Tahajjud Prayer Bangla-রাসূল সাঃ এর তাহাজ্জুদ নামায
তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, রাকাআত,নিয়ত
তাহাজ্জুদ শব্দটি আরবি শব্দ। এর অর্থ নিদ্রিত হওয়া ও জাগ্রত হওয়া। এই শব্দটি দুটি পরস্পর বিরোধী অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কে বিখ্যাত তাবাঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন—
هو ما كان بعد العشاء ويحمل على ما كان بعد الثوم -
অর্থাৎ যে সমস্ত নামায ইশার নামাযের পর পড়া হয় তাকেই বলে তাহাজ্জুদ নামায। তবে নিয়ম অনুযায়ী কিছুক্ষণ নিদ্রিত থাকার পর নামায পড়াকে বুঝায়।
অন্য এক হাদীসে তাহাজ্জুদের পরিচয় এভাবে এসেছে—
وما كان بعد صلوة العشاء فهو من الليل -
অর্থাৎ ইশার নামাযের পর যে নামায পড়া হয় তাই তাহাজ্জুদের অন্তর্ভুক্ত।
কুরআন-হাদীসে তাহাজ্জুদ নামাযকে “নাশিআ’তাল লাইল” ও “কিয়ামুল লাইল” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে রাতের বেলায় নামাযের জন্য দাঁড়ানো।
তাহাজুল নামায সুন্নাত, কিন্তু ফরজ নামাযের পর সর্বাধিক কল্যাণকর নামায। অন্যান্য নবীদের আমলেও এই নামযের আমল ছিল। ইসলামের প্রাথমিক কালে এই নামায ফরজ ছিল। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন—
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ
قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا
نِّصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا
أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
" হে বস্ত্রাবৃত! রাতে জাগ্রত হউন, কিছু অংশ ব্যতীত। অর্ধেক রাত কিংবা তার চেয়ে। ” অথবা তার চেয়ে বেশি। আল-কুরআন আবৃত্তি করুন ধীরে ধীরে, স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে। (সূরা মুযাম্মেলঃ ১-৪)
এই আয়াত কুরআন অবতরণের প্রারম্ভিক পর্যায়ে নাযিল হয়েছে। তখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ ছিল না। এই আয়াতের প্রারম্ভে ‘কুমিল্ লাইলা’ বলে রাসূল (সাঃ) ও সমস্ত মুসলমানের জন্য তাহাজ্জুদ নামাযকে ফরজ করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তাতে কমপক্ষে রাতের এক চতুর্থাংশ জাগ্রত থাকা জরুরি ছিল। এজন্য ইমাম বাগাভী (রঃ) বলেন, এই আয়াতের আলোকে নিশীথ রাতের নামাজ রাসূল (সাঃ) ও সমস্ত মুসলিমের জন্য আবশ্যক ছিল। তবে এই নির্দেশ কার্যকর ছিল পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ে ।
ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদেকের আগ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া যায়। তবে মধ্য রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা সর্বোত্তম।
বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় তাহাজ্জুদ নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়। সর্ব নিম্ন ২ রাকাআত ও সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত। প্রিয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়াই উত্তম। তবে এটা পড়া বাধ্যতামূলক নয়।
সম্ভব হলে ১২ রাকাআত না পারলে ৮ রাকাআত তাও সম্ভব না হলে ৪ রাকাআত আদায় করতে হবে। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে ২ রাকাআত হলেও তাহাজ্জুদ আদায় করতে হবে।
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ - اَللهُ اَكْبَر
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছোয়াল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাতাই ছলাতিত তাহাজ্জুদী সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর ।
বাংলায়: আমি আল্লাহর অয়াস্তে কেব্লার দিকে মুখ করিয়া তাহাজ্জুদের দু-রাকাত সুন্নাত নামাজের নিয়ত করিলাম।
