চোগলখোরী কাকে বলে? ইসলামে এর নিন্দা ও পরিণতি
চোগলখোরী কাকে বলে
চোগলখোরী (অন্যের কথা এক জনের কাছ থেকে আরেক জনের কাছে পৌঁছে দিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লাগানো, গোপন কথা ফাঁস করা, পরনিন্দা ছড়ানো) ইসলামে খুবই গর্হিত কাজ। আরবীতে একে বলা হয় “নমীমাহ” (نميمة)। এটি গিবত বা পরনিন্দার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর, কারণ এতে মানুষের মধ্যে সরাসরি বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়।
চোগলখোরী হলো একজনের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বা একে অপরের মধ্যে কথা আদান-প্রদান করে মানুষের মধ্যে বিবাদ, ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা এবং সম্পর্ক নষ্ট করা। একজন চোগলখোর ব্যক্তি মূলত অন্যের ক্ষতি করতে বা নিজের স্বার্থ হাসিল করতে এই কাজ করে থাকে। ইসলামে এই কাজকে একটি গুরুতর পাপ এবং হারাম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চোগলখোরী কী এবং এর উদ্দেশ্য:
একজনের কথা অন্যকে বলা: এটি হলো অন্যের ব্যক্তিগত কথা বা সমালোচনা অন্য কারো কাছে পৌঁছে দেওয়া।
ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি: এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে বিবাদ, শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করা এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করা।
স্বার্থ চরিতার্থ করা: অনেক সময় চোগলখোর নিজের স্বার্থ উদ্ধার, নিজেকে ভালো প্রমাণ করা বা দুনিয়াবী সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য এই কাজ করে থাকে।
ইসলামে এর নিন্দা ও পরিণতি:
হারাম ও কবিরা গুনাহ: ইসলামে চোগলখোরী একটি জঘন্যতম হারাম এবং কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।
কুরআন ও হাদিসে নিষিদ্ধ: আল্লাহ তাআলা এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) চোগলখোরীর নিন্দা করেছেন এবং একে নিষিদ্ধ করেছেন।
ভয়াবহ শাস্তি: চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, এবং এই কাজের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কেও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
চোগলখুরি হলো: মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব-বিভেদ ছড়াতে কারো ব্যাপারে কুৎসা রটানো।
কেননা এ ধরণের কাজ করেই জমিনে ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি ও মানুষের ক্ষতি করা হয়। সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানো হয়। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করানো হয় এবং হিংসা-বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়।
ইসলামে চোগলখোরীর নিন্দা
কুরআনে নিন্দা
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“কোনো অপবাদ রটনাকারীর আনুগত্য করো না।”
(সূরা আল-ক্বালম: ১০–১১)
আরও বলেন:
“ধ্বংস তাদের জন্য, যারা পেছনে নিন্দা করে এবং সামনে কটুক্তি করে।”
(সূরা আল-হুমাযাহ: 1)
হাদিসে নিন্দা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
(সহিহ মুসলিম 105; বুখারী 6056)
অন্য হাদিসে এসেছে:
“নিশ্চয়ই কবরের শাস্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গিবত ও চোগলখোরীর কারণে হয়।”
(সহিহ বুখারী 1378, সহিহ মুসলিম 292)
চোগলখোরীর পরিণতি
আল্লাহর কঠিন শাস্তি – আখিরাতে কবর ও জাহান্নামের আজাব ভোগ করতে হবে।
জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া – রাসূল ﷺ সরাসরি বলেছেন, চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
সামাজিক বিভেদ – পরিবার, বন্ধু, সমাজে ঝগড়া-বিবাদ, বিদ্বেষ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।
মান-সম্মান নষ্ট – মানুষ চোগলখোরকে ঘৃণা করে, তার প্রতি আর বিশ্বাস রাখে না।
আত্মার রোগ – হিংসা, কপটতা, বিদ্বেষ ও নফসের দোষ বৃদ্ধি পায়।
মুক্তির উপায়
আন্তরিক তাওবা করা ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
যার সম্পর্কে চোগলখোরী করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাওয়া (যদি সম্ভব হয়)।
ভবিষ্যতে এমন কাজে জড়ানো থেকে বিরত থাকা।
আল্লাহর ভয় (তাকওয়া) অর্জন করা।
চোগলখুরির বৈশিষ্ট্য
কারও কথাকে বিকৃত করে বা বাড়িয়ে অন্যের কাছে বলা।
কারও গোপন কথা ফাঁস করা।
উদ্দেশ্য থাকে অন্যের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা বা স্বার্থসিদ্ধি করা।
অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে দু’জনের মধ্যে বিরোধ তৈরি করা।
চোগলখুরির পরিণাম
সম্পর্ক নষ্ট হয় — বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী বা পরিবারের মধ্যে দূরত্ব ও অবিশ্বাস তৈরি হয়।
অশান্তি ও ঝগড়া হয় — ভুল বোঝাবুঝি থেকে তর্ক, ঝগড়া এমনকি স্থায়ী বিচ্ছেদ হতে পারে।
বিশ্বাস হারিয়ে যায় — যে চোগলখুরি করে, তার প্রতি আর কেউ ভরসা রাখতে পারে না।
মানসিক চাপ বাড়ে — ঝগড়া-বিবাদে সংশ্লিষ্ট সবার মন খারাপ ও মানসিক অশান্তি দেখা দেয়।
সামাজিক ক্ষতি হয় — কর্মক্ষেত্র বা সমাজে শান্তি নষ্ট হয় এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে।
সংক্ষেপে, ইসলামে চোগলখোরী একটি মহাপাপ, যার কারণে কবরের আজাব ও জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই একজন মুসলিমের উচিত নিজের জিহ্বা হেফাজত করা এবং অন্যদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এমন কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা।
চোগলখুরি হলো “ঝগড়া বাঁধানোর কানকথা”, আর এর ফলাফল প্রায় সবসময়ই নেতিবাচক। চোগলখুরি শব্দের অর্থ হলো—কারও বলা কথা বা করা কাজ অন্য কারও কাছে গিয়ে এমনভাবে পৌঁছে দেওয়া, যাতে সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, ঝগড়া বা মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। বাংলায় একে সাধারণভাবে পরনিন্দা বা কানাঘুষা করে ফাটল ধরানো বলেও বোঝানো হয়।
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2025 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.