সূরা আন নম্‌ল এর ফজিলত

সূরা আন নম্‌ল এর ফজিলত

সূরা আন-নাম্‌ল কুরআনের ২৭তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরায় ৯৩টি আয়াত রয়েছে, এবং এটি মূলত নবী সোলাইমান (আঃ) ও অন্যান্য নবীদের কাহিনী নিয়ে আলোচনা করে। এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সৃষ্টির নিদর্শন ও কুদরতের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। সূরা আন-নাম্‌লের বেশ কিছু ফজিলত এবং গুরুত্ব রয়েছে, যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

সূরা আন নামল মানবতার জন্য নির্দেশনার আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করে, স্বর্গীয় নির্দেশনাকে স্বীকৃতি এবং অনুসরণ করার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। প্রকৃতি থেকে শিক্ষা: সূরাটি প্রকৃতির লক্ষণগুলির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে, আমাদের চারপাশের বিশ্বে স্পষ্ট স্রষ্টার মহিমা এবং জ্ঞানের প্রতিফলনকে উত্সাহিত করে৷ 

এই মক্কার সূরাটি পিঁপড়ার সাথে সোলায়মান সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখোমুখি হওয়ার বর্ণনা দেয় (তাই সূরাটির নাম), একটি হুপো এবং শেবার রানী - যা অন্য কোন সূরাতে দেখা যায় না। সৃষ্টি ও প্রদানের আল্লাহর ক্ষমতা মূর্তিগুলোর শক্তিহীনতার সাথে বৈপরীত্য।

সূরা আন-নাম্‌লের ফজিলত ও উপকারিতা:

১. বিশ্বাসের দৃঢ়তা বৃদ্ধি:

এই সূরায় নবী সোলাইমান (আঃ) এর প্রতিভা ও জ্ঞান সম্পর্কে উল্লেখ আছে এবং কীভাবে তিনি আল্লাহর সাহায্যে পশুপাখিদের ভাষা বুঝতেন। এটি মানুষের ঈমানকে মজবুত করে এবং আল্লাহ্‌র কুদরত সম্পর্কে গভীর ধারণা দেয়।

২. আল্লাহর প্রতি ভরসা ও ক্ষমার বার্তা:

সূরাটি আল্লাহ্‌র ক্ষমাশীলতা ও দয়া সম্পর্কে উল্লেখ করে। এতে মানুষের জন্য শিক্ষা রয়েছে যে আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতি আস্থা রাখা এবং তাঁর নির্দেশাবলী অনুসরণ করা সবসময় কল্যাণকর।

৩. নবীদের কাহিনী থেকে শিক্ষা:

সূরাতে হযরত মূসা (আঃ), হযরত সোলাইমান (আঃ), এবং অন্যান্য নবীদের ঘটনাবলি তুলে ধরা হয়েছে, যা থেকে গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক শিক্ষা পাওয়া যায়। বিশেষ করে হুদহুদ পাখি ও রানী বিলকিসের ঘটনা ঈমানদারদের জন্য অনেক শিক্ষণীয়।

৪. আল্লাহর নিদর্শন:

সূরা আন-নাম্‌লে আল্লাহ্‌র সৃষ্টির নিদর্শন সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা মানুষের মনে আল্লাহ্‌র একত্ব ও সৃষ্টির জটিলতার উপর চিন্তাশীল হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়ায়।

৫. রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি:

হাদিসে উল্লেখ আছে যে, কিছু বিশেষ আয়াত বা সূরা পাঠ করা রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি দেয়। সূরা আন-নাম্‌ল নিয়মিত পাঠ করলে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৬. মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ নেয়ামত:

হযরত সোলাইমান (আঃ)-এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তার নবীদের যে বিশেষ নেয়ামত প্রদান করেছিলেন তা এই সূরায় তুলে ধরা হয়েছে। এটি মুসলিম উম্মাহকে শিক্ষা দেয় যে, যদি তারা আল্লাহ্‌র পথে সঠিকভাবে চলে, তবে তাদেরকেও বিশেষ রহমত এবং সাহায্য প্রদান করা হবে।

৭. রিজিক বৃদ্ধি ও দুশমনের হাত থেকে রক্ষা:

অনেক ইসলামিক স্কলারের মতে, নিয়মিতভাবে সূরা আন-নাম্‌ল পাঠ করলে আল্লাহ্‌ রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং মানুষকে শত্রুর ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন। এটি একটি আত্মিক প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে।

৮. ইবাদতের ফজিলত:

এই সূরা পাঠ করা ইবাদতের ক্ষেত্রে বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এতে আল্লাহ্‌র রহমত লাভ করা যায় এবং আল্লাহ্‌ মানুষের গুনাহ ক্ষমা করেন।

উপসংহার:

সূরা আন-নাম্‌ল কুরআনের একটি বিশেষ সূরা, যা মানুষের জন্য শিক্ষা, নির্দেশনা এবং আল্লাহ্‌র প্রতি আস্থা ও নির্ভরশীলতা বাড়ানোর একটি মাধ্যম। এই সূরাটি পাঠ করলে জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাওয়া যেতে পারে, আল্লাহ্‌র কুদরতের উপর বিশ্বাস দৃঢ় হয় এবং ইমান মজবুত হয়।