সূরা আল আহ্‌যাব এর ফজিলত

সূরা আল আহ্‌যাব এর ফজিলত

সূরা আল আহ্‌যাব (সূরা নম্বর ৩৩) হলো পবিত্র কুরআনের একটি মদিনায় অবতীর্ণ সূরা। এতে মোট ৭৩টি আয়াত রয়েছে এবং এটি ইসলামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এই সূরায় বিশেষত নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনের কিছু ঘটনা, মুসলিম সমাজের নীতি ও বিধান, এবং মুমিনদের জন্য শিক্ষা ও নির্দেশনা রয়েছে। 

সূরাটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে যা হল: খন্দকের যুদ্ধ (বা আল-আহজাব: গোষ্ঠী), যা হয়েছিল শাওয়াল, হিজরি 5; বনী কুরাইযার উপর অভিযান, যা জিল-কাদাহ, হিজরী ৫ সালে করা হয়েছিল; এবং হযরত যায়নাবের সাথে মহানবী (সা.)-এর বিবাহ, যেটিও যিল-কাদাহ, হিজরী ৫-এ চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল।

সূরা আহজাব তেলাওয়াত করা একজন মুমিনের বিশ্বাস এবং আল্লাহর উপর নির্ভরতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করতে পারে। সূরার আয়াতগুলো মুসলমানদেরকে আল্লাহর সর্বশক্তিমানতা ও করুণার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, বিশেষ করে কঠিন সময়ে তাঁর উপর ভরসা রাখতে তাদের উৎসাহিত করে।

এই সূরা বিবাহিত দম্পতিদের বিবাহের অনুশীলন এবং আচরণ সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা প্রদান করে তাদের সম্পর্কের অগ্রগতিতে সাহায্য করতে পারে। বিবাহিত দম্পতিদের জন্য সূরা আহযাবের প্রথম উপকারিতা হল, এটি তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক এবং দায়িত্বের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয় ।

সূরা আল আহ্‌যাবের কিছু ফজিলত নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর মর্যাদা:

এই সূরায় আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। বিশেষত ৫৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে:

"নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবী (সা.)-এর উপর দরুদ পাঠান। হে মুমিনগণ, তোমরাও তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম পাঠাও।"

এই আয়াতের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠানোর ফজিলত বোঝা যায় এবং মুমিনদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।


২. সম্মিলিত শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়:

সূরাটিতে আহ্‌যাব যুদ্ধের (খন্দক যুদ্ধ) প্রসঙ্গ উল্লেখিত হয়েছে। মুসলিমরা সেই যুদ্ধে সম্মিলিত শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেছিল, যদিও তাদের বিপরীতে কঠিন পরিস্থিতি ছিল। এটি মুমিনদের জন্য আল্লাহর সাহায্যের প্রতীক।


৩. নবী (সা.)-এর পরিবার ও পবিত্রতার ফজিলত:

এই সূরায় নবী (সা.)-এর পরিবার, বিশেষত তাঁর স্ত্রীদের মর্যাদা এবং তাঁদের জীবনের আদর্শ সম্পর্কিত আয়াত রয়েছে। আল্লাহ বলেন:

"নিশ্চয়ই আল্লাহ চান যে, নবীর পরিবার থেকে অপবিত্রতা দূর করে তাঁদের পবিত্র রাখুন।" (৩৩:৩৩)

এই আয়াতের মাধ্যমে নবী (সা.)-এর পরিবারকে পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।


৪. পর্দা ও শালীনতা সম্পর্কে নির্দেশনা:

সূরা আল আহ্‌যাব নারীদের জন্য পর্দা ও শালীনতা সম্পর্কিত বিধান দিয়েছে। ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

"হে নবী, আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের এবং মুমিনদের নারীদের বলুন যেন তারা নিজেদের ওপর চাদর টেনে দেয়। এটি তাদেরকে পরিচিত করার জন্য, ফলে তারা উত্যক্ত হবে না।"

এই আয়াত মুমিন নারীদের জন্য শালীন পোশাক ও পর্দার গুরুত্ব তুলে ধরেছে, যা মুসলিম সমাজের নৈতিকতা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সহায়ক।


৫. বিশ্বস্ততা এবং আল্লাহর আদেশ মান্য করার গুরুত্ব:

সূরায় বিশ্বস্ততার (আমানত) এবং আল্লাহর নির্দেশনা পালন করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ৭২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন যে, মানুষকে আমানতের ভার দেওয়া হয়েছে, যা পাহাড়, আকাশ, এবং পৃথিবী নিতে রাজি ছিল না। এই আমানত মানে হলো আল্লাহর নির্দেশাবলী ও ধর্মীয় দায়িত্ব পালন।

৬. মুমিনদের শিক্ষা এবং নির্দেশনা:

সূরা আল আহ্‌যাবে মুমিনদের জন্য বিভিন্ন নৈতিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেমন পরিবার জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সঠিকভাবে বিচার করা, এবং সঠিক পথে চলা। এটি মুমিনদের জন্য একধরনের শিক্ষা, যাতে তাঁরা ইসলামের আদর্শ এবং নৈতিকতা অনুসরণ করেন।

উপসংহার:

সূরা আল আহ্‌যাব মুমিনদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ইসলামের নীতি ও বিধান, এবং মুসলিম সমাজের আদর্শিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। এটি মুমিনদের জন্য দারুণ শিক্ষামূলক এবং ইসলামের বিভিন্ন দিকের ওপর জোর দেয়।