কে মুমিন? কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত মুমিনদের বৈশিষ্ট্যসমূহ

কে মুমিন? কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত মুমিনদের বৈশিষ্ট্যসমূহ

কে মুমিন? 

মুমিন হলেন বিশ্বাসী ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহিদ), নবী-রাসুলদের রিসালাত (নবুয়ত ও রেসালাত), এবং পরকাল (আখিরাত) ও আল্লাহর বিধি-বিধানের ওপর পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেন। এই বিশ্বাস কেবল মনেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ-নিষেধগুলো মেনে চলার মাধ্যমে বাস্তবেও প্রতিফলিত হয়। 

মুমিনের মূল বৈশিষ্ট্য:

অন্তরের বিশ্বাস: মুমিনের হৃদয় আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত সব বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে। 

আত্ম-সমর্পণ: মুমিন আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন এবং তাঁর প্রতি সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করেন। 

কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ: মুমিন শুধু মুখে নয়, নিজের কথা, কাজ, জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে চেষ্টা করেন এবং তাঁর নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করেন। 

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ: ইমানের মাধ্যমে একজন মুমিন নৈতিক মূল্যবোধ ধারণ করেন এবং মন্দ কাজ ও অভ্যাস থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। 

সংক্ষেপে, মুমিন হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি ঈমান ও সৎ কর্মের সমন্বয়ে আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ত এবং তাঁর অনুগত। 

“মুমিন” শব্দটি এসেছে আরবি "ঈমান" থেকে, যার অর্থ বিশ্বাস বা দৃঢ় আস্থা। ইসলামী পরিভাষায় মুমিন বলতে সেই ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, মুখে স্বীকার করেন এবং কর্মে তার প্রমাণ দেন।


কুরআনে মুমিনের সংজ্ঞা

আল্লাহ বলেন:

“মুমিন তো তারাই, যাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে ভীত হয়, যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে।”

(সূরা আল-আনফাল: ২)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হলো—

আল্লাহর স্মরণে অন্তর ভীত হয়।

কুরআনের আয়াত শুনে ঈমান বৃদ্ধি পায়।

শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করে।


হাদীসে মুমিনের বৈশিষ্ট্য

রাসূল ﷺ বলেছেন:

“মুমিন সে, যার থেকে মানুষের জান-মাল নিরাপদ থাকে। মুসলিম সে, যার হাত ও জিহ্বা থেকে মানুষ নিরাপদ থাকে।”

(তিরমিযি, নাসায়ি)

আরেক হাদীসে এসেছে:

“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি মুমিন, যে নিজের জন্য যা ভালোবাসে, ভাইয়ের জন্যও তাই ভালোবাসে।”

(সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)


মুমিনের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস।

ফরজ ইবাদত যথাযথভাবে আদায় করা।

সত্যবাদী হওয়া।

অন্যের জান-মালের প্রতি সম্মান দেখানো।

দুনিয়ার প্রতি অতি আসক্ত না হয়ে আখিরাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া।


কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত মুমিনদের বৈশিষ্ট্যসমূহ

নিচে কুরআন ও সহিহ হাদীসের আলোকে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য আলাদা তালিকা আকারে দেওয়া হলো:


কুরআনে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য

আল্লাহর স্মরণে অন্তর ভীত হয় – (সূরা আনফাল: ২)

কুরআনের আয়াত শুনলে ঈমান বৃদ্ধি পায় – (সূরা আনফাল: ২)

আল্লাহর উপর ভরসা করে – (সূরা আনফাল: ২)

নামাজ কায়েম করে – (সূরা আনফাল: ৩)

আল্লাহর দেওয়া থেকে ব্যয় করে – (সূরা আনফাল: ৩)

লজ্জাশীলতা ও পরহেযগারিত্বে দৃঢ় – (সূরা মুমিনুন: ১-৫)

অযথা কথাবার্তা থেকে দূরে থাকে – (সূরা মুমিনুন: ৩)

আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে – (সূরা মুমিনুন: ৮)

নামাজ ঠিকমতো হেফাজত করে – (সূরা মুমিনুন: ৯)


হাদীসে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য

মানুষের জান-মাল তার থেকে নিরাপদ থাকে – (তিরমিযি, নাসায়ি)

যা নিজের জন্য ভালোবাসে, ভাইয়ের জন্যও তাই ভালোবাসে – (বুখারি, মুসলিম)

