সূরা আল-মুজাদালাহ এর ফজিলত

সূরা আল-মুজাদালাহ এর ফজিলত

সূরা আল-মুজাদালাহ (সূরা ৫৮) কুরআনের একটি বিশেষ সূরা, যা মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার, আল্লাহর বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে। এই সূরার প্রধান বিষয়বস্তু হচ্ছে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, জীবনের বিভিন্ন সমস্যায় তাঁর ওপর ভরসা করা এবং পারিবারিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। 

অসুস্থ ব্যক্তির কাছে সূরা আল-মুজাদিলা পাঠ করলে তার অসুস্থতা থেকে সেরে যাবে। মাটিতে পুঁতে রাখা কোন কিছুর উপর তেলাওয়াত করা হলে তা সুরক্ষিত থাকবে যতক্ষণ না ব্যক্তি নিজে তা অপসারণ করে। এই সূরাটি তেলাওয়াত করলে একজন অস্থির মানুষের মনে স্বস্তির অনুভূতি আসে।

সূরা আল-মুজাদালাহর ফজিলত ও উপকারিতা নিম্নরূপ:

১. আল্লাহর প্রতি ভরসা বৃদ্ধি করা

এই সূরার প্রথম অংশে এক মহিলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাঁর কষ্ট শোনেন এবং উত্তর দেন। এটি আমাদের শেখায় যে, আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি তাঁর বান্দাদের কষ্ট অনুভব করেন। এটি পাঠ করলে মানুষের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং তাঁর ওপর ভরসা বৃদ্ধি পায়।

২. পারিবারিক সম্পর্ক ও ন্যায়বিচারের গুরুত্ব

সূরায় একজন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অসদাচরণের বিষয়টি নিয়ে আল্লাহর নির্দেশ এসেছে এবং এটিকে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই নির্দেশনার মাধ্যমে পারিবারিক জীবনে ন্যায়বিচার ও সম্মানের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।

৩. গোপন পরামর্শ ও গীবতের প্রতি সতর্কতা

সূরা আল-মুজাদালাহতে গোপন বৈঠক, গীবত এবং মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রের নিন্দা করা হয়েছে। এটি মানুষকে সতর্ক করে যে, কাউকে পিছনে অপবাদ দেওয়া বা ষড়যন্ত্র করা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং আল্লাহ এসব কার্যকলাপ পছন্দ করেন না।

৪. আল্লাহর উপস্থিতির বোধ

এই সূরায় বারবার বলা হয়েছে যে, আল্লাহ সর্বদা আমাদের সাথে আছেন এবং সবকিছু দেখছেন ও শুনছেন। এটি মানুষের অন্তরে আল্লাহর প্রতি সজাগ দৃষ্টি এবং তাঁর উপস্থিতির বোধ বৃদ্ধি করে। এটি আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বিরত রাখতে সহায়ক।

৫. মুমিনদের মর্যাদা বৃদ্ধি

এই সূরায় আল্লাহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, যারা ঈমান এনেছে এবং জ্ঞান অর্জন করেছে, তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। এটি মুমিনদের জ্ঞান অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করে এবং আল্লাহর কাছে তাদের উচ্চ মর্যাদার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

৬. মুনাফিকদের সতর্কবাণী

সূরায় মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র এবং তাদের দুষ্ট পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে এবং তাদের শাস্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটি মানুষকে মুনাফিকী থেকে সতর্ক হতে এবং সৎ ও ন্যায়পরায়ণ জীবনযাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে।

৭. আখিরাতে পুরস্কারের আশা

সূরা আল-মুজাদালাহ পাঠ করলে মানুষ আখিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের আশা করতে পারে। এই সূরায় উল্লেখ আছে যে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করবে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তম পুরস্কার রয়েছে।

৮. কষ্ট ও সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ

এই সূরার মাধ্যমে আমরা শিখি যে, জীবনের যেকোনো সমস্যা ও কষ্টের সমাধানের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। যারা সত্যিকারের মুমিন, আল্লাহ তাদের কষ্ট দূর করেন এবং তাদের সাহায্য করেন।

সারাংশে, সূরা আল-মুজাদালাহ মানুষকে আল্লাহর বিধান অনুসরণ করতে, পারিবারিক জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে এবং মুনাফিকী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। এটি মানুষকে আল্লাহর ওপর ভরসা করতে শেখায় এবং ঈমানদারদের জন্য আখিরাতে উত্তম পুরস্কারের আশা প্রদান করে।