হাদীস ও সীরাত গ্রন্থগুলো থেকে দেখা যায়, রাসূল (সাঃ) সর্বদাই ইবাদত, যিকির ওদু’আ পাঠে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর প্রত্যেক কথা-বার্তা, চিন্তা-ভাবনায়, আচার-আচরণে আল্লাহর যিকির প্রকাশ পেত। এজন্য বিশেষ কোন সময় তাঁর ইবাদতের জন্য বা দু’আর জন্য নির্ধারিত ছিল না। তবে বিশেষ বিশেষ কল্যাণপ্রদ মুহূর্তে দু’আ করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁর অনুসারীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টির জন্য তিনি নিজেও তার উপর আমল করতেন। এরূপ অন্যতম একটি হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামায। হাদীস শরীফের একাধিক স্থানে যার কল্যাণ বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূল (সাঃ) ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে কি কি দুআ পাঠ করতেন তা নিম্নের হাদীস থেকে বুঝা যায়।
হযরত আসিম ইবনে হুমাইদ (রাঃ) বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাঃ) রাতে কী বলে নামায শুরু করতেন? তিনি বললেন, তুমি এমন বিষয়ে প্রশ্ন করেছ যা ইতিপূর্বে কেউ করেনি। রাসূল (সাঃ) ১০ বার আল্লাহু আকবার বলতেন, ১০ বার আলহামদু লিল্লাহ, ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার লা ইলাহা ইলালাহ এবং ১০ বার ‘আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন। তারপর বলতেন, “আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী ওয়া আযীনী, আউযু বিল্লাহি মিন অফিল মাকামি ইয়াওমাল কিয়ামাহ (হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, সুপথ দেখান, আহার্য দান করুন এবং সুস্থতা দান করুন। মহাপ্রলয় দিনের কঠোরতা হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।) (নাসাঈ)
হযরত রাবীয়াহ ইবনে কাব (রাঃ) বলেছেন—আমি নবী (সাঃ)-এর হুজরার পাশে রাত অতিবাহিত করতাম। সেই সময়ে তিনি নামায পড়তে দাঁড়ালে শুনতে পেতাম দীর্ঘক্ষণ যাবৎ বলছেন, “ছুবহানাল্লাহি রাব্বিল আলামীন” তারপর দীর্ঘক্ষণ যাবত বলতেন, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন--রাসূল (সাঃ) ঘুম থেকে উঠে বসে হাত দিয়ে মুখমণ্ডলের ঘুমের আবেশ মুছে ফেলতেন তারপর সূরা আল ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করতেন। (আবু দাউদ)
এভাবে রাসূল (সাঃ) তাহাজ্জুদের সময় তাসবীহ তাহলীল, যিকির আযকার ও বিভিন্ন দুআ পাঠ করতেন। তিনি আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য এবং তাঁর উম্মতের সুখ সমৃদ্ধি ও সৎপথ প্রদর্শনের জন্য দোয়া করতেন।
তাহাজ্জুদ নামায সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। রাসূল (সাঃ) ইচ্ছাকৃতভাবে এই নামায় ত্যাগ করেননি। এই নামায দুই রাকাত করে পড়াই উত্তম। রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামগণ এভাবেই পড়েছেন।
রাসূল (সাঃ) রাতে জাগ্রত হওয়ার পর মিসওয়াক করে অযু করতেন। নিদ্রা থেকে উঠেই তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতেন। অযু করার পর রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত বিনয়, নম্র ও প্রেম বিগলিত চিত্তে মুসাল্লায় দাঁড়িয়ে দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত তাহিয়্যাতুল অযুর নামায আদায় করতেন।
রাসূল (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাযে দাঁড়িয়ে কখনো একটি আয়াতই বার বার পাঠ করতে করতে রাত কাটিয়ে দিতেন। আবার কখনো একাধিক সূরা যেমন—সূরা বাকার, মায়েদা, ইমরান, নিসা একত্রে পাঠ করতেন। এমনকি তাঁর এই দীর্ঘ কিরাতে বিরক্ত হয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ নামায ছেড়ে দিতেও স্থির করতেন। আবার দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর ক্বিরাত শেষ করে রুকু সাজদা করতেন। এই রুকু সাজদায়ও তিনি অনেক সময় ব্যয় করতেন। তাহাজ্জুদ নামাযে রাসূল (সাঃ)-এর কিয়াম, ক্বিরাত, রুকু ও সিজদার সময় প্রায় একই রকম ছিল। এভাবে তিনি দুই রাকাত নামায শেষ করতেন। দুই রাকাত দীর্ঘ নামায শেষ করায় তিনি কখনো ঘুমিয়ে যেতেন, আবার কখনো পুনরায় নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন।
