সূরা আল-হাক্কাহ এর ফজিলত ও গুরুত্ব

সূরা আল-হাক্কাহ এর ফজিলত


সূরা আল-হাক্কাহ (سورة الحاقة) হলো পবিত্র কুরআনের ৬৯তম সূরা, যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে মোট ৫২টি আয়াত রয়েছে। এই সূরাটি বিশেষভাবে কেয়ামতের দিন, বিচার এবং পুরস্কার-শাস্তির বিষয়ে আলোচনা করে।

সূরা আল হাক্কাহ পবিত্র কোরআনের ৬৯তম সূরা। এ সূরায় রয়েছে ২ রুকু এবং ৫২ আয়াত। এ সূরার প্রথম রুকুতে পরকালের বর্ণনা করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় রুকতে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হওয়া এবং হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, আল্লাহ রাসুল; এ কথার সত্যতা বর্ণনা করা হয়েছে।

মহানবী (সঃ) বলেছেন, এই সূরাটি পাঠ করলে হিসাব দিবসে আমলের হিসাব সহজ হয় । এই সূরাটি যদি গর্ভবতী মহিলা পাঠ করলে তবে তার বাচ্চা নিরাপদ থাকবে। শিশুকে যে পানিতে এই সূরাটি দ্রবীভূত করা হয়েছে তা দিলে তার স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধির উন্নতি হবে।


সূরা আল-হাক্কাহর ফজিলত ও গুরুত্ব:


কেয়ামতের সত্যতা সম্পর্কে জ্ঞান:

সূরাটি কেয়ামত দিবসের নিশ্চিত সত্যতা এবং সেদিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করে। এটি মানুষের মধ্যে পরকালের প্রতি বিশ্বাস জাগ্রত করে এবং আল্লাহর আযাব ও পুরস্কারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।


আখিরাতের বিচার ও হিসাব:

এই সূরায় বিচার দিবসে মানুষের কৃতকর্ম অনুযায়ী তাদের আমলনামা (পাপ ও পুণ্যের হিসাব) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

যাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তারা জান্নাত লাভ করবে।

যাদের আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে।


পূর্ববর্তী জাতির শাস্তির দৃষ্টান্ত:

সূরাটি আদ, সামূদ, এবং ফিরআউনের জাতির ধ্বংসের বিবরণ দেয়, যারা আল্লাহর অবাধ্য ছিল এবং রাসূলদের মিথ্যাবাদী বলেছিল। এটি মানুষকে সতর্ক করে, যেন তারা তাদের মতো পথভ্রষ্ট না হয়।


আল্লাহর ক্ষমতা ও করুণা:

সূরা আল-হাক্কাহ মানুষকে আল্লাহর অসীম শক্তি ও করুণার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহ্বান জানায়। এটি মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং পুনরুত্থানের দিন তিনি সমস্ত সৃষ্টিকে জীবিত করবেন।


হাদিসে সূরা আল-হাক্কাহর ফজিলত:

তিলাওয়াতের গুরুত্ব:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূরা আল-হাক্কাহ সম্পর্কে বলেছেন:

"সূরা আল-হাক্কাহ পাঠ করলে কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি জন্মায় এবং মানুষের অন্তর আল্লাহভীতি ও তার বিধানের প্রতি জাগ্রত হয়।"


সৎ কর্মে উদ্বুদ্ধ করা:

এই সূরা মানুষকে সৎকর্ম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।


তিলাওয়াতের ফজিলত:

সওয়াব বৃদ্ধি:

কুরআনের প্রতিটি আয়াত তিলাওয়াতের জন্য অসংখ্য সওয়াব রয়েছে। সূরা আল-হাক্কাহ তিলাওয়াত করলে কেয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভের পাশাপাশি পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের প্রেরণা পাওয়া যায়।


হৃদয় শুদ্ধিকরণ:

এটি অন্তরকে নরম করে এবং আল্লাহর নির্দেশাবলী মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।


উপসংহার:

সূরা আল-হাক্কাহ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা যা কেয়ামতের সত্যতা, আল্লাহর বিচার, এবং পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতিদের ধ্বংসের শিক্ষামূলক দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে তুলে ধরে। এটি তিলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষ নিজের জীবনকে সংশোধন করতে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে।