জামাআতে নামায পড়া ওয়াজিব যেভাবে ও তরকের মাসআলা-Jamat Namaj Tarika

জামাআতে নামায পড়া ওয়াজিব হয় যেভাবে

১। পুরুষ হওয়া। মহিলার উপর জামাআত ওয়াজিব নয়। 

২। বালেগ হওয়া । নাবালেগের উপর জামাআত ওয়াজিব নয় ।

৩। আজাদ হওয়া। ক্রীতদাসের উপর জামাআত ওয়াজিব নয় ।

৪। যাবতীয় ওজর হতে মুক্ত হওয়া। মাযূরের উপর জামাআত ওয়াজিব নয়। কিন্তু এদের জামাআতে নামায পড়া উত্তম। কারণ, জামাআতে নামায না পড়লে জামাআতের সওয়ার হতে মাহরুম থাকবে।


জামাআত তরকের মাসআলা

নামাযের জামাআত তরক করার ওজর ১৪টি।

যে সব কারণে নামাযের জামাআত তরক করা বা বাদ দেয়া বা ছেড়ে দেয়া জায়েয হয়– এর বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো:

১। গুপ্তাঙ্গ (নাভি হতে হাঁটু পর্যন্ত) ঢাকবার পরিমাণ কাপড় না থাকলে ।

২। মসজিদের পথে যদি এমন কাদা থাকে যে, চলতে কষ্ট হয় । কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তায় কাদা পানি থাকলে (নামাযের জামাআতে যাওয়া) সম্পর্কে আপনার কি মত? তদুত্তরে তিনি বললেন: জামাআত তরক করা আমার পছন্দ হয় না।

৩। মুষলধারে বৃষ্টি বা প্রচণ্ড ঝড় তুফান হতে থাকলে, যদিও এমতাবস্থায় নামাযের জামাআতে হাজির না হওয়া জায়েয আছে; কিন্তু ইমাম মোহাম্মদ (রঃ) বলেন, এমতাবস্থায় জামাআতে হাজির হওয়া উত্তম।

৪। প্রচণ্ড শীতের কারণে বাইরে বা মসজিদে গেলে যদিও প্রাণের ভয় থাকে কিংবা রোগীর রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে, তাহলে জামাআত তরক করা জায়েয আছে।

৫। মসজিদে গেলে যদি মালামাল চুরি হওয়ার আশংকা থাকে। 

৬। মসজিদের সামনে শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার আশংকা থাকলে।

৭। মসজিদে যাওয়ার পথে করদাতা (পাওনাদার) কর্তৃক উৎপীড়িত হওয়ার আশংকা থাকলে । অবশ্য পরিশোধের সামর্থ্য না থাকলে এই হুকুম । সামর্থ্য থাকা সত্তেও যদি ঋণ শোধ না করে, তবে জালিম হবে। তার জামাআত তরক করা না জায়েয ।

৮। অন্ধকার রাতে পথ দেখা না গেলে । কিন্তু আলোর ব্যবস্থা থাকলে জামাআত তরক করা জায়েয নয়।

৯। অন্ধকার রাতে প্রচণ্ড ধূলির ঝড় প্রবাহিত হলে।

১০। পীড়িত ব্যক্তির সেবায় রত ব্যক্তি জামাআতে গেলে যদি রোগী কষ্ট বা ভয় পায় তবে জামাআত তরক করতে পারে।

১১। খাওয়া তৈরি হয়েছে কিংবা হচ্ছে, আবার ক্ষুধা এত বেশি যে, খাওয়া না খেয়ে নামাযে দাঁড়ালে কিছুতেই নামাযে মন বসবে না, এমতাবস্থায় জামাআত তরক করা  জায়েয আছে।

১২। প্রসাব-পায়খানার খুব বেশি বেগ হলে ।

১৩। সফরে রওনা হওয়ার সময় হয়েছে, এখন জামাআতে নামায পড়তে গেলে দেরি হয়ে যাবে এবং কাফেলার সাথীরা চলে যাওয়ার আশংকা হলে জামাআত তরক  করা জায়েয আছে। রেলগাড়িতে ভ্রমণের মাসআলা এর সাথে তুলনা করা যায়, তবে পার্থক্য এতটুকু যে, এক কাফেলার পর অন্য কাফেলা পেতে অনেক দেরি হয়। আর  রেলগাড়ি দৈনিক কয়েক বার পাওয়া যায়, অবশ্য এতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে  জামাআত তরকে দোষ নেই। আমাদের শরীয়তে অসুবিধা ভোগ করতে বলা হয়নি। 

