সূরা আল মুমিনূন এর ফজিলত ও গুরুত্ব

সূরা আল মুমিনূন এর ফজিলত


সূরা আল-মুমিনূন কুরআনের ২৩তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এ সূরায় মূলত ঈমানদারদের গুণাবলী, তাদের পুরস্কার, এবং পরকালীন সফলতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে কিছু ফজিলত ও গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো:


১. ঈমানদারদের সফলতা

সূরা আল-মুমিনূনের প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে।” এতে বোঝা যায়, যারা সত্যিকার অর্থে ঈমানদার এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলে, তারা পরকালে সফলতা অর্জন করবে।

২. পাঁচটি গুণাবলী

আল্লাহ এই সূরায় ঈমানদারদের পাঁচটি বিশেষ গুণাবলীর কথা উল্লেখ করেছেন:

খুশু সহকারে সালাত আদায় করা (আয়াত ২)

অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা (আয়াত ৩)

যাকাত প্রদান করা (আয়াত ৪)

নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করা (আয়াত ৫-৭)

আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করা (আয়াত ৮)

৩. সাফল্যের নিশ্চয়তা

এই সূরায় উল্লেখিত গুণাবলী যারা অর্জন করবে, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, "তারাই জান্নাতের উত্তরাধিকারী হবে, যেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।” (আয়াত ১০-১১)

৪. দুআ কবুলের আয়াত

সূরা আল-মুমিনূনের আয়াত ১১৮-তে একটি গুরুত্বপূর্ণ দুআ রয়েছে: “রাব্বি ইঘফির ওয়ারহাম ওয়া আন্তা খায়রুর রাহিমিন”

অর্থ: "হে আমার প্রভু! ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন, আপনি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।"

এই দুআ পাঠ করলে আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও রহমত লাভ করা যায়।

৫. দুআ কবুলের সময়

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সূরা আল-মুমিনূন পাঠ করছিলেন এবং যখন তিনি এই আয়াতে পৌঁছালেন (২৩:১১৮), তখন তিনি দুআ করলেন। এটি দ্বারা বোঝা যায় যে, এই সূরায় বিশেষ কিছু আয়াত আছে যেগুলো পাঠ করলে আল্লাহর কাছে দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৬. পুনরুত্থান ও বিচার দিবসের স্মরণ

সূরায় আল্লাহ তায়ালা মানুষের সৃষ্টি, মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের প্রক্রিয়া উল্লেখ করেছেন। এতে মানুষের মনে জীবনের সাময়িকতা এবং পরকালের গুরুত্ব গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়।

৭. সতর্কতা ও ধৈর্যের উপদেশ

এই সূরায় পবিত্র চরিত্র এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। যারা পাপ থেকে বেঁচে থাকবে এবং ধৈর্য ধারণ করবে, তাদের জন্য আল্লাহ জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

৮. আল্লাহর দয়া ও ক্ষমার অনুরোধ

সূরা আল-মুমিনূন মানুষকে আল্লাহর ক্ষমা এবং দয়া কামনা করতে উৎসাহিত করে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি কতটা দয়ালু।


ফজিলত: 

সূরা আল মুমিনুন কঠিন সময়ে বিশ্বাসীদের উৎসাহ ও সান্ত্বনা প্রদান করে। এটি তাদের মনে করিয়ে দেয় যে তাদের সংগ্রাম বৃথা নয় এবং তাদের বিশ্বাস পরকালে পুরস্কৃত হবে। সূরাটি আশা এবং স্থিতিস্থাপকতা জাগিয়ে তোলে, বিশ্বাসীদের প্রতিকূলতার মুখে অবিচল থাকতে অনুপ্রাণিত করে।


সূরা আল-মুমিনুন বিশ্বাসীদের জন্য পথনির্দেশ এবং অনুপ্রেরণার উত্স হিসাবে কাজ করতে পারে যখন তারা জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলি নেভিগেট করে। আমরা অর্থপূর্ণ এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপন করার চেষ্টা করার সাথে সাথে নির্দেশনা এবং সমর্থনের জন্য সূরার দিকে ফিরে যেতে পারি।


সূরাটি জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অন্বেষণের গুরুত্বের উপরও জোর দেয় এবং অবিশ্বাস ও অবাধ্যতার বিপদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে। সাধারণভাবে, সূরা আল-মুমিনুন বিশ্বাস এবং ধার্মিকতার গুরুত্বের একটি অনুস্মারক এবং তাদের আধ্যাত্মিক যাত্রায় বিশ্বাসীদের জন্য একটি গাইড হিসাবে কাজ করে।


সূরা মুমিনুন মক্কায় নবুওয়াতের মধ্যবর্তী পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। লাইনগুলি পড়লে যে কেউ অনুভব করে যে মহানবী (সা.) এবং মক্কার কাফেরদের মধ্যে একটি তিক্ত দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল, যদিও তাদের দ্বারা অত্যাচার তখনও অত্যাচারী হয়ে ওঠেনি ।


সূরা মুমিনুনের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হল মানুষকে মহানবীর বাণী গ্রহণ ও অনুসরণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো এবং পুরো সূরাটি এই বিষয়বস্তুকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে।


সূরা আল মু মিনুন মূল বিষয়বস্তু হল মানুষকে তাদের উত্স, তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য এবং চূড়ান্ত সত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যা চূড়ান্ত শেষ - পরকালের জীবন, যা চিরন্তন হতে চলেছে।


যে ব্যক্তি প্রতি তিন দিনে একবার সূরা আল মুমিনুন পাঠ করবে, তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং সে একজন খোদাভীরু ব্যক্তি হয়ে উঠবে। 


সূরা আল মুমিনুন লিখে বাগানে বা খামারে রাখলে গাছপালা বা ফসল বেশি ফলদায়ক ও সবুজ হবে, ব্যবসায়িক প্রাঙ্গণে রাখলে ব্যবসায় উন্নতি হবে এবং অধিক মুনাফা হবে।


যদি এই সূরাটি (রাতে) লিখে মাতাল ব্যক্তির গলায় পরানো হয়, তবে সে নেশাজাতীয় পানীয়কে ঘৃণা করতে শুরু করবে এবং এই খারাপ অভ্যাসটি বন্ধ করবে।


যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবার এই সূরা মুমিনুন পাঠ করবে, আখিরাতে সে মহান মর্যাদার অধিকারী হবে এবং নবীদের সান্নিধ্যে থাকবে।


সূরা আল-মুমিনূন আমাদের জীবনযাপনের একটি আদর্শ পথনির্দেশ করে, যেখানে ঈমান, সালাত, যাকাত, এবং চারিত্রিক শুদ্ধতা উল্লেখযোগ্য। যারা এই গুণাবলী অর্জন করবে, তারা আল্লাহর দয়া ও জান্নাত লাভ করবে।