সূরা আল ফুরকান এর ফজিলত
সূরা আল-ফুরকান কুরআনের ২৫তম সূরা, মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। "ফুরকান" শব্দের অর্থ হলো "সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী" বা "ভেদকারী"। এই সূরায় আল্লাহ তাআলা কুরআনকে সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী বলে উল্লেখ করেছেন। সূরা আল-ফুরকান বিভিন্ন দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, এবং এতে জীবনের নানা দিকের শিক্ষা ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূরা আল-ফুরকানের ফজিলত ও বিশেষত্ব:
১. সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী:
সূরার নাম থেকেই বোঝা যায়, এটি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা রাখে। এই সূরা মানুষকে আল্লাহর সত্য নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং তাদেরকে মিথ্যা থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়।
যারা কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন যাপন করেন, তারা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন এবং আল্লাহর পথ অনুসরণ করে সাফল্য অর্জন করতে পারেন।
২. আল্লাহর দয়া ও করুণার উল্লেখ:
সূরা আল-ফুরকানে আল্লাহর দয়া, ক্ষমাশীলতা এবং সৃষ্টির প্রতি করুণার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন যারা তওবা করে এবং তাঁর কাছে ফিরে আসে।
এই সূরা মুমিনদের আল্লাহর ক্ষমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে শেখায় এবং গুনাহ থেকে ফিরে আসার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করে।
৩. কুরআনের মহত্ব:
সূরা আল-ফুরকানে কুরআনের মহত্ত্ব এবং গুরুত্বের উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। কুরআনকে সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, এটি মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।
এতে কুরআনের অনুসরণ এবং এর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
৪. মক্কাবাসীর প্রতি সতর্কবার্তা:
এই সূরায় মক্কার অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যারা কুরআন এবং আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর বাণী মেনে নিতে রাজি ছিল না। এতে তাদের জন্য কঠোর সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহর শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
৫. ইবাদুর রহমান (আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুণাবলী):
সূরা আল-ফুরকানের শেষাংশে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, যাদেরকে "ইবাদুর রহমান" বলা হয়েছে। এই গুণাবলী গ্রহণ করলে একজন ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে উঠতে পারেন। কিছু গুণাবলী হলো:
নম্রতা: ইবাদুর রহমানরা পৃথিবীতে বিনয় সহকারে চলাফেরা করেন।
অজ্ঞদের সঙ্গে ঝগড়া না করা: তারা মূর্খদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হন না, বরং "সালাম" বলে এড়িয়ে যান।
রাতের ইবাদত: তারা রাতে আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
মিতব্যয়িতা: তারা ব্যয় করেন না অপচয় করেন না, বরং মিতব্যয়ী থাকেন।
পরিপূর্ণ তওবা করা: তারা তওবার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট ফিরে আসেন এবং গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখেন।
৬. আখিরাতের শাস্তি ও পুরস্কার:
এই সূরায় আখিরাতের শাস্তি ও পুরস্কার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যারা আল্লাহর বাণী মেনে চলে এবং সঠিক পথে থাকে তাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আর যারা আল্লাহর নাফরমানি করে তাদের জন্য জাহান্নামের কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
৭. শিরক ও তাওহিদের আলোচনা:
সূরা আল-ফুরকানে তাওহিদ (এক আল্লাহর উপাসনা) প্রতিষ্ঠার জন্য শিরকের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, শিরক আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং যারা শিরক করে তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।
৮. সবর এবং ধৈর্যের শিক্ষা:
আল্লাহর রাসূল (সা.) এবং তাঁর অনুসারীদের ধৈর্য ধারণ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কঠিন সময়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সবর করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার:
সূরা আল-ফুরকান মুসলিম সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা। এটি কুরআনের মহত্ব, ইবাদুর রহমানদের গুণাবলী, শিরক থেকে বাঁচার উপদেশ এবং ধৈর্যশীল থাকার শিক্ষা দিয়ে মুসলমানদের সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করে। যারা এই সূরার নির্দেশনা মেনে চলে এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার পথে চলতে পারে।
thistimebd Bangladesh Live online newsportal, education, Lifestyle, Health, Photography, gif image etc.
Make your own name or company name website | contact: thistimebd24@gmail.com
Copyright © 2020-2024 News Portal in Bangladesh - THISTIMEBD.COM. ALL Rights Reserved.