সূরা আস সাফফাত এর ফজিলত
সূরা আস ছাফ্ফাত (সূরা নম্বর ৩৭) হলো মক্কায় অবতীর্ণ একটি সূরা, যার ১৮২টি আয়াত রয়েছে। এটি আল্লাহর একত্ববাদ, নবীদের কাহিনী, এবং পরকালের শাস্তি ও পুরস্কার সম্পর্কে আলোচনা করে। "ছাফ্ফাত" শব্দের অর্থ হলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো, যা সূরার প্রথম আয়াতে ফেরেশতাদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর বিষয়টি বোঝানো হয়েছে।
"যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবার সূরা আস সাফফাত পাঠ করবে, সে সমস্ত দূষণ ও রোগ থেকে রক্ষা পাবে এবং তার পার্থিব জীবন থেকে সমস্ত দূষণ দূর করে দেবে এবং আল্লাহ তাকে প্রচুর রিযিক দান করবেন এবং তিনি তাকে, তার সন্তানদেরকে কষ্ট দেবেন না। এবং তার শরীর অভিশপ্ত শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
এই সূরার মূল বিষয় হল একেশ্বরবাদ, মুশরিকদের সতর্ক করা এবং মুমিনদের সুসংবাদ দেওয়া। এই সূরায় ইসমাঈল (আ.) কুরবানীর কাহিনী এবং নূহ (আ.), ইব্রাহিম (আ.), ইসহাক (আ.), মূসা (আ.), আওরন (আ.) সহ নবীদের (আ.) ইতিহাসের কিছু অংশ। ), ইলিয়াস (আ), লুত (আ) এবং ইউনাহ (আ) উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সূরার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত এবং শিক্ষা রয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য ফজিলত তুলে ধরা হলো:
১. আল্লাহর একত্ব ও ফেরেশতাদের গুণাবলী:
সূরার শুরুতে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর এবং তাদের আনুগত্যের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তারা সারিবদ্ধ হয়ে আল্লাহর আদেশ পালন করে এবং আল্লাহর প্রশংসা করে। এতে মুমিনদের আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস এবং আনুগত্যের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
২. নবীদের কাহিনী এবং শিক্ষণীয় দিক:
সূরায় বিভিন্ন নবীর কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে ইবরাহীম (আ.)-এর কাহিনী। তিনি আল্লাহর নির্দেশে নিজের পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। এতে আমরা আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার শিক্ষাটি পাই।
"অতঃপর যখন তারা উভয়ে আত্মসমর্পণ করলেন এবং তিনি তাকে কোরবানির জন্য শায়িত করলেন..." (৩৭:১০৩)
এই কাহিনির মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ পালন এবং কুরবানি দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে শিক্ষা পাওয়া যায়।
৩. মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ:
সূরায় আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্য জান্নাতের সুখময় জীবনের সুসংবাদ দিয়েছেন। যারা এই দুনিয়ায় আল্লাহর আদেশ মেনে চলে, তাদের জন্য জান্নাতে অনেক নেয়ামত অপেক্ষা করছে। এটি মুমিনদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং আশা জাগিয়ে তোলে।
"তাদের জন্য থাকবে জান্নাতে ফলমূল, এবং তারা হবে সম্মানিত।" (৩৭:৪২)
৪. শিরক এবং মুশরিকদের পরিণতি:
সূরায় শিরক অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করার ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে। মুশরিকদের পরকালে ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা মুমিনদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
"তোমরা এবং তোমরা যাদের উপাসনা করো, তারা জাহান্নামের জ্বালানি হবে।" (৩৭:২২-২৩)
এ আয়াতের মাধ্যমে শিরকের কুফল এবং এর থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
৫. কুরআন এবং সত্যের পথে দৃঢ়তা:
সূরায় আল্লাহ কুরআনের সত্যতা এবং এতে যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে তা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা কুরআনের পথে চলে, তারা সঠিক পথে রয়েছে এবং তাদের জন্য আখিরাতে পুরস্কার রয়েছে।
৬. শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া:
এই সূরায় শয়তানের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে মুমিনদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শয়তান মানুষকে বিপথে পরিচালনা করতে চায়, কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে, তাদের শয়তান কিছুই করতে পারে না। শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে।
৭. ইবরাহীম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর আত্মত্যাগ:
ইবরাহীম (আ.)-এর আত্মত্যাগ এবং আল্লাহর আদেশ পালন করার ঘটনা থেকে আমরা আল্লাহর প্রতি নিরঙ্কুশ বিশ্বাস এবং তাঁর আদেশের প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা পাই। ইবরাহীম (আ.) এবং ইসমাইল (আ.) উভয়েই আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করেন, যা মুমিনদের জন্য আদর্শ।
উপসংহার:
সূরা আস ছাফ্ফাত মুসলিমদের আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, শিরক থেকে বাঁচা, এবং নবীদের অনুসরণ করার ব্যাপারে শিক্ষা দেয়। এই সূরা আমাদেরকে আল্লাহর পথে অবিচল থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করে এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের প্রতি মনোযোগী হতে নির্দেশ দেয়।
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2024 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.