কুরবানী সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিস

কুরবানী সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিস

কুরবানী (قرباني) বা পশু জবাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ইবাদত, যা হজ্বের সময় ঈদুল আজহার (১০-১২ জিলহজ্জ) দিনে আদায় করা হয়। এটি ইসলামী ইতিহাসে ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগ ও আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত।


নিচে কুরআন ও হাদীস থেকে কুরবানির গুরুত্ব, বিধান ও উদ্দেশ্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও হাদীস তুলে ধরা হলো:


কুরআনে কুরবানির উল্লেখ:

সূরা আল-হজ্ব – আয়াত ৩৬-৩৭:

وَٱلْبُدْنَ جَعَلْنَـٰهَا لَكُم مِّن شَعَـٰٓئِرِ ٱللَّهِ...

“আর আমি উট ও গরুকে করেছি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এতে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে।”


لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَـٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقْوَىٰ مِنكُمْ...

“আল্লাহর কাছে পশুর মাংস বা রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া (ভক্তি ও আন্তরিকতা)।”

— [সূরা আল-হজ্ব: আয়াত ৩৬-৩৭]

এই আয়াত দু’টিতে আল্লাহ বোঝাচ্ছেন কুরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর প্রতি ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশ।


সূরা কাওসার – আয়াত ২:

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنْحَرْ

“অতএব, তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায পড়ো ও কুরবানী করো।”

— [সূরা কাওসার: আয়াত ২]

এখানে কুরবানিকে নামাযের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতেরূপে উল্লেখ করা হয়েছে।


হাদীসে কুরবানির গুরুত্ব:

রাসূল (সা.) বলেছেন:

"عَنِ ٱلْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ... قَالَ: قَالَ رَسُولُ ٱللَّهِ ﷺ: مَن ذَبَحَ قَبْلَ ٱلصَّلَاةِ، فَإِنَّهُ ذَبَحَ لِنَفْسِهِ، وَمَن ذَبَحَ بَعْدَ ٱلصَّلَاةِ، فَقَدْ تَمَّ نُسُكُهُ، وَأَصَابَ سُنَّةَ ٱلْمُسْلِمِينَ..."


“যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করলো, সে তার জন্যই কুরবানী করলো (শুদ্ধ নয়)। আর যে নামাযের পর কুরবানী করলো, তার কুরবানী পূর্ণ হলো এবং মুসলমানদের সুন্নাত অনুসরণ করলো।”

— (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৫৪৫)


আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত:

قال رسول الله ﷺ: "من وجد سعة فلم يضح فلا يقربن مصلانا"

“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করলো না, সে যেন আমাদের ঈদের মুসাল্লায় না আসে।”

— (সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস: ৩১২৩ – হাদীসটি হাসান হিসেবে বিবেচিত)

এ হাদীসে কুরবানির গুরুত্ব এতটাই বেশি যে রাসূল (সা.) এর অবহেলার প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।


রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানির সময় বলতেন:

اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّي

“হে আল্লাহ! আমার পক্ষ থেকে কুরবানী কবুল করে নাও।”

— (সহীহ মুসলিম)


কুরবানির শিক্ষা ও উদ্দেশ্য:

আল্লাহর প্রতি আনুগত্য:ইব্রাহিম (আ.)-এর মতো ত্যাগের উদাহরণ।

তাকওয়ার প্রকাশ: কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভই মুখ্য।

সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ: গরিবদের মাঝে গোশত বিতরণ করে সহানুভূতির চর্চা।

নিজের নফসের কোরবানি: কেবল পশু নয়, নিজের খারাপ প্রবৃত্তিকেও ত্যাগ করা।


উপসংহার:

কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী কুরবানী একটি মহান ইবাদত যা শুধুমাত্র মাংস জবাই নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আন্তরিক ত্যাগ ও ভক্তির প্রকাশ। এটি একজন মুমিনের তাকওয়া, উদারতা এবং আনুগত্যের বাস্তব প্রশিক্ষণ।