ad jati dongser ghotona bangla-আদ জাতির ধ্বংসের ঘটনা
ad jati dongser ghotona bangla-
আদ জাতির ধ্বংসের ঘটনা।
আদ জাতি হযরত হুদ (আঃ)-এর কথা শুনিয়া তাহাকে ঠাট্টা ও বিদ্রুপ করিল। যার ফলে আল্লাহ তায়ালা তাহাদের দেশে একাধারে তিন বৎসর বৃষ্টিপাত বন্ধ রাখিলেন । দেশে কোন ফসলাদি জন্মিল না। ফলে সারাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। এমতাবস্থায় হযরত হুদ (আঃ) পুনরায় তাহাদেরকে বলিলেন, হে আমার কওম ! এখন ও তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট গুনাহ হইতে ক্ষমা ভিক্ষা কর ও সৎপথে আস, তাহা হইলে নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের গুনাহ মার্জনা করিবেন ও তোমাদের প্রতি করুনার ধারা বর্ষণ করিবেন ।
জবাবে কাফিরগণ বলিল, হুদ! আমরা তোমার কথায় বিশ্বাস করি না এবং তোমার খোদার প্রতিও আস্থা রাখি না; সুতরাং আমরা কোনরূপ তওবাও করিব না। একথার পর হযরত হুদ (আঃ)-এর আর তাহাদের কাছে কিছু বলিবার থাকিল না।
অতঃপর আদ জাতি তাহাদের কিছুসংখ্যক লোককে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করিতে মক্কা শরীফ পাঠাইয়া দিল । মক্কার গৃহে তখন বহুসংখ্যক দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপিত ছিল। উহারা তখন ঐসব মূর্তির নিকটই নানারূপ প্রার্থনা জানাইল।
মক্কা গমনকারীদের মধ্যে প্রথম দলে ছয়জন লোক ছিল। তাহাদের মধ্যে দুইজন ছিল সত্যধর্মে বিশ্বাসী । অবশ্য তাহারা তাহাদের সত্যধর্মে বিশ্বাসের কথা গোপন রাখিয়াছিল । উহাদের মধ্যে একজনের নাম মজীদ এবং অপরজনের নাম লকীম ছিল ।
এই দলের পরে অপর দে দলটি মক্কায় গিয়াছিল, সেই দলটিতে লোক ছিল সত্তর হাজার, তাহারা সবাই ছিল বেঈমান। এই দলের নেতার নাম ছিল কলি। মজীদ উক্ত কলিকে বলিল, তোমরা পানির জন্য প্রার্থনা করিতে আসিয়াছ বটে, কিন্তু যতক্ষণ না তোমরা হুদ (আঃ) ও খোদার প্রতি ঈমান আনিতেছ, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের প্রার্থনা কোনক্রমেই কার্যকরী হইবে না। বলিয়া আমার মনে হইতেছে ।
তাহার কথা শুনিয়া সকলেই তাহাকে হযরত হুদ (আঃ)-এর অনুসারী মনে করিয়া খুবই তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করিল।
তখন মজীদ ও লকীম উভয়ে মিলিয়া আল্লাহর দরবারে জানাইল, হে মাবুদ! ইহারা কখনই আপনার রহমতের প্রতি আস্থা আনিবে না। আপনি অনুগ্রহবশতঃ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন। আল্লাহর দরবার হইতে আওয়াজ আসিল। তোমরা আমার নিকট কি প্রার্থনা করিতেছ? মজীদ বলিল, হে প্রভু! আমি যেন কোনদিন অনাহারী না থাকি আর লকীম বলিল, হে প্রভু। তুমি আমার আয়ু তিন হাজার বছর দীর্ঘ করিয়া দাও । আল্লাহর তরফ হইতে জওয়াব আসিল, তোমাদের উভয়ের প্রার্থনা কবুল করা হইল।
তারপর কীল তাহার সত্তর হাজার সঙ্গী লইয়া একত্রে প্রার্থনা করিল, ওহে প্রভু! আমাদের মধ্যে কখনও কাহারও রোগব্যাধি হয় নাই যে, তোমর নিকট তাহার আরোগ্য প্রার্থনা করিব । আর নিজেও কখনও কোন বিপদে লিপ্ত হই নাই যে, বিপদমুক্তির জন্য প্রার্থনা জানাইব। আমরা সকলেই শুধু আদ জাতির জন্য তোমার নিকট বৃষ্টি কামনা করিতে আসিয়াছি । উহারা এইভাবে প্রার্থনা জানাইৰার অনুমান তিনঘন্টা পরে আকাশের কোণে সাদা কালো লাল এই তিনবর্ণের মেঘ আত্মপ্রকাশ করিল।
মেঘের মধ্য হইতে অদৃশ্য আওয়াজ শুনা গেল, হে কীল! এই তিন প্রকার মেঘের মধ্যে তুমি কোন প্রকার মেঘটিকে চাও?
কীল জানিত যে, সাদা ও লাল মেঘে বৃষ্টিপাত হয় না; সুতরাং সে কালো মেঘটিকেই প্রার্থনা করিল । অতঃপর তাহারা মক্কা শরীফ হইতে দেশে প্রস্থান করলে মেঘটি ও তাহাদের সাথে সাথে চলিল। একটু পরেই প্রবল ঝড় শুরু হইল।
কাফিরগণ তখনও হযরত হুদ (আঃ)-কে বিদ্রুপ করিতে ছাড়িল না। তাহারা বলিল, হে হুদ! তুমি বলিয়াছিলে যে, আমাদের প্রতি তোমার খোদার গজব নাযিল হইবে; কিন্তু এখন কি দেখিতেছ? শীঘ্রই বৃষ্টিপাত হইয়া আমাদের দেশে শান্তি ফিরিয়া আসিবে৷ দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হইবে । হযরত হুদ (আঃ) বলিলেন, “আচ্ছা, তোমরা একটু ধৈর্যাবলম্বন কর। এই কথা বলিয়া তিনি তাহার উম্মতগণকে লইয়া তাড়াতাড়ি সে স্থান ত্যাগ করিলেন।
অতঃপর কওমে আদের প্রতি আল্লাহর কঠিন আযাব নামিয়া আসিল। সে আযাব এতই কঠিন ছিল যে, কাফিরগণ কোনরূপ উপায়ন্তর না দেখিয়া প্রায় সাতলক্ষ লোক পাহাড়ের গর্তসমূহে আত্মগোপন করিয়া বলিতে লাগিল যে,
এখন আর আসন্ন তুফান আমাদের কোন অপকার করিতে পারিবে না । যেহেতু আমাদের তিনদিকে তিনটি পাহাড় বেষ্টিত রহিয়াছে, সুতরাং উহা ভেদ করিয়া আমাদের কাছে তুফান পৌছিতে পারিবে না । কিন্তু তাহারা মনে মনে যে ধারণাই পোষণ করুন না কেন, মুহর্তের মধ্যে ভীষণ বজ্রধ্বনিসহ এমন প্রবল বেগে তুফান শুরু হইল যে, দাম্ভিক আদ কওমের লোকদের দম্ভ মুহর্তে ধূলিস্মাৎ হইয়া গেল।
তাহাদের ঘর-বাড়ি প্রথম ঝাপটায়ই নিশ্চিহ্ন হইয়া গেল। দ্বিতীয়বারে তাহাদের আশ্রয়স্থল পাহাড়ের গুহাসমূহে বায়ু প্রবেশ করিয়া তাহাদের সকলকে বাহিরে উড়াইয়া আনিয়া এমন ভাবে আছাড় মারিল যে, সাত লক্ষ মানুষের দেহগুলি যেন উৎপাটিত খেজুর বৃক্ষের মত নিষ্প্রাণদেহে ভূমিতলে পড়িয়া রহিল।
তারপর প্রবল বায়ুর তান্ডৰ ধূলা-মাটি উড়াইয়া উক্ত লাশগুলির উপরে এমনভাবে নিয়া ফেলিল যে, তাহাতে উহারা চাপা পড়িয়া রহিল।
এইভাৰে আদ জাতির প্রায় সমস্ত লোক আল্লাহর গজবে ধ্বংস হইয়া গেল এবং হযরত হুদ (আঃ) তাহার মুমিন উম্মতগণকে লইয়া সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলেন।