sura ash shura benefits-সূরা আশ শুআরা এর ফজিলত

সূরা আশ শুআরা এর ফজিলত


আশ-শুআরা (سورة الشعراء) হলো কুরআনের ২৬তম সূরা, যার মধ্যে মোট ২২৭টি আয়াত রয়েছে। এটি মক্কায় অবতীর্ণ একটি সূরা। এই সূরাতে বিভিন্ন নবীদের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাদের উম্মতের সাথে সংঘর্ষের বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে এই সূরাতে কবিদের উল্লেখ করা হয়েছে, যারা সত্যকে বাদ দিয়ে মিথ্যা বর্ণনা করে।


সূরা শুরা তেলাওয়াত, আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছ থেকে ক্ষমা ও সালাম দান করবেন। যে ব্যক্তি সূরা শূরা পাঠ করবে তাকে সফরে নিরাপদ রাখা হবে। যে ব্যক্তি এই সূরাটি পাঠ করে আল্লাহ তার জন্য সলাত প্রার্থনা করার জন্য এবং তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করার জন্য ফেরেশতাদের নিযুক্ত করেন এবং যখন তিনি মারা যান তখন তারা তাঁর রহমতের জন্য প্রার্থনা করেন৷ 


ভোরবেলা সূরা আশ-শুআরা পাঠ করাকে সমস্ত আসমানী কিতাবের তেলাওয়াতের সাথে তুলনা করা হয় যা অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাটি ঘন ঘন পাঠ করা চোরদের হাত থেকে এবং ডুবে যাওয়া বা দগ্ধ হয়ে মৃত্যু থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে। যে পানিতে এই সূরাটি দ্রবীভূত হয়েছে তা পান করলে তা সকল প্রকার রোগ থেকে রক্ষা করে।


সূরা আশ-শুআরার ফজিলত ও তাৎপর্য:

১. তাওহীদের শিক্ষা:

সূরা আশ-শুআরায় নবী ইব্রাহিম (আঃ), মূসা (আঃ), নুহ (আঃ), হুদ (আঃ), সালেহ (আঃ) এবং লুত (আঃ)-এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এই নবীগণ সকলেই তাঁদের জাতির মধ্যে তাওহীদের (আল্লাহর একত্বের) দাওয়াত দিয়েছিলেন। সূরাটি মুসলিমদের তাওহীদ সম্পর্কে সুদৃঢ় হতে শিক্ষা দেয় এবং শিরক থেকে দূরে থাকার জন্য প্রেরণা জোগায়।


২. আল্লাহর শক্তি ও কুদরতের বর্ণনা:

সূরাটিতে আল্লাহর শক্তি ও কুদরতের কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ যখন চান, তখন তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাহায্য করেন এবং সত্যের পথে তাদের রক্ষা করেন। সূরার মাধ্যমে জানা যায় যে, আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে কিছুই লুকানো থাকতে পারে না।


৩. নবীদের ধৈর্য ও সংগ্রামের উদাহরণ:

সূরাটিতে বিভিন্ন নবীর ধৈর্য, সংগ্রাম এবং তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিটি নবীর উম্মত তাদেরকে অস্বীকার করেছে, কিন্তু তাঁরা সব সময় ধৈর্যের সাথে আল্লাহর পথে অটল ছিলেন। এটি মুমিনদের জন্য একটি উদাহরণ, যে, সত্যের পথে ধৈর্য এবং আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হতে হবে।


৪. কবিতা ও বক্তৃতার প্রভাব:

আশ-শুআরা নামের অর্থ হলো “কবিদের”। এতে এমন কবিদের সমালোচনা করা হয়েছে যারা সত্য এবং ধর্মের বাইরে গিয়ে শুধু মিথ্যা ও অনৈতিক কথা ছড়িয়ে দেয়। তবে যারা আল্লাহর পথে এবং সৎকাজে কবিতা বা বক্তৃতা করেন, তাদের ব্যতিক্রম বলা হয়েছে। এই আয়াতগুলি মানুষের কথার ও লেখার প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে।


৫. শয়তানের প্ররোচনা থেকে দূরে থাকা:

সূরার শেষের দিকে শয়তানের প্ররোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা ভুল পথে পরিচালিত হয়, শয়তান তাদের প্ররোচনা দেয় এবং সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সূরা মুমিনদের সতর্ক করে যে, শয়তানের ধোঁকায় পা না দিতে।


৬. আখিরাতের শিক্ষা:

এই সূরায় আখিরাত এবং শেষ বিচারের কথা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। যারা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে না, তাদের জন্য আখিরাতে কঠিন শাস্তি এবং যারা আল্লাহর আনুগত্য করে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।


ফজিলতের সংক্ষিপ্ত সারমর্ম:

সূরা আশ-শুআরা মুসলিমদের তাওহীদে দৃঢ় হওয়ার শিক্ষা দেয়।

আল্লাহর কুদরত এবং নবীদের ধৈর্য এবং সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরে।

শয়তানের প্ররোচনা এবং মিথ্যাবাদী কবি ও বক্তাদের থেকে সতর্ক করে।

আখিরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের উপদেশ দেয়।

এটি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর শক্তি ও সাহায্য সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি হয় এবং সত্যের পথে ধৈর্যশীল থাকার শিক্ষা লাভ করা যায়।