১৪। রোগের কারণে চলাফেরা করতে পারে না। এমন ব্যক্তি কিংবা অন্ধ, খোঁড়া বা পা কাটা লোকের জামাআত মাফ। অন্ধ ব্যক্তি যদি অনায়াসে মসজিদে  পৌঁছতে পারে, তাহলে তার জামাআত তরক করা উচিত নয়।


নামাযের রোকনগুলো  পূর্ণভাবে আদায় করার ফজীলত সম্পর্কে রাসূলে করীম (সাঃ) বলেন: ফরজ নামায নিক্তির মতো। যে পুরোপুরি মেপে দেবে, সে পুরোপুরি মেপে নেবে।

এয়াজিদ রাকাশী বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামায মাপে সমান ছিল; অর্থাৎ সবগুলো  তিনি একই মাপে আদায় করতেন।

হুর আকরাম (সাঃ) বলেন: আমার উম্মতের দু’ব্যক্তি নামাযের জন্য  দাঁড়ায় । তাদের রুকু-সেজদা একই কিন্তু নামাযে আকাশ-পাতাল পার্থক্য হয়। এ হাদীসে তিনি  খুশূ অর্থাৎ বিনয় ও একাগ্রতার প্রতি ইশারা করেছেন। 

আরো বলা হয়েছে: আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন সেই বান্দার প্রতি নজর দেবেন না, যে রুকূ ও সেজদার মধ্যে পিঠ সোজা করে না।

আরো বলা হয়েছে : যে ব্যক্তি নামাযে মুখমণ্ডল ঘুরিয়ে দেয়, সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তাআলা তার মুখকে গাধার মুখে পরিণত করে দেবেন?

আরো ইরশাদ হয়েছে: যে ব্যক্তি নামায যথাসময়ে পড়ে, তার জন্য উত্তমরূপে অযু করে রুকূ, সেজদা ও খুশূ পূর্ণরূপে আদায় করে, (অর্থাৎ মন ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থিরতা বজায় রেখে নামায পড়ে, তার নামায উজ্জ্বল হয়ে উপরে উঠে বলে: আল্লাহ তোমার হেফাজত করুন, যেমন তুমি আমার হেফাজত করেছ। অন্যদিকে যে ব্যক্তি নামায আদায় করে না, তার নামায কালো  হয়ে উপরে গমন করে বলে: আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন, যেমন তুমি আমার সর্বনাশ করেছ। এরপর যখন এই নামায আল্লাহ তাআলার অভিপ্রেত স্থানে পৌঁছে যায়, তখন তাকে কাপড়ের মতো পুটলি তৈরি করে সেই ব্যক্তির মুখের উপর ছুড়ে মারা হয়।

হুযূর পাক (সাঃ) আরো বলেছেন: সেই ব্যক্তি সর্বনিকৃষ্ট চোর, যে নামাযে চুরি করে।

হযরত ইবনে মাসউদ ও সালমান ফারসী (রাঃ) বলেন: নামায একটি ওজনের নিক্তি। যে পূর্ণ দেবে, সে পূর্ণ পাবে। আর যে কম দেবে, সে তো জানেই যে, আল্লাহ তাআলা ওজনে কমদাতাদের সম্পর্কে কী বলেছেন।






-----------------

Tags: জামাতে নামাজ পড়া কি ওয়াজিব, জামাতে নামাজ পড়া কি ফরজ, জামাতে নামাজ পড়ার নিয়ম, জামাতে নামাজ না পড়লে কি হয়, জামাআতে নামাজ পড়া, জামাতে নামাজ পড়া, জামাতে নামাজ পড়া কি, ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার নিয়ম, জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত, ৪০ দিন জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত, জামাতে নামাজ পড়ার বিধান কি, ইমামের পিছনে ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ম, জামায়াতে নামাজ পড়া কি, জামাতে নামাজ না পড়ার শাস্তি, 

jamat e iman, jamat e iman me, namaz ki dawat, dawat aur namaz, iman namaz, dawat aur namaz ki tabligh, namaz ki mahnat, jamat se namaz, namaz ba jamaat, jamat namaz rules in bangla, namaz se pawarish, ba jamat namaz, jammat namaz rules in bangla, ba jamat namaz ada na karna, namaz ba jamat ki fazeelat, jamat namaz rules, jamaat, namaz ba jamat ki ahmiyat, ba jamat namaz ka tarika in urdu, jamat namaz porar niom, jamaat namaz, jamat ke sath namaz