কালেমা কী? kalima ki

কালেমা কী?

কালেমা (كلمة) শব্দের অর্থ: বাক্য বা উক্তি।

ইসলাম ধর্মে কালেমা বলতে বোঝানো হয় — এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বাক্য বা ঘোষণা, যা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসকে প্রকাশ করে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক কালেমা হলো “কালেমা তাইয়্যেবা”, যা ইসলামের মূল ভিত্তি। মুসলমান হিসেবে পরিচিত হওয়ার প্রথম শর্তই হলো এই কালেমায় বিশ্বাস ও তা উচ্চারণ করা।

কালেমা তাইয়্যেবা (পবিত্র কালেমা):

আরবি:

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ


উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”

অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।”

এই কালেমা পড়া ও বিশ্বাস করা ইসলামে প্রবেশের মূল চাবিকাঠি।


ইসলামে মোট ৬টি কালেমা প্রচলিত আছে:

এই ৬টি কালেমা সাধারণত মুসলিম শিশুরা শিখে থাকে। যদিও কুরআন বা হাদীসে নির্দিষ্টভাবে “৬ কালেমা” হিসেবে বর্ণিত হয়নি, তবে এগুলোর প্রতিটি অংশ ইসলামী বিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিচে তা দেওয়া হলো:

কালেমার নাম-----উদ্দেশ্য

কালেমা তাইয়্যেবা: ইসলামের মূল বিশ্বাস

কালেমা শাহাদাত: সাক্ষ্য প্রদান

কালেমা তামজিদ: আল্লাহর প্রশংসা

কালেমা তাওহীদ: একত্ববাদ ঘোষণা

কালেমা রদ্দে কুফর: কুফর ও শিরক থেকে মুক্তির ঘোষণা

কালেমা মুনাজাত: দোয়া ও প্রার্থনার ভাষা


কালেমার গুরুত্ব:

ইসলামে প্রবেশের শর্ত।

ঈমানের মূল কেন্দ্রবিন্দু।

জান্নাতের চাবি এই কালেমা (হাদীস অনুযায়ী)।

মৃত্যুকালে এই কালেমা বলা গেলে তা চূড়ান্ত মুক্তির কারণ হতে পারে।


কালেমা শুধু মুখের কথা নয়, বরং এটি হৃদয়ের বিশ্বাস, মনের ইচ্ছা ও কাজের প্রকাশ। একজন প্রকৃত মুসলমান তার জীবনকে এই কালেমার আলোকে গঠন করে।

কালেমা হলো ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সংবলিত কয়েকটি আরবি পংক্তি, যা মূলত "শাহাদা" নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে ইসলামের প্রথম স্তম্ভের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কালেমার মূল কথা হলো আল্লাহ এক এবং তাঁর কোনো শরিক নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত বান্দা ও রাসূল। 

কালেমা শব্দটি আরবি "কালিমাত" শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ বাক্য বা শব্দ। ইসলামে কালেমা বলতে মূলত "কালেমা শাহাদাত" বা "শাহাদাহ" কে বোঝানো হয়। 

কালেমা শাহাদাতের দুটি অংশ রয়েছে: 

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (لَا إِلٰهَ إِلَّا ٱللَّٰهُ) : এর অর্থ "আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নেই"।

মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (مُحَمَّدٌ رَسُولُ ٱللَّٰهِ) : এর অর্থ "মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল"।

ইসলামে কালেমার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি একজন ব্যক্তিকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তার ঈমানের ভিত্তি স্থাপন করে। 


প্রতিটি কালেমার আরবি, উচ্চারণ ও অর্থ

ইসলামের ৬টি কালেমা— প্রতিটির আরবি, বাংলা উচ্চারণ, এবং বাংলা অর্থ-সহ সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেওয়া হলো:


১. কালেমা তাইয়্যেবা (Kalima Tayyibah)

আরবি:

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللّٰهِ


উচ্চারণ:

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ

অর্থ:

আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।


২. কালেমা শাহাদাত (Kalima Shahadat)

আরবি:

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ


উচ্চারণ:

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, ওয়া আশহাদু অন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু

অর্থ:

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই; এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।


৩. কালেমা তামজীদ (Kalima Tamjeed)

আরবি:

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ


উচ্চারণ:

সুবহানাল্লাহি, ওয়ালহামদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম

অর্থ:

আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ সবচেয়ে বড়। শক্তি ও ক্ষমতা একমাত্র মহান ও মহান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই।


৪. কালেমা তাওহীদ (Kalima Tawheed)

আরবি:

لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ حَيٌّ لَا يَمُوْتُ أَبَدًا، ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ


উচ্চারণ:

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ইউহ্‌ই ওয়াইউমীতু, ওয়া হুয়া হাইয়্যুন লা ইয়ামূতু আবাদান, জূল জালালি ওয়াল ইকরাম, বিয়াদিহিল খাইর, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর।

অর্থ:

আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। সার্বভৌমত্ব ও সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। তিনিই জীবন দেন ও মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মরেন না। মহিমান্বিত ও সম্মানিত, সমস্ত কল্যাণ তাঁর হাতেই, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।


৫. কালেমা রদ্দে কুফর (Kalima Radd-e-Kufr)

আরবি:

اَللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ بِهِ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ بِهِ، تُبْتُ عَنْهُ وَتَبَرَّأْتُ مِنَ الْكُفْرِ وَالشِّرْكِ وَالْكِذْبِ وَالْغِيبَةِ وَالْبِدْعَةِ وَالنَّمِيمَةِ وَالْفَوَاحِشِ وَالْبُهْتَانِ وَالْمَعَاصِى كُلِّهَا، وَأَسْلَمْتُ وَأَقُوْلُ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ


উচ্চারণ (সংক্ষেপে):

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন আন উশরিকা বিকা শাই’আ ওয়আনা আ’লামু বিহি... ওয়া আকুলু লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।

অর্থ (সারাংশ):

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই, যেন জেনে-বুঝে অথবা না জেনে তোমার সাথে কোনো কিছু অংশীদার করি। আমি সেই সকল কুফর, শিরক, মিথ্যা, গীবত, বিদআত, পরনিন্দা, অশ্লীলতা ও সকল গুনাহ থেকে বিমুক্তি ঘোষণা করছি এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম ও বলছি: “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।”


৬. কালেমা মুনাজাত (Kalima Munajat)

আরবি:

يَا رَبِّ أَنْتَ مَقْصُوْدِىْ وَرِضَاكَ مَطْلُوْبِىْ، أَعْطِنِىْ مَحَبَّتَكَ وَمَعْرِفَتَكَ


উচ্চারণ:

ইয়া রব্বি আনতা মাকসুদি ওয়া রিদ্বাকা মাতলুবি, আ’ত্বিনি মাহাব্বাতাকা ওয়া মা’রিফাতাকা

অর্থ:

হে আমার প্রভু! তুমি আমার একমাত্র উদ্দেশ্য, তোমার সন্তুষ্টিই আমার কাম্য। তুমি আমাকে তোমার মহব্বত ও তোমার পরিচয় দান করো।


উপসংহার:

এই ছয়টি কালেমা শুধু মুখস্থ করার জন্য নয়, বরং জীবনে বাস্তবায়ন ও হৃদয়ে ধারণ করার জন্য। এগুলো ইসলামি আকিদা, নৈতিকতা ও আত্মশুদ্ধির ভিত্তি।