সত্যবাদী হয় – (সহিহ বুখারি)

ভালো চরিত্রের অধিকারী হয় – (মুসলিম)

কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকে – (বুখারি)

দুনিয়ার প্রতি আসক্ত না হয়ে আখিরাতকে অগ্রাধিকার দেয় – (তিরমিযি)

প্রতিবেশীর হক আদায় করে – (বুখারি, মুসলিম)

ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখে – (মুসলিম)

কষ্টের সময় ধৈর্য ধারণ করে এবং সুখে কৃতজ্ঞ হয় – (মুসলিম)


মুমিনের তিনটি গুণ কী কী?

মুমিনের ৩টি গুণাবলী হলো আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস (তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস), নামাজ ও ইবাদতে একাগ্রতা এবং কাজে-কর্মে ও আচরণে ধৈর্যশীলতা ও আত্মসংযম। এছাড়াও, মুমিনদের মধ্যে পারস্পরিক আন্তরিকতা, আমানত রক্ষা, সত্যবাদিতা ও উত্তম চরিত্রসহ অন্যান্য অনেক ভালো গুণাবলী বিদ্যমান থাকে। 


মুমিনের তিনটি প্রধান গুণ

কুরআন ও হাদীসে মুমিনের অনেক বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। তবে সংক্ষেপে মুমিনের তিনটি মৌলিক গুণ হলো:

অন্তরে ঈমান রাখা – আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা।

আল্লাহ বলেন:

“মুমিন তো তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর কোনো সন্দেহ পোষণ করে না।”

(সূরা হুজরাত: ১৫)

জিহ্বায় স্বীকার করা – কালিমা তায়্যিবা উচ্চারণ করা এবং মুখে ঈমানের সাক্ষ্য প্রদান করা।

কর্মে প্রমাণ করা – নামাজ, রোজা, সৎকাজ, সত্যবাদিতা ও আল্লাহর পথে আমল দ্বারা ঈমানকে জীবন্ত রাখা।


রাসূল ﷺ বলেছেন:

“মুমিন সে-ই, যার থেকে মানুষের জান ও মাল নিরাপদ থাকে।”

(তিরমিযি)


সংক্ষেপে:

মুমিনের তিনটি গুণ হলো —

অন্তরে বিশ্বাস,

মুখে স্বীকারোক্তি,

আমলে প্রমাণ।


মুমিনের প্রধান গুণাবলী:

সুদৃঢ় ঈমান ও বিশ্বাস: মুমিন হতে গেলে আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকালে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য। এই বিশ্বাস শুধু মুখে নয়, অন্তরে ধারণ করতে হয়। 

ইবাদতে একাগ্রতা ও বিনয়: মুমিনরা নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতসমূহ অত্যন্ত মনোযোগ ও বিনয়ের সাথে আদায় করে থাকে। তারা আল্লাহর স্মরণে সুখে-দুঃখে আল্লাহর প্রশংসা করে। 

ধৈর্য ও আত্মসংযম: মুমিনরা যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে এবং অনর্থক কথা ও কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। তারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং আত্মসংযমী হয়। 


অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী:

সত্যবাদিতা: মুমিনরা সবসময় সত্য কথা বলে। 

আমানত রক্ষা: তারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলে। 

উত্তম চরিত্র: মুমিনদের মধ্যে উত্তম চরিত্র ও পরোপকারী মনোভাব বিদ্যমান থাকে। 

পারস্পরিক ভালোবাসা: তারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরের সাথে আন্তরিক ভালোবাসা ও সম্পর্ক তৈরি করে। 

আত্মশুদ্ধি: শক্তিশালী মুমিনরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে এবং নিজেদের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যদের সংশোধনের চেষ্টা করে। 


সংক্ষেপে

একজন প্রকৃত মুমিন হলো তিনি, যিনি অন্তরে বিশ্বাস রাখেন, মুখে সাক্ষ্য দেন এবং আমলের মাধ্যমে ঈমানকে জীবন্ত রাখেন। সংক্ষেপে

যে অন্তরে ঈমান রাখে,মুখে ঈমানের সাক্ষ্য দেয়, এবং কাজের মাধ্যমে ঈমানকে বাস্তবে প্রমাণ করে সেই ব্যক্তি হলো মুমিন ।