শবে বরাতের ফযিলত-Sobe Barater Fozilot

শবে বরাতের ফযিলত

শবে বরাত আল্লাহ প্রদত্ত রাতগুলোর মধ্যে বিশেষ ফযিলতপূর্ণ। পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে এই রাতের ফযিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এমন একটি রাত ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। শাবান মাসের ১৪ই তারিখের দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। এই রাতে দয়াময় আল্লাহ পাকের নির্দেশে পরবর্তী শবে বরাত পর্যন্ত দীর্ঘ এক বছরের হিসাব-নিকাশ লেখা হয়। সৃষ্টি জগতের হায়াত, মউত, রিজিক-দৌলত, উত্থান-পতন, ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, উন্নতি-অবনতি ইত্যাদি ভাগ্যলিপি এই রাতে এক বছরের জন্য তৈরি করা হয়। একমাত্র শবে ক্বদর ছাড়া এই রাতের সমতুল্য অন্য কোন রাত নেই। সুতরাং এ রাতের ফযিলত ও  বুজুর্গী যে অত্যন্ত বেশি তা সহজেই অনুমান করা যায়। 

শবে বরাতের নফল ইবাদত সম্বন্ধে অনেক রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। তবে সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাগণের সহজসাধ্য বিবেচনা করে নিচে কতিপয় আমল সম্বন্ধে আলোচনা করা হল । আশা করি আমলের জন্য তা যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে। 

১। হাদীস শরীফে আছে, হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) বর্ণনা করেন—

উচ্চারণঃ আন আবী বাকরিনিচ্ছিদীক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্বালা ক্বালা - রাসূলল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি অ মাল্লামা কুমু লাইলাতান নিছফি মিন শাবানা ফাইন্নাহা  লাইলাতুম মুবারাকাতুন ফাইন্নাল্লাহা ইউনাদী ফীহা হাল মিম মুছতাগফিরিন নাগফির  লাহু।

অর্থাৎ- হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, হে বিশ্বাসী বান্দাগণ!  তোমরা শাবান মাসরে ১৫ই তারিখের রাত্রে নিদ্রা পরিত্যাগ করে ইবাদতে নিমগ্ন হও। কেননা, ঐ রাত অত্যন্ত বরকত ও ফযিলতপূর্ণ। সেই রাতে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কি ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে? আমি অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেব।

২। অপর একটি রেওয়ায়েতে আছে, হুযুর পাক (সাঃ) আরো বলেছেন—

উচ্চারণ: তুবা লিমাই ইয়া’মালু ফী লাইলাতিন নিছফি মিন শাবান।

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি শাবান মাসের পনেরো তারিখের রাতে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকে, তার জন্য কতই না খুশি ও কতই না আনন্দ।

৩। আরো বর্ণিত আছে, আঁ হযরত (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শবে বরাতকে বুজর্গ মনে কর । ইহা শাবান মাসের পনেরোই তারিখের রাত। এ রাত্রে আল্লাহর রহমতের ফিরিশতাগণ ইবাদতকারীগণের প্রতি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ পাক তাদের ছগীরা ও কবীরা যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেন।

৪। হাদীস শরীফে আছে, আঁ হযরত (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দোজখের কঠিন আজাব হতে নিষ্কৃতি কামনা করে, সে যেন শাবান মাসের পনেরোই তারিখের রাতে আল্লাহ পাকের ইবাদত-বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকে। তাহলে দয়াময় আল্লাহ পাক তার উপর দোজখের আগুন হারাম করে দেবেন।

৫। হাদীস শরীফে আরো আছে, বিশ্ব নবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন

উচ্চারণ: ইন্নাল্লাহা ইয়ারহামু উছাতা উম্মাতী ফী লাইলাতিন নিছফি মিন শাবানা বিআ’দাদি শুউরি আন’আমি বানী কালবিউ অ বানী রাবি’আ অ মুদ্বারা।

অর্থাৎ—নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা শা’বান মাসের পনেরোই তারিখের রাতে বনী কলব, বনী রবি ও বনী মুদার গোত্রের ভেড়া ও বকরীর পশম সংখ্যার সম পরিমাণ গুনাহগার উম্মতকে মার্জনা করে দেন।

বর্ণিত আছে যে, আরবের এই তিনটি বিখ্যাত গোত্রের প্রত্যেকটি তিন হতে বিশ হাজার পর্যন্ত ভেড়া-বকরী লালন-পালন করত।

৬। আঁ হযরত (সাঃ) ইহাও বলেছেন যে, যে ব্যক্তি ১৫ই শাবানের রাতকে জীবিত রাখবে, অর্থাৎ নিদ্রা ও তন্দ্রাকে পরিহার করে আল্লাহ পাকের ইবাদত-বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকবে, করুণাময় আল্লাহ তা’আলা তাকে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত জীবিত রাখবেন । অর্থাৎ মৃত্যুর পরও তার আমলনামায় নেক লেখা হতে থাকবে।

৭। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, আঁ হযরত (সাঃ) ইরশাদ করেছেন—

উচ্চারণ: মান ছামা ইয়াওমাল খামিছি আশারা মিন শা’বানা লাম  তামছাছহুন্নারা আবদা।

অর্থাৎ: যে ব্যক্তি শা’বান মাসের পনেরোই তারিখ রোজা পালন করবে, তাহলে দোযখের আগুন কখনো তাকে স্পর্শও করতে পারবে না। মোটকথা, সে দোযখের  আজাব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে।

৮। অপর এক হাদীসে আছে, হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন—আমাকে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) উপদেশ দিয়েছেন যে, আপনার উম্মতদেরকে বলে দিন, তারা যেন শবে বরাতকে জিন্দা রাখে। তা হলে শবে ক্বদরকেও জিন্দা রাখা হবে। অর্থাৎ শবে ক্বদরের সমপরিমাণ পুণ্য সে অর্জন করবে।। 

৯। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ১৫ই শা’বানের রাতে ইবাদতকারীগণকে করুণাময় আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দেন। কিন্তু যাদুকর, গণক, কৃপণ, পিতা-মাতাকে কষ্ট প্রদানকারী, শরাবখোর, নারী-পুরুষ জেনাকার এবং নেশা পানকারীকে মাফ করবেন না।

তবে খালেস তওবাকারীকে অর্থাৎ জীবনে কখনো আর সেইরূপ গুনাহ করবে না এইরূপ অঙ্গীকার করলে মাফ পাওয়ার আশা করা যায়। আর ১৫ই তারিখের রাতে আল্লাহ পাক ডেকে বলেন যে, হে মুমিন বান্দাগণ! অদ্য যে ব্যক্তি আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। যে রোগ মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবে, আমি তাকে সুস্থতা প্রদান করব এবং যে গরিব ধনী ও মালদার হওয়ার জন্য প্রার্থনা করবে, তাকে ধনশালী করে দেব।

১০। হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) আরো ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি এই রাতে একশত রাকআত নফল নামাজ আদায় করবে, তার জীবনের সমুদয় গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং দোযখের আগুন তার জন্য হারাম হবে। অর্থাৎ সে আল্লাহ পাকের পিয়ারা  বান্দা হিসেবে পরিগণিত হবে ।

১১। হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন—কোন এক রাতে আমি আঁ হযরত (সাঃ)-এর খেদমতে হাজির হলাম। তখন তিনি উঠে চলে গেলেন এবং নামাজ আদায়ে নিমগ্ন হলেন। আমার মনে হল—আঁ হয়রত (সাঃ) আমাকে বিশেষ নজরে দেখছেন না। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম যে, দ্বীনের নবী (সাঃ) সিজদার হালতে অঝোর ধারায় ক্রন্দন করছেন এবং স্বীয় গুনাহগার উম্মতের জন্য মাগফেরাত কামনা করছেন। ইহা অবলোকন করে আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মাতা-পিতা আপনার উপর উৎসর্গীকৃত হোক। আপনি সিজদার হালতে অশ্রুর প্লাবন বহায়ে দিচ্ছেন, কিন্তু আমি আপনার পাশে একান্ত অসহায়ভাবে দণ্ডায়মান রয়েছি। তখন সে আঁ হয়রত (সাঃ) সিজদা হতে মস্তক উত্তোলন করে বললেন, হে হোমায়রা! (হোমায়রা শব্দের অর্থ অধিক লাল রং। বিশ্বনবী (সাঃ) প্রিয়তমা পত্নী বিবি আয়েশাকে আদর করে কখনো কখনো এই নামে ডাকতেন।) আজকের এই রাত কোন রাত তা কি তুমি জান ? বিবি আয়েশা (রাঃ) উত্তর করলেন, আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসূলই সে সম্বন্ধে ভালো জানেন। তখন নবী পাক (সাঃ) বললেন, আয়েশা! আজ হচ্ছে শাবান মাসের ১৫ই তারিখের রাত। এই রাতে আল্লাহ পাকের দরবারে কোন কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ পাক তা কবুল করেন। আর যদি কারো পাপরাশি সুউচ্চ পাহাড় বরাবরও হয়, তবু মাফ করে দেয়া হয়।

১২। অপর এক হাদীসে আছে যে, আঁ হযরত (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- একদা হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এসে আমাকে বলে গেলেন—হে আল্লাহর হাবীব (সাঃ)! আপনি শয্যা ত্যাগ করে উঠুন এবং আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কেননা এই রাতে করুণাময় আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের জন্য একশত রহমতের দরওয়াজা, খুলে রাখেন। সুতরাং আপনি এই বুজুর্গ রাতে স্বীয় উম্মতগণের জন্য সুপারিশ করুন। কিন্তু যারা মুশরিক, যাদুকর, গণক, বখীল, সুদখোর ও জিনাকার তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন না। কারণ আল্লাহ পাক তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তিনি তাদেরকে কঠিন আজাবে নিমগ্ন করবেন।

১৩। অপর এক হাদীসে আছে, হুযুর (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, শবে বরাতের তারিখে আল্লাহর হুকুমে সত্তর লাখ ফেরেশতা আসমান হতে পৃথিবীতে আগমন করে এবং এই রাতে ইবাদতকারীদেরকে গভীরভাবে অবলোকন করতে থাকে এবং তাদের আমলনামায় সওয়াব লেখতে শুরু করে । এরূপভাবে সুদূর কাল কেয়ামত পর্যন্ত তারা শুধু কেবল নেক লেখতে থাকবে। তারপর রোজ কেয়ামতে আল্লাহ পাক তাদেরকে ডেকে বলবেন, হে ফেরেশতাগণ! তোমরা তাদের আমলনামায় নেক লেখা বন্ধ কর। আমি তাদেরকে বিনা হিসাবে বেহেশতে দাখিল করব। জেনে রাখ, তোমরা তাদের পুণ্য লেখে শেষ করতে কখনো সক্ষম হবে না। শুধু কেবল তোমরাই নও~-আসমান জমিনের সমুদয় ফেরেশতা একত্রিত হয়েও তাদের নেক লেখে শেষ করতে পারবে না।

১৪। অপর এক হাদীসে হযরত (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শবে বরাতের  রাতে আমার উপর একশত মর্তবা দরূদ শরীফ পাঠ করবে, রোজ কিয়ামতে তাকে সকলের আগে শাফায়াত করব।

১৫। হাদীস শরীফে আরো আছে, আঁ হযরত (সাঃ) বলেছেন— শবে বরাতে ইবাদত-বন্দেগী করার নিয়তে সন্ধ্যাকালে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে গোসল করবে, তার গোসলের পানির প্রতিটি বিন্দুর বিনিময়ে সাত শত রাকআত নফল নামাজের পুণ্য অজিত হবে।

১৬। হাদীস শরীফে আরো আছে, দ্বীনের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শাবান মাসের ১৫ই তারিখে দিনে আমার উপর একশত বার দরূদ পাঠ করে এবং রাতেও একশত বার দরূদ পাঠ করে তাহলে করুণাময় আল্লাহ পাক তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন এবং তার উপর দোজখের আগুন হারাম হয়ে যাবে। অপর এক বর্ণনায় তিনশত বার দরূদ পাঠ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোন কোন বর্ণনায় তিন হাজার বারও আছে।












---------

Tags: শবে বরাতের ফযিলত, শবে বরাতের ফযিলত ও আমল, শবে বরাতের আমল, শবে বরাত, শবে বরাতের নামাজ, শবে বরাতের ফজিলত, শবে বরাতের রোজা, শবে বরাতের রোজা কয়টি, শবে বরাতের, শবে বরাতের আমল ও ফজিলত, শবে বরাতের গুরুত্ব, শবে বরাতের রোজা রাখা যাবে কি, শবে বরাতের ফযিলত ও আম, শবে বরাতের ওজিফা, শবে বরাত সম্পর্কে, শবে বরাতের ফযীলত, শবে বরাতে করণীয়, শবে বরাতের নামাজ কত তারিখ, সহীহ হাদীসের আলোকে শবে বরাতের ফযিলত, শবে বরাত ২০২২! শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত, 

shobe borater amol, shab e barat, shobe borat, shabe barat, shabe barater dua, shabe barater namaz, shobe borater roja, shobe borater namaz, shobe borater namaj, shab e barat 2021, shab e barat roza, shabe barater amol, shobe borater fojilot, shab e barat namaz, sobe barater fozilot, shabe barat koto tarik, barat, shobe borat ar fojilot, sobe borat er fojilot, shobe barat, shobe borater rater amol ki, shabe barater namaj, shobe borater hadis