সূরা ফাতির এর ফজিলত

সূরা ফাতির এর ফজিলত

সূরা ফাতির (সূরা নম্বর ৩৫) একটি মক্কী সূরা, যার মোট ৪৫টি আয়াত রয়েছে। এই সূরাটি আল্লাহর শক্তি, সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা এবং কৃতজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত শিক্ষা প্রদান করে। "ফাতির" শব্দের অর্থ হলো "সৃষ্টিকর্তা," এবং এই সূরায় আল্লাহর সৃষ্টির বিস্ময়কর দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। 

সূরা ফাতির যারা এটি পাঠ করে তাদের স্বর্গীয় সুরক্ষা প্রদান করে বলে বিশ্বাস করা হয়। আপনি যদি রাতে সূরা সাবা এবং সূরা ফাতির পাঠ করেন তবে বলা হয় যে আপনি সারা রাত খোদায়ী সুরক্ষায় থাকবেন। একইভাবে সকালে এই দুটি সূরা পাঠ করলে সারাদিন রক্ষা পাওয়া যায়।

মানবজাতিকে শয়তানের প্রতারণা এবং বিপথগামী জীবন সম্পর্কে সতর্ক করে। এই সূরাতে ঈশ্বরের আশীর্বাদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটি লোকেদেরকে প্রার্থনা করার, আল্লাহর জন্য ব্যয় করার এবং কোরআন তেলাওয়াতকে মূল্যবান কাজ হিসাবে সুপারিশ করেছে।

সূরা ফাতিরের মূল বিষয়বস্তু হল “তাওহীদ”, যার অর্থ আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস করা। এটি ঈমানের প্রথম এবং প্রধান প্রবন্ধ এবং ইসলামের মৌলিক স্তম্ভ; যেখানে “শিরক” বা শিরক করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য পাপ।


সূরা ফাতিরের কিছু বিশেষ ফজিলত ও শিক্ষা নিম্নরূপ:

১. আল্লাহর একত্ব ও সৃষ্টিকর্তার পরিচয়:

সূরা ফাতির আল্লাহর একত্ববাদ ও সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করে। আল্লাহ বলেন:

"সকল প্রশংসা আল্লাহর, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, যিনি ফেরেশতাদেরকে দূত করেছেন, দুই, তিন ও চার পাখাওয়ালা। তিনি তাঁর সৃষ্টিতে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।" (৩৫:১)

এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর সৃষ্টির বিস্ময়কর দিক তুলে ধরা হয়েছে।


২. আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার আশা:

সূরা ফাতিরে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য রহমত ও ক্ষমার বার্তা দেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে বলে দেন যে, যদি তারা সৎ কাজ করে এবং তাঁর পথে ফিরে আসে, তবে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন।

"যে কেউ পূণ্য কাজ করে, তার জন্য দশগুণ পুরস্কার রয়েছে, এবং যে মন্দ কাজ করে, তার জন্য কেবল ততটুকুই প্রতিদান দেয়া হবে, যতটুকু সে করেছে। আর তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।" (৩৫:৩২)

এই আয়াত মুমিনদের জন্য আল্লাহর রহমতের প্রতিশ্রুতি বহন করে এবং ক্ষমার আশা জাগিয়ে তোলে।


৩. শয়তানের ধোঁকা ও তার থেকে বাঁচার উপায়:

এই সূরায় আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে দেন শয়তানের ধোঁকা থেকে, কারণ শয়তান সবসময় মানুষকে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। আল্লাহ বলেন:

"নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তাকে শত্রু হিসেবেই নাও। সে তার অনুসারীদের আহ্বান জানায়, যাতে তারা জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যায়।" (৩৫:৬)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, শয়তান মানুষের শত্রু, এবং তার প্ররোচনা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।


৪. কৃতজ্ঞতা ও আল্লাহর নেয়ামতের পরিচয়:

সূরা ফাতিরে আল্লাহ তাঁর নেয়ামত ও সৃষ্টিকর্মের বিবরণ দেন এবং মানুষকে সেগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে বলেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের সৃষ্টি এবং তাঁদের উপর আল্লাহর নিয়ামত বর্ণনা করেন:

"যে কোনো নেয়ামত তোমাদের কাছে আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে..." (৩৫:১৫)

এই আয়াত মানুষের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের স্মরণ করিয়ে দেয় এবং কৃতজ্ঞ হতে শেখায়।


৫. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত করার শিক্ষা:

আল্লাহ বান্দাদেরকে তাঁর পথে থাকার আহ্বান জানান এবং জানিয়ে দেন যে, যারা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে, তাদের জন্য উত্তম পুরস্কার রয়েছে। এ কারণে মুমিনদের উচিত আল্লাহর পথে অবিচল থাকা এবং তাঁকে স্মরণ করা।


৬. পরকালের পুরস্কার ও শাস্তির বর্ণনা:

সূরা ফাতিরে আল্লাহ দুনিয়ার জীবনের সাময়িকতা এবং আখিরাতে স্থায়ী পুরস্কার ও শাস্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। যারা আল্লাহর পথে চলে এবং সৎকর্ম করে, তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।


৭. জ্ঞানীদের মর্যাদা:

এই সূরায় জ্ঞানীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

"আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবলমাত্র জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে।" (৩৫:২৮)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, যারা প্রকৃতভাবে আল্লাহ সম্পর্কে জানে এবং তাঁর সৃষ্টির রহস্য উপলব্ধি করে, তারা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলে।


উপসংহার:

সূরা ফাতির আল্লাহর সৃষ্টিকর্তার পরিচয়, রহমত, এবং মানুষের জীবনে তাঁর নেয়ামতের গুরুত্ব সম্পর্কে গভীর শিক্ষা প্রদান করে। এটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আল্লাহর পথে থাকার এবং শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার উপর। এছাড়া, এই সূরায় আল্লাহর অসীম ক্ষমতা এবং বান্দাদের প্রতি তাঁর রহমত ও দয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা মুমিনদের ঈমান আরও মজবুত করতে সহায়ক।