ্ঞানের মালিক কেবল আল্লাহ:

এই সূরার শেষ আয়াতে বলা হয়েছে যে, অদৃশ্যের (গায়েবের) জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। পাঁচটি বিষয় শুধুমাত্র আল্লাহ জানেন: কেয়ামতের সময়, বৃষ্টিপাত, গর্ভের সন্তানের অবস্থা, কে কী কাজ করবে, এবং কে কোথায় মারা যাবে।

৮. সূরা লোকমান পাঠের ফজিলত:

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, যারা সূরা লোকমান নিয়মিত পাঠ করেন, তাদের জীবনে আল্লাহর রহমত ও দয়া নাযিল হয়। এটি একজন মুমিনকে নৈতিকতা, ইমান, এবং পরকালের প্রতি সচেতন করে তোলে।

উপসংহার:

সূরা লোকমান আমাদের জীবন যাপন, নৈতিকতা, এবং ধর্মীয় দায়িত্ব সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। এটি আমাদের আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা, পিতামাতার অধিকার পালন, সন্তানদের সঠিক শিক্ষাদান, এবং আখিরাতের জীবনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সচেতন করে। এই সূরার নিয়মিত তিলাওয়াত আল্লাহর রহমত ও দয়ার পথে নিয়ে যায়, এবং একজন মুমিনের ইমানকে আরও মজবুত করে তোলে।