সূরা আলাক্ব-এর মূল বার্তা ও ফজিলত

সূরা আলাক্ব এর ফজিলত 


সূরা আলাক্ব (سورة العلق) কুরআনের ৯৬তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ এবং এতে ১৯টি আয়াত রয়েছে। এ সূরার প্রথম পাঁচটি আয়াত ছিল কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াত। এটি মানবজাতির জ্ঞান, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য এবং আত্ম-অহংকার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে।

সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে প্রমাণিত, সূরা আলাক থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ওহীর সূচনা হয় এবং এ সূরার প্রথম পাঁচটি আয়াত (مَا لَمْ يَعْلَمْ) সর্ব প্রথম নাজিল হয়। অধিকাংশ আলেম এ বিষয়ে একমত। পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি (সব কিছু) সৃষ্টি করেছেন।

কোরানের অধ্যায় ৯৬ ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বাস করা হয় যে মুহাম্মদের প্রথম প্রকাশ ছিল। কথিত আছে যে মুহাম্মদ যখন মক্কার কাছে জাবাল আল-নূরে হেরা গুহায় পশ্চাদপসরণ করছিলেন, তখন ফেরেশতা জিব্রাইল তাঁর সামনে হাজির হন এবং তাঁকে "পড়তে!" নির্দেশ দেন। তিনি উত্তর দিলেন, "কিন্তু আমি পড়তে পারি না!"।

এ সূরার দ্বিতীয় আয়াতের শেষ শব্দ আলাক থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। নাযিলের সময়ের দিক দিয়ে এ সূরাটি দুই ভাগে বিভক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.)- এর ৪০ বছর বয়সে হেরা গুহায় এই সূরার প্রথম পাঁচটি আয়াত সর্বপ্রথম নাযিল হয়।


সূরা আলাক্ব-এর মূল বার্তা:


পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের নির্দেশনা:

প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, "পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।" এটি ইসলামিক শিক্ষার ভিত্তি।


মানবসৃষ্টির সূচনা:

আল্লাহ মানুষকে আলাক্বা (জমাট রক্ত) থেকে সৃষ্টি করেছেন, যা তাঁর অসীম ক্ষমতা ও কুদরতের প্রমাণ।


অহংকার ও অবাধ্যতার নিন্দা:

যে ব্যক্তি নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে এবং অহংকার করে, তার জন্য আল্লাহর শাস্তি নির্ধারিত।


সালাত ও আল্লাহর নৈকট্য:

সালাত বা নামাজের গুরুত্ব এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ নির্দেশ করা হয়েছে।


সূরা আলাক্ব-এর ফজিলত:


প্রথম অবতীর্ণ সূরা:

এই সূরার প্রথম পাঁচটি আয়াত আল্লাহর বাণী হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে জিবরাইল (আঃ) এর মাধ্যমে প্রথম নাজিল হয়। তাই এটি কুরআনের অবতারণার সূচনা হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব:

এ সূরা মানুষকে পড়াশোনা ও জ্ঞানার্জনের জন্য উৎসাহিত করে। ইসলামে শিক্ষার গুরুত্বের মূলে এই আয়াতগুলোর অবদান অসামান্য।


তিলাওয়াতের সওয়াব:

যেকোনো সূরার মতোই, সূরা আলাক্ব তিলাওয়াত করলে বিপুল সওয়াব অর্জন হয়। এটি বিশেষত মানুষের মন থেকে অহংকার ও আত্মতুষ্টি দূর করতে সহায়ক।


সালাত ও আল্লাহর স্মরণ:

যে ব্যক্তি নিয়মিত এই সূরা তিলাওয়াত করে, সে আল্লাহর স্মরণে দৃঢ় হয় এবং আল্লাহর কাছে তার নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ পায়।


উপসংহার:

সূরা আলাক্ব জ্ঞান, দয়া, এবং বিনয়ের শিক্ষা দেয়। এটি মানুষকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে এবং অহংকার পরিহার করতে উদ্বুদ্ধ করে। এর তিলাওয়াত ও অর্থ অনুধাবন মানুষকে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে পরিচালিত করে।