সূরা আল-ক্বিয়ামাহ এর ফজিলত

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ এর ফজিলত


সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (سورة القيامة) হলো পবিত্র কুরআনের ৭৫তম সূরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে মোট ৪০টি আয়াত রয়েছে। এই সূরার মূল বিষয় হলো কিয়ামত দিবসের বর্ণনা এবং মানুষের পুনরুত্থান।

এই সূরাটি কেয়ামত সম্পর্কে সন্দেহের অবসান ঘটিয়েছে। এই সূরায় বলা হয়েছে আগে কাফেরেরা ভাবত আমরা তো মরার পর পঁচে গলে যাব। তাহলে আল্লাহ তায়ালা কীভাবে আবার সৃষ্টি করবেন? কিন্তু কুরআনে বলা হয়েছে যে,আল্লাহ তায়ালা তাদের আঙ্গুলগুলো পর্যন্ত সন্নিবেশন করতে সক্ষম।

এই সূরা তেলাওয়াত রিযিক বৃদ্ধি করে এবং তেলাওয়াতকারীর জান ও মাল রক্ষা করে। তাকে মানুষ পছন্দ করে। সূরা আল-কিয়ামাহ একজন ব্যক্তিকে পবিত্র, বিনয়ী এবং আন্তরিক করে তোলে। যে পানিতে এই সূরাটি লেখা হয়েছে তা পান করলে তা হৃৎপিণ্ডকে অসুস্থতা থেকে নিরাপদ রাখে।

এই সূরায় আল্লাহ কিয়ামত ও পরকাল অস্বীকারকারীদের সম্বোধন করেছেন। এই সূরাটির ওজন এতটাই যে, মানুষের মনের সন্দেহ দূর করার জন্য আল্লাহ আল-কিয়ামাহ দ্বারা শপথ করেন এবং তারপরে দোষী ব্যক্তিদের দ্বারা আরেকটি শপথ করেন, বাস্তবতা, অনিবার্যতা এবং সত্যের উপর জোর দেওয়ার জন্য।


সূরা আল-ক্বিয়ামাহ-এর প্রধান বিষয়বস্তু:


কিয়ামতের দৃশ্য ও ভয়াবহতা:

সূরার শুরুতেই আল্লাহ শপথ করেন কিয়ামতের দিনের এবং মানুষের অন্তরের আত্মগ্লানির ওপর।

কিয়ামতের দিন মানুষ তার সকল কাজের হিসাব দিতে বাধ্য হবে।


পুনরুত্থান ও আল্লাহর শক্তি:

এই সূরায় আল্লাহর পুনরুত্থানের ক্ষমতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন যে, তিনি মানুষের হাড়গোড় পুনরায় সংযোজিত করতে সক্ষম এবং তার আঙুলের ছাপ পর্যন্ত ফিরিয়ে দিতে পারেন।


মানুষের অবহেলা ও আখিরাতের প্রস্তুতি:

মানুষ সাধারণত দুনিয়ার জীবনে ব্যস্ত থাকে এবং আখিরাতের বিষয়ে গাফিলতি করে।

কুরআন শেখার সময় নবীজীকে ধীরে ধীরে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম হয়।


সূরা আল-ক্বিয়ামাহ-এর ফজিলত:


আখিরাতের স্মরণ ও অনুপ্রেরণা:

এই সূরা তিলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা ও আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতি অন্তরে জাগ্রত হয়।

এটি মানুষের মধ্যে তাওবার প্রতি আগ্রহ এবং সৎকর্মে আত্মনিয়োগের উৎসাহ জোগায়।


আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ থেকে বিরত থাকার শিক্ষা:

নিয়মিত এই সূরা পাঠ করলে অন্তরে আত্মশুদ্ধি হয় এবং পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার প্রেরণা পাওয়া যায়।


হাদিসে উল্লেখিত ফজিলত:

একাধিক হাদিসে কিয়ামতের দিনের প্রস্তুতির জন্য এই সূরার আয়াতগুলো বারবার তিলাওয়াতের গুরুত্ব এসেছে।

হযরত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে এই সূরা তিলাওয়াত করতেন এবং অন্যদেরও তা পাঠ করতে উৎসাহিত করতেন।


কবরের শাস্তি ও জাহান্নামের ভয় থেকে মুক্তি:

এই সূরা মানুষকে কবরের শাস্তি এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে সতর্ক করে, যা তাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়ক করে।


উপসংহার:

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ আমাদের কিয়ামতের দিনের প্রতি গভীর সচেতনতা তৈরি করে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানায়। এটি তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং নিজের কর্মগুলো পুনর্মূল্যায়ন করতে পারি।