সূরা সাবা এর ফজিলত

সূরা সাবা এর ফজিলত

সূরা সাবা (সূরা নম্বর ৩৪) পবিত্র কুরআনের একটি মক্কী সূরা, যার ৫৪টি আয়াত রয়েছে। এই সূরায় আল্লাহ তাআলা তাঁর একত্ববাদ, নবীদের পাঠানোর উদ্দেশ্য এবং পরকাল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া, সূরায় সাবা সম্প্রদায়ের কাহিনী উল্লেখিত হয়েছে, যারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা দেখিয়েছিল।

এই সূরাটি পাঠ করার সওয়াব এত বেশি যে, আমলনামায় তা দেখলেই তিলাওয়াতকারীর মন আনন্দে ভরে যায়। এই সূরা হৃদয় থেকে ভয় দূর করে এবং শত্রু ও বন্য পশুদের থেকে নিরাপদ রাখে।

এই সূরার কিছু ফজিলত নিচে দেওয়া হলো:


১. আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা:

সূরাটি মানুষকে আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে উৎসাহিত করে। সাবা সম্প্রদায় আল্লাহর দেওয়া প্রচুর নিয়ামত পেয়েছিল, কিন্তু তাঁরা অকৃতজ্ঞ ছিল। এর ফলে তাদের ওপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে। এই কাহিনী থেকে শিক্ষা নেওয়া যায় যে, আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


২. দুনিয়া এবং আখিরাতের মধ্যে সম্পর্ক:

এই সূরায় আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাঁরা দুনিয়ার সাময়িক জীবনে মোহগ্রস্ত না হয়ে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিক। আল্লাহ বলেন:

“যারা এই দুনিয়ার জীবনকে ভালোবাসে, তারা আখিরাতের কথা ভুলে যায়, কিন্তু তাদের কাজগুলো নিষ্ফল।” (৩৪:৩৭)

এ থেকে বোঝা যায়, মুমিনদের উচিত আখিরাতের কথা স্মরণ রেখে দুনিয়ার কাজ করা।

৩. নবী সুলায়মান (আ.) ও দাউদ (আ.)-এর কাহিনী:

সূরায় নবী সুলায়মান (আ.) এবং দাউদ (আ.)-এর কাহিনী উল্লেখ করা হয়েছে, যারা আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ নেয়ামত পেয়েছিলেন। তাঁরা সেই নেয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন এবং আল্লাহর আদেশ মেনে চলতেন। এই কাহিনী থেকে শিক্ষা পাওয়া যায় যে, আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের যথাযথ ব্যবহার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।


৪. আল্লাহর শক্তি এবং জ্ঞান:

সূরায় বারবার উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর জ্ঞান এবং ক্ষমতা সীমাহীন। তিনি সবকিছু সম্পর্কে অবগত এবং মানুষের প্রকাশ্য ও গোপন কাজের খবর রাখেন। ৩৪:৪৮ আয়াতে বলা হয়েছে:

"বলুন, আমার রব সত্যকে নাজিল করেন। তিনি সর্বজ্ঞ, পরিপূর্ণভাবে অবগত।"

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা মুমিনদের জন্য আবশ্যক।


৫. পরকালে বিশ্বাস:

সূরায় বারবার পরকালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন যাপনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। পরকালের পুরস্কার ও শাস্তির বাস্তবতা থেকে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে, যাতে তারা আল্লাহর রাস্তা থেকে বিচ্যুত না হয়।


৬. মুমিনদের জন্য প্রতিশ্রুতি:

সূরাটিতে মুমিনদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যারা ঈমান আনবে এবং সৎ কাজ করবে, তাদের জন্য আল্লাহ আখিরাতে পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। এই প্রতিশ্রুতি মুমিনদের জন্য আশার বাণী বহন করে এবং তাদের ঈমান মজবুত করে।


উপসংহার:

সূরা সাবা দুনিয়ার জীবনের সাময়িকতা, আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা, এবং আখিরাতের শাস্তি ও পুরস্কার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে। এটি মানুষের জীবনে আধ্যাত্মিকতা এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত্যের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে।