সূরা আন নিসা ফজিলত

সূরা আন নিসা ফজিলত

সূরা আন নিসা পবিত্র কোরআনের চতুর্থ সূরা। এর মোট আয়াত সংখ্যা ১৭৬টি। এই সূরা মদীনায় নাজিল হওয়ায় এটি মাদিনী সূরা। এই সূরার অধিকাংশ আয়াতে পরিবারে নারীদের অধিকার এবং পারিবারিক বিষয়ে বক্তব্য থাকায় এর নাম হয়েছে সূরা নিসা।

যারা এতিমদের সম্পত্তি ভুলভাবে দখল করে তাদের জন্য শাস্তির প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করা হয় । মহিলারা বেশ কিছু সূরা নিসার সুবিধা পেতে পারেন কারণ এটি তাদের সাথে দারুণ প্রাসঙ্গিক। সূরায় নারীদের মেহের তাদেরকে প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং মেহের সংক্রান্ত আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

সূরা আন নিসার ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ প্রথম সাতটি সূরা গ্রহণ করবে সে আলেম হিসেবে গণ্য হবে”। (মুসনাদে আহমাদ: ৬/৮৫, ৬/৯৬)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যে সূরা আলে ইমরান পড়বে সে অমুখাপেক্ষী হবে, আর সূরা আন-নিসা হচ্ছে সৌন্দর্যপূর্ণ। ” (সুনান দারেমীঃ ৩৩৯৫)

এ সূরায় নারীদের বৈষয়িক নানা অধিকার- যথা বিয়ে, সম্পত্তি, দেনমোহর, উত্তরাধিকার সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব নীতি সমাজের গরীব ধনী সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য হলে, সম্পর্ক তিক্ত হলে কিভাবে তার সমাধান করতে হয়- তাও শিখানো হয়েছে সূরা নিসায়। শান্তি ও সুখের জন্য বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ ঘটানো যদি অনিবার্য হয়ে পড়ে তবে তা কিভাবে সম্পাদন করতে হবে সেসব দিক-নির্দেনা রয়েছে এ সূরায়। বিয়ে বিচ্ছেদের সময় নারীর সম্মান ও অধিকার যেন কোনোভোবেই ক্ষুন্ন না হয় তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

নারী নির্যাতনরোধে ও নারীদের অধিকার আদায়ের নিমিত্তে পৃথিবীতে উচ্চারিত প্রথম সনদের নাম সূরা নিসা। বিশ্ববাসীকে নারী অধিকারের ধারণা দিয়েছে এ সূরা। পৃথিবীতে নারী মুক্তি, নারী উন্নয়ন আর নারী অধিকারের পথচলা শুরু হয়েছে সূরা নিসার পথ ধরে। এ বিষয়ে সূরা নিসার অবদান পরিপূর্ণভাবে  অনুধাবন করতে হলে, সূরা নিসা অধ্যয়ন করার আগে তদানীন্তন বিশ্বে নারীর মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে।

সূরা নিসার আলোচনা শুরু হয়েছে তাকওয়ার আলোচনা দিয়ে। নারীর অধিকারসমূহ আলোচনার সময়ও বারংবার তাকওয়ার কথা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, তাকওয়া অর্থ আল্লাহভীতি। 

এ সূরার প্রথম আয়াতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের মাঝে সুবৃহৎ ঐক্য ও সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করার মূলমন্ত্র শিখানো হয়েছে।

দ্বিতীয় আয়াতে এতিমের সম্পদ আত্মসাতের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে ও এতিমের অভিভাবককে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। সূরা নিসার তৃতীয় আয়াতে বহুবিবাহের অনুমতি ও শর্তসমূহ বিবৃত হয়েছে।

 এ সূরার পাঁচ ও ছয় নম্বর আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, অপরের সম্পদ নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা অন্যদের আবশ্যকীয় দায়িত্ব। সম্পদের মালিককে কখন তার সম্পদ বুঝিয়ে দিতে হবে, বিশেষ করে এতিমের সম্পদ কখন তার হাতে ছেড়ে দিতে হবে সে দিক-নির্দেশনা এখানে দেওয়া হয়েছে। দশম আয়াতে এতিমের আত্মসাৎ পরকালে ভয়ঙ্কর পরিণতির কারণ হবে বলে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

এগারোতম আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেউ মারা গেলে তার সন্তানরা বিশেষ করে মেয়ে সন্তানরা কতটুকু অংশ পাবে এবং তার মাতা-পিতা কতটুকু অংশ পাবে। বারোতম নম্বর আয়াতে আছে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী কতটুকু অংশ পাবে আর স্ত্রী মারা গেলে স্বামী কতটুকু অংশ পাবে। সেই সঙ্গে বলে দেওয়া হয়েছে, বৈপিত্রিয় ভাই-বোনের অংশও।

তওবার আলোচনা করা হয়েছে এ সূরার সতেরো ও আঠারোতম আয়াতে। এর পরের আয়াতে নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সদাচরণ বিষয়ে নানা আলোচনা স্থান পেয়েছে। কোন নারীকে বিয়ে করা যাবে, আর কোন নারীকে বিয়ে করা যাবে না- তা বলা হয়েছে বাইশ ও তেইশতম আয়াতে।

আমানত রক্ষা ও বিচারকাজে নিরপেক্ষ থাকার কঠোর আদেশ দেওয়া হয়েছে আটান্ন নম্বর আয়াতে। এরপর আলোচনা করা হয়েছে মুনাফিকদের প্রসঙ্গে। বলা হয়েছে, যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের ফায়সালাকে মেনে নিতে পারে না, যারা ইসলামকে এড়িয়ে মানব রচিত আইনের দ্বারা জীবনের সমাধান করতে চায়- তারাই মুনাফিক।

সূরা নিসায় আরও আলোচনা করা হয়েছে, জিহাদের নির্দেশ, ফজিলত ও উদ্দেশ্যসমূহ। সেই সঙ্গে মানুষকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে গভীর মনোযোগের সঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিম অধ্যয়ন করার ও কোরআন নিয়ে গকেষণা করার।

সূরা নিসায় আরও আলোচিত হয়েছে, মুনাফিকদের পরিচয়, বৈশিষ্ট্য ও পরিণতি নিয়ে সম্পর্কে। সেখা বলা হয়েছে, মুনাফিকরা মর্যাদা ও ক্ষমতার লোভে মুমিনদের চেয়ে কাফেরদের প্রতি বেশি আন্তরিক ও দুর্বল থাকে। কষ্টের সময় তারা মুমিনদের সাথী হয় না। কিন্তু ভোগ ও ভাগের সময় তারাও দাবিদার সাজে।

ধর্ম বিষয়ে ইহুদিদের বিভিন্ন দাবি খন্ডন করে ইহুদিদের দুটি চরিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সূরা নিসায়। বলা হয়েছে, সুদ খাওয়া ও অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগ করা তাদের বৈশিষ্ট্য।