রাসূল (সাঃ)-এর ক্বিরাত ছিল মাঝারি ধরনের, খুব জোরেও নয় আবার আস্তেও নয়। উচ্চারণের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না। প্রতিটি আয়াতকে তিনি ধীরে টেনে টেনে, গূঢ় অর্থের প্রতি মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করতেন। বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, কুরআনের আয়াত তিলাওয়াতের সময় যদি আল্লাহর শাস্তির কথা উল্লেখ থাকত তাহলে তিনি থেমে গিয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতেন।
তিনি রুকুতে গিয়ে দু’আ পড়তেন, রুকু থেকে উঠে দু’আ পড়তেন, সিজদায় গি দু’আ পড়তেন এবং সেজদা থেকে উঠেও দু’আ পড়তেন। আর প্রতিটি দু’আর মাঝে ফুটে উঠেছে গভীর আত্মনিবেদনের সুর, প্রভুর নিকট অনুগত দাসের সবিনয় আনুগত্য।
এভাবে রাসূল (সাঃ) দুরাকাত থেকে আট রাকাত পর্যন্ত নামায পড়তেন। আবার চার রাকাত পড়ার কথাও কোন কোন জায়গায় পরিলক্ষিত হয়। তবে কখনো দুই রাকাতের কম এবং বারো রাকাতের বেশি পড়েননি।
তাহাজুদ নামায সহজভাবে পড়ার নিয়ম এই যে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করা। আর যারা লম্বা ক্বিরাত মুখস্ত পারেন তাদের জন্য লম্বা ক্বিরাত পাঠ করাই উত্তম।
নামায আদায় করার পর কতিপয় অযিফা পাঠ করলে খুবই সাওয়াব পাওয়া যায়।
১। নামায শেষে এই দোয়া একশো বার পাঠ করবে—
رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ
উচ্চারণ: রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাস সামিউল আলীম
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের এই কাজটি কবুল করুণ। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৭)
২। নিম্নের দুআ একশোবার পাঠ করবে
رَبَّنَا أَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَ فِى الْأَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতও ওয়াক্বিনা আজাবান নার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০১)
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে নাজাত দান করুন।’
৩। নিয়ে দু’আ একশো বার—
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন।
অর্থ : আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী। -সূরা আল আম্বিয়া : ৮৭
-----------
tags:
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া, তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজ কয় রাকাত, তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত না নফল, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত, তাহাজ্জুদ নামাজের সময়, তাহাজ্জুদ, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত, তাহাজ্জত নামাজের সময়, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত, তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত, তাহাজ্জুত নামাজের নিয়ত,
tahajjud, tahajjud prayer, tahajjud prayer english, tahajjud prayer step by step, night prayer, how to perform tahajjud prayer, useful tips for fajr & tahajjud (night prayer), pray tahajjud, prayers, prayer at night (tahajjud), after tahajjud, in tahajjud, how to pray tahajjud namaj, tahajjud dua, tahajjud namajer rakat, the five prayers, tahajud, tahajjud pray according to sunnah, solat tahajjud, dua for tahajjud, dua at tahajjud, prayers unanswered