সূরা আল-হাশর এর ফজিলত

সূরা আল-হাশর এর ফজিলত


সূরা আল-হাশর (সূরা ৫৯) কুরআনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা, যা মানুষের ঈমান, তাকওয়া, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভরসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। এই সূরার মূল বিষয়বস্তু হলো মুমিনদের জন্য আল্লাহর সাহায্য, তাঁর সৃষ্টি ও শক্তির প্রমাণ এবং আখিরাতের স্মরণ। 

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সকাল বেলা তিন বার আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়বে। এরপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করেন; যারা ওই ব্যক্তির জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে।


সূরা আল-হাশরের ফজিলত ও উপকারিতা নিম্নরূপ:


১. আল্লাহর শক্তি ও প্রভাব উপলব্ধি

সূরা আল-হাশরের শেষ তিন আয়াত (২২-২৪) আল্লাহর অসীম শক্তি, গুণাবলি ও মহিমার বর্ণনা দেয়। এই আয়াতগুলো পাঠ করলে মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি জন্মায় এবং আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হতে সাহায্য করে।

২. শেষ তিন আয়াতের বিশেষ ফজিলত

হাদিসে এসেছে যে, যে ব্যক্তি সূরা আল-হাশরের শেষ তিন আয়াত সকালে এবং সন্ধ্যায় পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়োগ করবেন, যারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এবং সে মৃত্যুবরণ করলে তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হবে। (সূত্র: তিরমিজি)

৩. আখিরাতের স্মরণ

এই সূরায় মানুষকে তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে এবং দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ী হওয়ার কথা স্মরণ করানো হয়েছে। এটি পাঠ করলে মানুষের মনে আখিরাতের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলার প্রতি উৎসাহিত হয়।

৪. মুনাফিক ও শত্রুদের পরিণতির শিক্ষা

সূরার প্রথম অংশে মুনাফিকদের এবং আল্লাহ ও ইসলামের শত্রুদের পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মুমিনদের সতর্ক করে এবং তাদের মনে আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও ধৈর্য বজায় রাখার প্রেরণা যোগায়।

৫. ঈমানদারদের জন্য বিশেষ দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা

সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে যে মুমিনরা আল্লাহর কাছে নিজেদের ও অন্যান্য ঈমানদারদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা করে। এটি মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্য বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায় শেখায়।

৬. আল্লাহর নামসমূহের মর্যাদা

সূরা আল-হাশরের শেষ অংশে আল্লাহর অনেক গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই নামগুলো পাঠ করলে এবং সেগুলো সম্পর্কে চিন্তা করলে মানুষের আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তি বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর নামসমূহের মর্যাদা অনুধাবন করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে।

৭. পরিশুদ্ধ ও সুন্দর চরিত্র গঠনে সহায়ক

এই সূরা মানুষের মধ্যে সৎ জীবনযাপন, আল্লাহর প্রতি ভয় ও বিশ্বাস, এবং কৃতজ্ঞতার মানসিকতা তৈরি করে। এটি মানুষের চরিত্রকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সৎ পথে চলতে উৎসাহিত করে।

৮. বিপদে সহায়ক ও সুরক্ষা

হাদিস অনুযায়ী, সূরা আল-হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করলে আল্লাহ বিপদ থেকে রক্ষা করেন এবং মানুষকে তাঁর সাহায্য প্রদান করেন। এটি পড়লে মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা আরও শক্তিশালী হয়।

সারাংশে, সূরা আল-হাশর মানুষের মনে আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি, ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়ক। এটি আল্লাহর অসীম গুণাবলি এবং ক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুমিনদের সত্যিকার অর্থে আল্লাহর আনুগত্যশীল বানানোর প্রচেষ্টা করে।